১৭ই শ্রাবণ ঘুটিয়ারিশরীফে গাজি সাহেবের মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত

আমাদের ভারত, ঘুটিয়ারিশরীফ, ৩১ জুলাই: করোনা সংক্রমণের জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই বন্ধ রাখা হয়েছে ঘুটিয়ারিশরীফের অন্যতম ধর্মীয় স্থান বাবা হজরত সৈয়দ মোবারক গাজি বা গাজি বাবার মাজার। এবার ১৭ই শ্রাবণ গাজি বাবার উরস উপলক্ষ্যে আয়োজিত মেলা বন্ধেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হল মাজার কমিটির পক্ষ থেকে।

প্রতিবছর ১৭ই শ্রাবণ গাজি বাবার মাজার ও লাগোয়া এলাকায় মেলা বসে। শুধু এ রাজ্য নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই বহু মানুষজন আসেন সেই মেলায়। ১৭ই শ্রাবণ বাবার সমাধিতে চাদর চড়িয়ে গাজি বাবার মক্কা পুকুরে শিরনি ভাসালে মনস্কামনা পূরণ হয় বলে কথিত আছে। আর সেই উপলক্ষ্যেই প্রতিবছর এই বিশেষ দিনটিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় এই ঘুটিয়ারিশরিফে।

কথিত আছে কয়েকশো বছর আগে যখন এই এলাকা বন জঙ্গলে ভর্তি ছিল। সেই সময় থেকেই এই এলাকায় বসবাস শুরু করেন গাজি বাবা। এখানেই তিনি ধ্যান, তপস্যা ও আল্লার আরাধনা করতেন। আশপাশে যে কটি গ্রাম ছিল, সেইসব গ্রামের মানুষজন তাঁকে বড়ই শ্রদ্ধা করতেন। মানুষের বিপদ আপদ কানে শুনলেই সেখানে গিয়ে সমাধানের পথ বাতলে দিতেন গাজি বাবা। একবছর এলাকায় প্রবল খরা দেখা দেয়। বৃষ্টির অভাবে চাষবাস বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এলাকায়। গ্রামের মানুষজন গাজি বাবার শরণাপন্ন হন। বৃষ্টি আনার জন্য নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ধ্যানে বসেন তিনি। কাউকেই দরজা খুলতে বারণ করেন। কয়েকদিনের মধ্যেই এলাকায় বৃষ্টি নামে। মানুষজন খুশিতে মেতে ওঠেন। কিন্তু তবুও দরজা খুলে ঘর থেকে বের হন না গাজি বাবা। এলাকার মানুষ কৌতূহলবশত ঘরের দরজা খুলে ধ্যানরত অবস্থায় বসে থাকা বাবাকে স্পর্শ করেন। তাঁকে ছুঁয়ে দেওয়ার কারণে তখনই তাঁর মৃত্যু ঘটে বলে দৈব্যবাণী হয় সেই সময়। দিনটি ছিল ৭ই আষাঢ়। ঐদিনকেই গাজি বাবার মৃত্যু দিন বলে ধরা হয়। আর সেদিন থেকে ৪১ দিন পর ১৭ই শ্রাবণকে বাবার উরস উপলক্ষ্যে মেলা বসে এলাকায়।

এই ১৭ই শ্রাবণ মাজার এলাকায় বিভিন্ন ধরণের ইসলামিক গজল, কাওয়ালী, সুফি, তারানা গানের আসর বসে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পীর, ফকিররা যেমন আসেন তেমনি সাধারণ মানুষজনও আসেন। গাজি বাবার সমাধিতে চাদর চড়িয়ে মক্কা পুকুরে শিরনি ভাসান তাঁরা। তবে এবার এ সবকিছুই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রুখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মাজার কমিটির সদস্য তথা গাজি বাবার মাজারের কেয়ারটেকার সিরাজউদ্দিন দেওয়ান। তিনি বলেন, “যেভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তাতে আমরা ভীষণ আতঙ্কিত। ১৭ই শ্রাবণের মেলায় বিভিন্ন জায়গা থেকে লাখ লাখ মানুষ এই মেলায় আসেন। ফলে এখান থেকে সংক্রমণের ভয় রয়েছে। সেই কারণেই এবার মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” শুধু ১৭ই শ্রাবণ নয়, সারা বছরই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিন্দু, মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন এই মাজারে আসেন। দক্ষিন ২৪ পরগণা জেলার অন্যতম ধর্মীয় স্থান হিসেবে এটি পরিচিত।    

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *