
অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ২৮ ফেব্রুয়ারি: পিতৃদত্তর নাম আসরার হাসান খান। সুরের জগতে তিনি মজরু সুলতানপুরী নামে বেশি পরিচিত। ২৪ মে, ২০০০ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৮০ বছর বয়সে মারা যান।
কাইফি আজমি ভারতের উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে এক জমিদার পরিবারে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শওকাত আজমিকে বিয়ে করেন। তার কন্যা শাবানা আজমি ভারতের বিখ্যাত অভিনেত্রী। তিনি ছাত্র জীবনে উর্দু ও ফার্সি সাহিত্যে লেখাপড়া করেন।
আখতার হুসাইন (১৯০০-১৯৭২) ছিলেন ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পী। তিনি ভারত ও পাকিস্তানের পাতিয়ালার ঘরানা নামে শাস্ত্রীয় সংগীতের সাথে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
সাবির লুধিয়ানি থেকে বেগম আখতার— ভারতে উর্দুভাষী বিখ্যাতদের নাম তালিকা অতি দীর্ঘ। উর্দু ভাষাবিশারদদের মতে, বেশ কয়েক শতক আগে ভারতেই উর্দু ভাষার উদ্ভব হয়। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক আলি আব্বাস বলেন উর্দুর উদ্ভব যে ভারতে তার প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। কবিতার চেহারায় ‘গজল’-এর আবির্ভাব ঘটেছিল পারস্যে, খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে। পারস্যে সৃষ্টি হলেও ভারতীয় গজল-এর এক নিজস্ব চরিত্র নির্মিত হয়েছে, যার শিকড় রয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতিতে। ‘গজল’ প্রকৃত অর্থে উর্দুতে লেখা কবিতা, আর তা শিবিরের ভাষা হিসেবে উর্দুর জন্ম হয়েছিল এই ভারতেই।
মঙ্গলবার কলকাতায় উর্দুর নানা কথা উঠে এল এই ভাষার বিশারদদের এক সম্মেলনে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ভাষাবিদ ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেন প্রায় ৯১ বছর আগে কাজী নজরুলের সৃষ্ট বাংলা এবং উর্দুর এক অবিস্মরণীয় মিশেল। “আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন দিল ওহি মেরা ফঁস গয়ি। বিনোদ বেণির জরিন ফিতায় আন্ধা এশ্ক্ মেরা কস গয়ি॥”
ডঃ সোমা জানান, এক লাইন কবি নজরুল বাংলায় লিখেছিলেন তো আর এক লাইন উর্দুতে। মঙ্গলবার কলকাতায় এই আলোচনায় বিষয় ছিল ‘সাম্প্রতিককালে উর্দু সাহিত্যের মান এবং এর সৃজনশীল অভিমুখ। উদ্যোক্তা সাহিত্য আকাদেমী ও
সুরেন্দ্রনাথ কলেজ।
এদিন আলোচনায় উদ্বোধনী ভাষণে দুটি কলেজের উপাচার্য সোমা বলেন, “আমার বাবা ছিলেন সেনা অফিসার। কর্মসূত্রে কাশ্মীরে ছিলেন। তখন সেখানে বাগানে প্রকৃতির কোলে বসে যখন উর্দু ভাষার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় আমি দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ি। বাবা যেখানে বদলি হয়েছেন স্থানীয় মাধ্যমের স্কুলে আমাকে পড়িয়েছেন। এ কারণে আরও কিছু ভাষা শেখার অবকাশ হয়েছে। প্রতিটির চর্চা চালিয়ে গিয়েছি। উর্দু তো রীতিমত ভালবেসে পড়ি। সাহিত্য আকাদেমীর বিভিন্ন অনুবাদকর্মেও এতে বাড়তি সুবিধা পেয়েছি।“
স্বাধীনতা-পূর্ব আমল থেকে মির্জা গালিব, আমির খুসরু, মহম্মদ ইকবাল, আলতাফ হোসেন, খাজা আহম্মদ আব্বাস, শিবলি নোমালি, মুন্সি প্রেমচাঁদ— এঁদের লেখনির জোরে কীভাবে উর্দু অমরত্বের আসন পেয়েছে, সংক্ষেপে তা বর্ননা করেন ডঃ সোমা। নামোল্লেখ করে বলেন, কিছু হিন্দু সাহিত্যসেবীও উর্দুচর্চা করে ভাষাটাকে পুষ্ট করেছেন। কেবল উর্দু সাহিত্য নয়, উর্দু সংবাদজগতকেও বিকশিত করতে সহায়তা করেছে বাংলা। কীভাবে, তারও কিছু উদাহরণ দেন।
ডঃ সোমা বলেন, গজলের মাধ্যমে দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে উর্দু। বেগম আখতার থেকে চিত্রা সিং— তালিকা দীর্ঘ। এই প্রসঙ্গে উর্দু সাহিত্যে মহিলা চেতনার ওপরেও আলোকপাত করেন ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আলোচনায় প্রারম্ভিক ভাষণে সাহিত্য অ্যাকাদেমীর সচিবকে শ্রীনিবাসন যুগান্তরের সাথে কীভাবে, কতটা বদলেছে উর্দু— তার ওপর আলোকপাত করেন। ছুঁয়ে যান উর্দুতে ইওরোপীয় সাহিত্যের অনুবাদ, খিলাফৎ আন্দোলনের সময় জাফর আলি খান, আবুল কালাম আজাদের উর্দু লেখনি, সাহির লুধিয়ানি, কায়েফি আজমী, মজরু সুলতানপুরীর অমর কীর্তির কথা।
এদিন অনুষ্ঠানে অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন উর্দু ও কাশ্মিরী শিক্ষাবিদ মহম্মদ জামান আজুরদা, বিশিষ্ট উর্দু সমালোচক শফি কিদোয়াই, উর্দু কবি শিন কাফ নিজাম, সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ জাফর আলি খান, ওই কলেজের উর্দু বিভাগের প্রধান ডঃ নুসরৎ জাহান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, প্রায় পাঁচ দশক আগে পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই আন্দোলনের সমর্থক
ছিলেন কলকাতার উর্দুভাষী কবি ও সাংবাদিক সালিক লখেনৗভি। বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন তিনি। তাঁর একটি স্বরচিত কবিতাও পাঠ করেন সমাবেশে। কবিতাটির শিরোনাম: ‘জাগ্ উঠা বাংলাদেশ’ (‘বাংলাদেশ জেগে উঠেছে’)। উর্দুতে কবিতার শুরুটা ছিল এ রকম:
জুলুম কে হাত মে আজ হ্যায় রাইফেল,
আজ মজলুম সিনে সিপার বান্ গায়ে।
হর্ সুহাগান কি আঁখো সে সোলে রাওয়া,
আজ বইনু কে আঁচল সে পরসম বানে
জুলুম সে জঙ্গি করলে বহে নওজোয়ান।
বাংলায় কবিতাটির অনুবাদ এ রকম:
অত্যাচারীর হাতে আজ আছে রাইফেল,
আজ নিপীড়িতের বক্ষ হয়ে গেছে ঢাল।
আজ প্রেয়সীদের চোখে ঝরছে আগুন শিখা।
আজ বোনদের শাড়ির আঁচল হয়ে গেছে পতাকা।
অত্যাচারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেছে যুবকেরা।
জেগে উঠেছে বাংলাদেশ।‘দিল ওহি মেরা ফঁস গয়ি’— উর্দু নিয়ে আলোচনাসভা
অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ২৮ ফেব্রুয়ারি: পিতৃদত্তর নাম আসরার হাসান খান। সুরের জগতে তিনি মজরু সুলতানপুরী নামে বেশি পরিচিত। ২৪ মে, ২০০০ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৮০ বছর বয়সে মারা যান।
কাইফি আজমি ভারতের উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে এক জমিদার পরিবারে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শওকাত আজমিকে বিয়ে করেন। তার কন্যা শাবানা আজমি ভারতের বিখ্যাত অভিনেত্রী। তিনি ছাত্র জীবনে উর্দু ও ফার্সি সাহিত্যে লেখাপড়া করেন।
আখতার হুসাইন (১৯০০-১৯৭২) ছিলেন ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পী। তিনি ভারত ও পাকিস্তানের
পাতিয়ালার ঘরানা নামে শাস্ত্রীয় সংগীতের সাথে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
সাবির লুধিয়ানি থেকে বেগম আখতার— ভারতে উর্দুভাষী বিখ্যাতদের নাম তালিকা অতি দীর্ঘ। উর্দু ভাষাবিশারদদের মতে, বেশ কয়েক শতক আগে ভারতেই উর্দু ভাষার উদ্ভব হয়। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক আলি আব্বাস বলেন উর্দুর উদ্ভব যে ভারতে তার প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। কবিতার চেহারায় ‘গজল’-এর আবির্ভাব ঘটেছিল পারস্যে, খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে। পারস্যে সৃষ্টি হলেও ভারতীয় গজল-এর এক নিজস্ব চরিত্র নির্মিত হয়েছে, যার শিকড় রয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতিতে। ‘গজল’ প্রকৃত অর্থে উর্দুতে লেখা কবিতা, আর তা শিবিরের ভাষা হিসেবে উর্দুর জন্ম হয়েছিল এই ভারতেই।
