দোলের মত জনসমাগমেও ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস, এড়ানোর পরামর্শ স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ৪ মার্চ: দোল-হোলির বসন্ত উৎসবে সবচেয়ে বেশি আনন্দে মেতে ওঠে সাধারণ মানুষ। সম্ভাবনা তৈরি হয় একে অপরের সংস্পর্শে আসারও। আর করোনার মত মারণ ভাইরাস নিজের প্রভাব বিস্তার করতে পারে এই জনসমাগমেই। তাই প্রয়োজনে দোল এড়াতে বা একেবারে পরিবারের লোকজন বা নিকটবর্তী বন্ধুবান্ধবের সঙ্গেই দোল খেলার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।

কেন এই মারণ ভাইরাসের ভয়ে জন সমাগম এড়িয়ে চলা উচিত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর কতটা কাছে যাওয়া হচ্ছে, তার উপরে নির্ভর করে ভাইরাস ছড়াবে কি না। করোনার সংক্রমণ পজিটিভ এমন রোগীর মুখের খুব কাছে গেলে, বা তার চোখ-মুখ স্পর্শ করলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়। কোনওভাবে যদি রোগীর থুতু বা লালা শরীরে প্রবেশ করে তাহলে এর প্রভাব হতে পারে মারাত্মক। সুতরাং, অচেনা কাউকে আবেগের বশে চুমু খাওয়া বা যৌন সংসর্গ লিপ্ত হওয়ার আগে সতর্ক থাকা দরকার। নতুবা তা প্রাণঘাতী হতে পারে।

ইতিমধ্যে কলকাতা বিমানবন্দর সহ দেশের সমস্ত বিমানবন্দরে চিন ফেরত সমস্ত যাত্রীদের রীতিমত স্ক্যানিং করে তবেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানিয়েছেন, দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬ জন, যার মধ্যে ভারতীয় ২১ জন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক অংশুমান চট্টোপাধ্যায় বলছেন, এই ভাইরাসের আকার মানুষের চুলের ৯০০ ভাগের একভাগ মাত্র। এই ভাইরাস নিজে থেকে চলাফেরাও করতে পারে না। মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে হলে এর একমাত্র পথ কোনও কিছুর মাধ্যমে বাহিত হয়ে যাওয়া। সেটা শ্বাস-প্রশ্বাস হতে পারে, অথবা থুতু-লালার মধ্যে করে এটি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে, একেই বলা হচ্ছে ‘ভাইরাল ড্রপলেট’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারও সঙ্গে হাত মেলালেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। হয়ত সেই রোগী মুখে, নাকে হাত দিয়েছেন, তারপরে সেই হাত মিলিয়েছেন অন্য কারও সঙ্গে। তাহলেও ভাইরাল ড্রপলেট ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর ধারেকাছে গেলে খুব ভাল করে হাত-মুখ ধুয়ে নেওয়া উচিত। আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে একসঙ্গে বসে খাওয়াও মারাত্মক।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট পরাশর মাইতি বলছেন, আক্রান্ত রোগীর ফেলে যাওয়া খাবারের গন্ধ শুঁকলেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। কারণ শ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে শরীরে। কে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত বা নিজের শরীরে গোপনে করোনা ভাইরাস বয়ে বেড়াচ্ছে, সেটা অপরজনের পক্ষে কখনো জানা সম্ভব নয়। তাই সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বসন্ত উৎসবের মতো মিলন উৎসবে সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত অথবা প্রয়োজনে এড়িয়ে যাওয়া উচিত, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *