আমাদের ভারত, নন্দীগ্রাম, ১৮ জানুয়ারি: নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় শুভেন্দুবাবু মানুষ ছিলেন। আজ ক্ষমতায় গিয়ে বন মানুষ হয়ে গেছেন। এই নন্দীগ্রামে ঢুকতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাধা দিয়েছিল সিপিএম। আজ বিজেপিকে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল। রাজ্য রাজনীতির মোড় ঘোরানো নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে এই ভাষাতেই তৃণমূল কংগ্রেস ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কান্ডারী শুভেন্দু অধিকারীকে চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
সিএএ’র সমর্থনে আজ অভিনন্দন যাত্রা ছিল নন্দীগ্রামের টেঙ্গুয়া থেকে জানকিনাথ মন্দির পর্যন্ত। সেখানে যাওয়ার পথে নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়াতে দিলীপ ঘোষের গাড়ি আটকায় পুলিশ। তারপরই নিজের বক্তব্যে তৃণমূল কংগ্রেসকে ঝাঁঝালো আক্রমণ শুরু করেন তিনি। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, সেদিন আমরা আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলাম নন্দীগ্রামের মানুষের অধিকারের জন্য ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা ভুল করেছিলাম মমতা ব্যানার্জিকে সামনে রেখে। আমরা ভেবেছিলাম, স্বৈরাচারী শাসন সমাপ্ত হবে, এখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই উনাকে সমর্থন করেছিলাম। আজ প্রমাণ হল উনি তার যোগ্য ছিলেন না। এরপরই আক্রমণ করেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কান্ডারী শুভেন্দু অধিকারীকে। বিজেপির পুননির্বাচিত রাজ্য সভাপতি বলেন, সেদিন আপনাদের আটকাতে যে পুলিশ ব্যবহার করেছিল সিপিএম আজ সেই পুলিশকে আপনি ব্যবহার করছেন বিজেপিকে আটকাতে। সেদিন শুভেন্দু বাবু মানুষ ছিলেন। আজ ক্ষমতায় গিয়ে বন মানুষ হয়ে গেছেন। সেদিন আপনাদের পেছনে বিজেপি ছিল। ইঁদুরকে কিভাবে বাঘ বানাতে হয়, আর বাঘকে কিভাবে ইঁদুর বানাতে হয় আমরা জানি।
পুলিশের ব্যারিকেড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ব্যারিকেড ভাঙ্গতে আসিনি। সরকার ভাঙতে এসেছি। নন্দীগ্রামে মিছিল করতে না দিলে বাংলায় পরিবর্তন হবে না এমন ভাবার কারণ নেই। এইখানেই মমতা ব্যানার্জিকে আটকেছিল সিপিএম। তারপর সেই সিপিএমের বিদায় হয়েছিল। আজ সেখানেই আমাকে আটকেছে তৃণমূল। বিজেপিকে আটকাচ্ছে তৃণমূল। এই তৃণমূলের বিসর্জন হবে। ১২ বছর পর ইতিহাস সেই একই জায়গায় ফিরে এসেছে। এই নন্দীগ্রাম থেকে ইতিহাস পাল্টেছিল। টিএমসি’র ভবিতব্য লেখা হয়ে গেছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। কেউ আটকাতে পারবে না। ভবিষ্যতে আবারও নন্দীগ্রাম আসার কথা ঘোষণা করে মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ হুঁশিয়ারি দেন, সেদিন জ্যান্ত যাই আর মৃতদেহ যাক। আমি যাবো।
রাজ্য রাজনীতির মোড় ঘোরানো ঐতিহাসিক নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কান্ডারী তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে যে ভাষায় আক্রমণ করলেন দিলীপ ঘোষ তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা উপনির্বাচনে দিলীপ ঘোষের খাস তালুক খড়্গপুর বিধানসভা বিজেপির হাত থেকে কেড়ে নিয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে লড়াই করা তৃণমূল কংগ্রেস। আর আজ রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য নন্দীগ্রাম ছেড়ে অন্য কোনও আসন খুঁজে রাখতে বললেন খড়গপুর বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক। ফলে, আগামী বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত আবারও খবরের শিরোনাম থাকবে ভূমি আন্দোলনের পূণ্যভূমি নন্দীগ্রাম এ বিষয়ে কোন সন্দেহ রইল না।