সরাসরি সংঘাতে আবার রাজ্য-রাজ্যপাল! মস্তানি করে উপাচার্যদের ভয় দেখাচ্ছেন, অভিযোগ শিক্ষামন্ত্রীর

রাজেন রায়, কলকাতা, ২ জুন: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে এবার রাজ্যপালের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াল রাজ্য। রাজ্যপাল তার নিজের পছন্দ মত উপাচার্য পদে নিয়োগ করেছেন বলে নির্দেশিকা জারি করে অভিযোগ তুলে সেই নিয়োগকে বাতিল ঘোষণা করল রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর। তার জায়গায় নিয়োগ করা হল অন্য ব্যক্তিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল আইন মানেননি বলেও নির্দেশিকা করে অভিযোগ করা হয়েছে। সরাসরি রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে রাজ্য সরকারের অস্বীকার ঘোষণা কার্যত নজিরবিহীন বলেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে আধিকারিকরা। একই সঙ্গে এদিন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, ‘রাজ্যপাল মস্তানি করে ফোন করে উপাচার্যদের ভয় দেখাচ্ছেন। তাঁর সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার মেনে নেবে না।’

প্রসঙ্গত, সোমবার বিকেলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুওলজি বিভাগের অধ্যাপক গৌতম চন্দ্রকে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। নিয়োগ করার পর উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে সেই ফাইল যাওয়ার পরপরই জোর তৎপরতা শুরু হয়। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করেই রাজ্যপাল কিভাবে একতরফা নিয়োগ করেন, তা নিয়েই মূলত প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তারপরেই উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে পাল্টা নির্দেশিকা জারি করে ওই নিয়োগ বাতিল ঘোষণা করা হয়। পালটা কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুওলজি বিভাগের অধ্যাপক আশিস কুমার পানিগ্রাহীকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য পদে নিয়োগ করার কথা ঘোষণা করে উচ্চ শিক্ষা দফতর। রাজ্যপালের স্বাক্ষর করা নিয়োগপত্রকে কার্যত বাতিল করে সোমবার রাতেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে পাল্টা নিয়োগ করা হয়।

উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ‘সহ উপাচার্যের পদ ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শূন্য পদ হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু সহ-উপাচার্যের পদে নিয়োগের জন্য এতদিন পর্যন্ত উচ্চ শিক্ষা দফতরের প্রস্তাবে সম্মতি দেননি রাজ্যপাল। হঠাৎ করেই তিনি নিজের পছন্দমত দু’জনের নাম প্রস্তাব করেন, যা উপাচার্য নিয়োগের আইনবিরুদ্ধ। উপাচার্য নিয়োগের আইন মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য, সহ-উপাচার্য নিয়োগ করতে হলে রাজ্যপাল সহ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই নিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে তা রাজ্যপাল না মানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী রাজ্যপাল তথা আচার্যের এই নিয়োগ বাতিল করে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুওলজি বিভাগের অধ্যাপক আশিস কুমার পানিগ্রাহীকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য পদে চার বছরের জন্য নিয়োগ করা হল।”

এখানেই সংঘাতের শেষ নয়। মঙ্গলবার উচ্চমাধ্যমিকের পরিবর্তিত সূচি প্রকাশের সময়েও এই প্রসঙ্গ টেনে
রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, ‘রাজ্যপাল সবাইকে ফোন করে ভয় দেখাচ্ছেন। আমি অনুরোধ করব, তিনি যেন এই কাজ না করেন। তাঁর তরফ থেকে মস্তানসুলভ আচরণ যেন না আসে। তিনি প্রথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরে একটার পর একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। আইন এবং যে বিধি আমাদের আছে, সেই বিধি অনুযায়ী কাজ করা উচিত। উনি তা করেননি। উনি সবটাই প্রকাশ্যে করছেন বলে আমি বলতে বাধ্য হলাম।

এদিন তিনি আরও বলেন, ‘এই যে মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো তিনি যেভাবে চলছেন, তাতে তাঁর সম্মানীয় আসনটি কলুষিত করছেন। আমরা আইন মেনে, উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেই সব কিছু করব। আমাদের বিধানসভার আইনই শেষ কথা। উনি ঠিক করছেন উনি কাকে নিয়োগ করবেন। কোনও দিন রাজ্যপাল নিজে নিজে নিয়োগ করেন না। উপাচার্যদের বেতন দেয় রাজ্য সরকার। আমরা তীব্র ভাষায় তাঁর আচরণকে নিন্দা করছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *