জনতা কারফিউয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ছিল শুনশান

আমাদের ভারত, ঝাড়গ্রাম, ২২ মার্চ: রবিবার জনতা কারফিউতে কার্যত শুনশান চেহারা জঙ্গলমহলের সর্বত্রই। ঝাড়গাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলপাহাড়ি, নয়াগ্রাম, লালগড়, সাঁকরাইল দাঁতন নারায়ণগড়, খড়গপুর, দাসপুর, গড়বেতা সহ সর্বত্র ছিল একেবারে শুনশান অবস্থা। সরকারি-বেসরকারি যানবাহন, দোকান বাজার সবকিছুই প্রায় বন্ধ ছিল। রাস্তায় সাধারণ মানুষের আনাগোনা একেবারেই ছিল না। শহর, শহরতলি এবং গ্রামাঞ্চল সব জায়গাতেই একই চিত্র ধরা পড়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া এদিন কেউই  ঘরের বাইরে পা রাখেননি।

নিতান্ত প্রয়োজনে বাইরে আসা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একদিনের জন্য নয়, তারা চাইছেন এই জনতা কারফিউ আরো ৭ দিন করা হোক। যাতে  মহামারীর আকার নেওয়া করোনা ভাইরাস থেকে সাধারণ মানুষ প্রাণে বাঁচেন।

রবিবার পুনে থেকে আসা ৪ যুবক  নিজেদের শারীরিক পরিক্ষা করতে ঝাড়গ্রাম জেলাহাসপাতালে আসে। শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে তারপর তারা বাড়ি যাবে বলে জানিয়েছে। ঝাড়খন্ড থেকে বাংলা সীমান্ত দিয়ে মেদিনীপুর, কলকাতা, খড়গপুর, ঝাড়গ্রাম প্রভৃতি জায়গায় যাতায়াতকারী বাস গুলিকে শনিবার রাত থেকে চিঁচিড়া গেট থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল থেকে শনিবার রাতে  কোরোনা সন্দেহভাজন এক যুবক পালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বেলপাহাড়ি ব্লকের সন্দাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রামানুজ দত্ত উত্তর প্রদেশে কাজ করতেন। কয়েকদিন আগে বেলপাহাড়ি ফেরার পর থেকেই জ্বর, সর্দি,কাশি সহ বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়।  তাকে হাসপাতালে যেতে বলা হলে  সে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে যায় এবং সেখান থেকে উধাও হয়ে যান। রাতেই ঝাড়গ্রাম থানায় মিসিং ডাইরি করা হয়। পুলিশ তার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। শনিবার বেলপাহাড়ি বাজারে ছোট ছোট বাচ্চারা প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল করে সতর্কতামূলক প্রচার করে এবং জনতা কারফিউ মেনে চলার আবেদন জানায়।

মহামারি নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে শনিবার সন্ধ্যায় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ চন্দ্রকোনা রোডে এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করে। পাঁচজন পুরোহিতের উপস্থিতিতে ৫০ কেজি ঘি পুড়িয়ে হোমযজ্ঞ করা হয়। মেদিনীপুর জেলা শহরে জনতা কারফিউ’য়ের ভালো প্রভাব পড়েছে। সকাল থেকেই মেদিনীপুর শহরের রাস্তাঘাট ছিল একেবারে ফাঁকা। বন্ধ সমস্ত দোকানপাট। হাতে গোনা দুই একটি সরকারি বাস চললেও যাত্রী ছিল না। মেদিনীপুর স্টেশন থেকে আজ ১০ জোড়া আপ ও ডাউন লোকাল ট্রেন চালানো হয়েছে, তবে ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা ছিল একেবারেই নগণ্য। মুম্বাই থেকে বেশ কিছু লোক কোনো রকমে মেদিনীপুর স্টেশনে এসে আটকা পড়েছে। পুরুলিয়া যাওয়ার ট্রেন বাতিল হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ডে এবং স্টেশনে ভিনরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এই যাত্রীরা কর্মসূত্রে চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, মুম্বাই সহ বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন। পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের মেডিকেল টিম এদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *