দেশের মাটি’র গুরু পূর্ণিমা পালন

মিলন খামারিয়া
আমাদের ভারত, কলকাতা, ২৪ শে জুলাই:
‘অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মিলিতং যেন তস্ময়ে শ্রীগুরুবে নমঃ।। অর্থাৎ অজ্ঞানতা রূপ অন্ধকারে যিনি জ্ঞানচক্ষুর উন্মেষ ঘটিয়ে দেন সেই গুরুকে প্রণাম।

প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা ছিল গুরুমুখী, যার কেন্দ্রাচার ছিল আষাঢ়ী গুরুপূর্ণিমা উদযাপন। মূলত কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন ব্যাসদেবের জন্মদিনকে হিন্দুরা ‘গুরু পূর্ণিমা’ হিসেবে পালন করে থাকে। তিনি পরাশর ও মৎস্যগন্ধার পুত্র। তাঁর জন্ম হয়েছিল যমুনা নদীর দ্বীপের মাঝে। তাই তাঁর নাম হয় দ্বৈপায়ন। তার গায়ের রঙ কালো ছিল, তাই কৃষ্ণ নাম হল।আর বেদ-এর বিভাগ করেছিলেন তিনি, এই কারণে বেদব্যাস বা ব্যাস নামে পরিচিত হন। মহাভারত ও অষ্টাদশ পুরাণের রচয়িতা, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, সেই ব্যাসদেবের জন্মদিন পালন করলো ‘দেশের মাটি’।

মহর্ষি গৌতম মুনির অভিশাপে জগৎ থেকে বেদের জ্ঞান লুপ্ত হলে ক্রিয়াকান্ড বন্ধ হয়ে যায়। তখন দেবগণ ক্ষীরসমুদ্রে গিয়ে ভগবান বিষ্ণুর স্তুতিমুখে বেদবাণী উদ্ধারের প্রার্থনা করলে ভগবান আকাশবাণী দ্বারা আস্বস্ত করলেন, “আমি অতিশীঘ্র জগতে আবির্ভূত হয়ে তোমাদের বাসনা পূর্ণ করব।” নিজের কথা রাখতেই তিনি সত্যবতীর গর্ভে জন্ম নেন আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে। ভগবান বিষ্ণুর ব্যাস রূপে জন্মগ্রহণের এই কারণ তুলে ধরেন শ্রীতমা পাল।

আজকের অনুষ্ঠানের গুরুত্ব সম্পর্কে সহকারী অধ্যাপক(ড.) কল্যাণ জানা জানান, “ভারতের গুরু-শিষ্য পরম্পরা আজ নষ্ট হতে বসেছে। আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতি চর্চার মধ্যে দিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। গুরু’ই শিষ্য’কে সত্য ও সঠিক পথ দেখান, এই বিশ্বাস শিষ্যের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে। সেখানেই গুরু-পূর্ণিমা পালনের তাৎপর্য।”

এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী তরুণ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গীত শেষে গুরু পূর্ণিমা’র গুরুত্ব উপলব্ধি করান শিক্ষক পিন্টু সান্যাল ও মানস হাজরা। অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন – শীর্ষ আচার্য, পিংকি ঘোষ, মানস হাজরা, শুভদীপ মুখার্জি, চিকুর রায় ও আরও অনেকে। সমাপ্তি সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাগতা চ্যাটার্জি।

ভারতের অতীত ঐতিহ্য ফিরে আসুক গুরু’র স্মরণে। গুরুর দেখানো পথেই শিষ্যরা অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসুক। দেশের মাটি’র উদ্দেশ্য সফল হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *