স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত , নদীয়া,২৩ জুন:
পূর্ব রেলের শিয়ালদা গেদে মেইন লাইনে ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী স্টেশন বানপুর। স্টেশন থেকে দু কিলোমিটার দূরে ইতিহাস প্রসিদ্ধ গ্রাম মাটিয়ারী। গ্রামটি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদারের বাসস্থান এবং এখানকার একমাত্র উল্লেখযোগ্য নিদর্শন পীরসাহেবের দরগার জন্য প্রসিদ্ধ। স্থানীয় জনগণের কাছে বাবা বুড়ো সাহেবের দরগা নামে পরিচিত।
যতদূর জানা যায়, পীরসাহেব ভবানন্দের সময়কালে ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে মাটিয়ারীতে আসেন। তিনি সিদ্ধপীর ছিলেন বলে জনশ্রুতি। পারস্যের ইস্পাহান শহর থেকে এখানে আসেন তিনি। তাঁকে সদানন্দ ‘ফকিরের বাদশা’ উপাধিতে ভূষিত করেন এবং তাঁর অলৌকিক গুণে ও জনহিতকর কাজে মুগ্ধ হয়ে এখানে থেকে যেতে অনুরোধ করেন। তিনি যে তারিখে এখানে পদার্পণ করেন এবং যে তারিখে ইহলোক ত্যাগ করেন সেই তারিখটি ছিল গতকাল অম্বুবাচী শুরুর দিন ৭ আষাঢ়। তাঁর সমাধির উপর নির্মিত দরগাকে কেন্দ্র করে মৃত্যু পরবর্তী সময় থেকে এখানে মেলা বসে।
বুড়ো সাহেবের দরগা হল সর্ব ধর্মের সম্প্রীতির পীঠস্থান। বিশেষ করে মেলার প্রথম দিন থেকে এখানে হিন্দু মুসলমান ধর্মের মানুষ সমবেত হন। ফকির দরবেশ এবং ভক্তের মহাসমাবেশে দরগা নতুন রূপে সেজে ওঠে। বাবা বুড়ো সাহেবকে নিয়ে নানান অবাক করা কাহিনী ছড়িয়ে আছে।মানুষের কাছে ভরসা এবং নির্ভরতার প্রতীক পরম আশ্রয় স্থল। এখনও মেলা সাত দিন ধরে চলে। বাংলাদেশ সহ এপারের দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ সমাবেত হয়। বাংলাদেশের ঝিনাইদহ থেকে ধারাবাহিকভাবে বুড়ো সাহেবের দরগায় দোয়া নিতে আসেন অনেকে। বর্তমানে ঝিনাইদহে তিনবারের এমপি আব্দুল হাই এবং আরও উল্লেখযোগ্য মানুষ এখানে আসেন।
দুর্ভাগ্য এবারে করোনার আক্রমণে অম্বুবাচী মেলা বন্ধ। দরগায় স্থানীয় কিছু ভক্তরা এসেছেন। সমগ্র পরিবেশ প্রতিকূল। অনেকেরই কন্ঠে আক্ষেপ ঝরে পড়ছে। তবুও মানুষ আশায় বুক বাঁধছেন সামনের বছরে নিশ্চয়ই পরিস্থিতি অনুকূল হবে।