বীরভূমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারল না করোনা টিকা

আশিস মণ্ডল, সিউড়ি, ১৬ জানুয়ারি: টিকা নিতে সংশয়, অনীহা ধরা পড়েছে প্রথম দিনেই। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার অধীন সাতটি কেন্দ্রে যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০০ জন, সেখানে টিকা নিয়েছেন মাত্র ৪০১ জন। আর রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার ক্ষেত্রে চেহারা আরও খারাপ। পাঁচটি কেন্দ্রে যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০ জন সেখানে টিকা নিয়েছেন মাত্র ২৫৪ জন। বিশেষ করে চিকিৎসকদের মধ্যেই অনীহার চিত্র বেশি ধরা পড়েছে। যেমন সিউড়ি সদর হাসপাতালে তালিকাভূক্ত থাকা অধিকাংশ চিকিৎসকই এদিন টিকা নিতে আসেননি। আবার মল্লারপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণের শুরুতেই প্রবল আপত্তি ওঠে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীদের তরফ থেকে। টিকাকরণ শুরু হবে কি না একসময় তা নিয়েই সংশয় দেখা যায়। শেষমেশ রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারীক রবীন্দ্রনাথ প্রধানকেই নিতে হয় টিকা। নিজে টিকা নিয়ে তবেই বাকিদের রাজি করাতে পারেন টিকা গ্রহণে। তবুও মল্লারপুরেও হয়নি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ। ১০০ জনের মধ্যে টিকা নিয়েছেন মাত্র ৫২ জন। অপরদিকে টিকা গ্রহণের পর নলহাটির এক চিকিৎসক অসুস্থতা বোধ করেন।

যদিও মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারীক রবীন্দ্রনাথ প্রধান জানিয়েছেন,“নলহাটিতে টিকা নেওয়ার পর এক চিকিৎসক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য তিনি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছেন”।

রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, মেডিক্যাল কলেজে টিকা নিয়েছেন মাত্র ৪০ জন। পাইকরে ৭৩ জন, নলহাটিতে ৪৮জন। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে যথেষ্ট অনীহা দেখা গেছে টিকা গ্রহণের ব্যাপারে। যা স্পষ্ট করে দিয়েছে টিকা নিয়ে তৈরি হওয়া আশঙ্কা সংশয়ই। এটা আদতে টিকাকরণ নাকি তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা? টিকা নিয়ে তথ্য পরিসংখ্যান সঠিকভাবে প্রকাশিত না হওয়ায় এই প্রশ্ন ভর করেছে চিকিৎসাক্ষেত্রে ওয়াকিবহাল অধিকাংশের মনেই। জিজ্ঞাসা করা হলে জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা জানিয়েছেন, “প্রথম টিকা গ্রহণের জন্য যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হয়েছে, ফোন করা হয়েছে আসার জন্য। কিন্তু সবাই আসেননি। আমরা তো জোর দিতে পারি না। পাশাপাশি অনীহা তো রয়েছে। যে দ্রুততার সাথে টিকা বাজারে আনা হয়েছে তা অতীতে কোনও ক্ষেত্রে হয়নি। আরও পরীক্ষার দরকার ছিল। দরকার ছিল বিশদ নথি প্রকাশের”। এদিন সিউড়ি সদর হাসপাতালে টিকা নিতে আসা এক চিকিৎসকের (এমডি) টিকাগ্রহণের আগে সংশয়াতীত প্রশ্ন পরিস্কার করে দিয়েছেন খোদ চিকিৎসকরাই ওয়াকিবহাল নন টিকার ব্যাপারে। সেই চিকিৎসক এক স্বাস্থ্যকর্তার কাছে বলেন, “টিকা নিলে দৈনন্দিন অভ্যাস কি কিছু পাল্টাতে হবে ? টিকা নেওয়ার পর কি কি অসুবিধা হতে পারে ? প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজটি ২৮ দিনের মাথায় নিতে বলা হয়েছে, সেক্ষেত্রে যদি নির্ধারিত দিনে আমার সময় না হয় তাহলে কি হবে? ’’ স্বাভাবিক প্রশ্ন। কিন্তু এক বরিষ্ঠ চিকিৎসকের গলায় যা বেমানান লেগেছে। চিকিৎসকেরই যদি এই সংশয় থাকে তাহলে সাধারণের কি হবে ? স্বাভাবিকভাবেই উঠেছে প্রশ্ন।

বীরভূম স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারীক হীমাদ্রি আড়ি জানিয়েছেন, “সাতটি কেন্দ্রের মধ্যে দুটিতে একশোজনেরও বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। ভালোভাবেই হয়েছে প্রথমদিনের কর্মসূচি। কিন্তু দুটিতে একশোজনের বেশি নেওয়ার পর বাকি পাঁচটি হাল যে খারাপই তা জানান দিয়েছে ৭০০ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৪০১ জনের টিকা নেওয়া”।

আপনাদের মতামত জানান

Please enter your comment!
Please enter your name here