মঙ্গলবার কলকাতায় উর্দুর নানা কথা উঠে এল এই ভাষার বিশারদদের এক সম্মেলনে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ভাষাবিদ ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেন প্রায় ৯১ বছর আগে কাজী নজরুলের সৃষ্ট বাংলা এবং উর্দুর এক অবিস্মরণীয় মিশেল। “আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন দিল ওহি মেরা ফঁস গয়ি। বিনোদ বেণির জরিন ফিতায় আন্ধা এশ্ক্ মেরা কস গয়ি॥”
ডঃ সোমা জানান, এক লাইন কবি নজরুল বাংলায় লিখেছিলেন তো আর এক লাইন উর্দুতে। মঙ্গলবার কলকাতায় এই আলোচনায় বিষয় ছিল ‘সাম্প্রতিককালে উর্দু সাহিত্যের মান এবং এর সৃজনশীল অভিমুখ। উদ্যোক্তা সাহিত্য আকাদেমী ও
সুরেন্দ্রনাথ কলেজ।
এদিন আলোচনায় উদ্বোধনী ভাষণে দুটি কলেজের উপাচার্য সোমা বলেন, “আমার বাবা ছিলেন সেনা অফিসার। কর্মসূত্রে কাশ্মীরে ছিলেন। তখন সেখানে বাগানে প্রকৃতির কোলে বসে যখন উর্দু ভাষার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় আমি দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ি। বাবা যেখানে বদলি হয়েছেন স্থানীয় মাধ্যমের স্কুলে আমাকে পড়িয়েছেন। এ কারণে আরও কিছু ভাষা শেখার অবকাশ হয়েছে। প্রতিটির চর্চা চালিয়ে গিয়েছি। উর্দু তো রীতিমত ভালবেসে পড়ি। সাহিত্য আকাদেমীর বিভিন্ন অনুবাদকর্মেও এতে বাড়তি সুবিধা পেয়েছি।“
স্বাধীনতা-পূর্ব আমল থেকে মির্জা গালিব, আমির খুসরু, মহম্মদ ইকবাল, আলতাফ হোসেন, খাজা আহম্মদ আব্বাস, শিবলি নোমালি, মুন্সি প্রেমচাঁদ— এঁদের লেখনির জোরে কীভাবে উর্দু অমরত্বের আসন পেয়েছে, সংক্ষেপে তা বর্ননা করেন ডঃ সোমা। নামোল্লেখ করে বলেন, কিছু হিন্দু সাহিত্যসেবীও উর্দুচর্চা করে ভাষাটাকে পুষ্ট করেছেন। কেবল উর্দু সাহিত্য নয়, উর্দু সংবাদজগতকেও বিকশিত করতে সহায়তা করেছে বাংলা। কীভাবে, তারও কিছু উদাহরণ দেন।
ডঃ সোমা বলেন, গজলের মাধ্যমে দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে উর্দু। বেগম আখতার থেকে চিত্রা সিং— তালিকা দীর্ঘ। এই প্রসঙ্গে উর্দু সাহিত্যে মহিলা চেতনার ওপরেও আলোকপাত করেন ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আলোচনায় প্রারম্ভিক ভাষণে সাহিত্য অ্যাকাদেমীর সচিবকে শ্রীনিবাসন যুগান্তরের সাথে কীভাবে, কতটা বদলেছে উর্দু— তার ওপর আলোকপাত করেন। ছুঁয়ে যান উর্দুতে ইওরোপীয় সাহিত্যের অনুবাদ, খিলাফৎ আন্দোলনের সময় জাফর আলি খান, আবুল কালাম আজাদের উর্দু লেখনি, সাহির লুধিয়ানি, কায়েফি আজমী, মজরু সুলতানপুরীর অমর কীর্তির কথা।
এদিন অনুষ্ঠানে অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন উর্দু ও কাশ্মিরী শিক্ষাবিদ মহম্মদ জামান আজুরদা, বিশিষ্ট উর্দু সমালোচক শফি কিদোয়াই, উর্দু কবি শিন কাফ নিজাম, সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ জাফর আলি খান, ওই কলেজের উর্দু বিভাগের প্রধান ডঃ নুসরৎ জাহান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, প্রায় পাঁচ দশক আগে পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই আন্দোলনের সমর্থক
ছিলেন কলকাতার উর্দুভাষী কবি ও সাংবাদিক সালিক লখেনৗভি। বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন তিনি। তাঁর একটি স্বরচিত কবিতাও পাঠ করেন সমাবেশে। কবিতাটির শিরোনাম: ‘জাগ্ উঠা বাংলাদেশ’ (‘বাংলাদেশ জেগে উঠেছে’)। উর্দুতে কবিতার শুরুটা ছিল এ রকম:
জুলুম কে হাত মে আজ হ্যায় রাইফেল,
আজ মজলুম সিনে সিপার বান্ গায়ে।
হর্ সুহাগান কি আঁখো সে সোলে রাওয়া,
আজ বইনু কে আঁচল সে পরসম বানে
জুলুম সে জঙ্গি করলে বহে নওজোয়ান।
বাংলায় কবিতাটির অনুবাদ এ রকম:
অত্যাচারীর হাতে আজ আছে রাইফেল,
আজ নিপীড়িতের বক্ষ হয়ে গেছে ঢাল।
আজ প্রেয়সীদের চোখে ঝরছে আগুন শিখা।
আজ বোনদের শাড়ির আঁচল হয়ে গেছে পতাকা।
অত্যাচারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেছে যুবকেরা।
জেগে উঠেছে বাংলাদেশ।