কার্ড নেই, তাই রেশন পাচ্ছেন না প্রতিবন্ধী পরিবার

আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ২৪ মে: ‘রেশন কার্ড না থাকলেও দেওয়া হবে চাল ডাল’। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পরও রেশন সামগ্রী থেকে বঞ্চিত এক প্রতিবন্ধী পরিবার। অন্যের উপর ভর করে পঞ্চায়েত থেকে বিডিও অফিসে গিয়েও মেলেনি কুপন। ফলে নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে কোনওক্রমে দিন কাটাচ্ছেন ওই অসহায় পরিবার।

রামকৃষ্ণ কর্মকার। বয়স ৩৭ বছর। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় রামকৃষ্ণ। বছর নয়েক আগে বাবা শিশির কর্মকার মারা যান। ফলে পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে। পৈত্রিক ব্যবসা কামারশালায় লোহা পিটিয়ে দিব্যি চলছিল সংসার। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে বাড়িতে খড়ের ছাউনি দিতে গিয়ে মাটিতে পড়ে গুরুতর জখম হন তিনি। সঞ্চিত সমস্ত অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা করিয়ে জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফিরলেও কোমর থেকে নিচের অংশ অসার হয়ে যায় তার। চলাফেরা করতে হয় অন্যের কাঁধে ভর করে। বাড়ির মধ্যেই চলাফেরা করেন লাঠি নিয়ে। ভাই পরিবার নিয়ে আলাদা থাকে। ফলে ওই অবস্থাতেই গরম লোহাকে পিটিয়ে কোনোক্রমে সংসার চালিয়েছেন কর্মকার পরিবার। রামকৃষ্ণ বলেন, “দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটাচলা করতে পারি না। ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। এক বছর আগে নতুন রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু নতুন কার্ড মেলেনি। ফলে রেশন সামগ্রী মেলে না। লকডাউনের সময় কামারশালা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই অবস্থাতেও রেশন মেনেনি। অন্যের সাহায্যে কুপনের জন্য বিডিও অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানেও মেলেনি কুপন। নিরুপায় হয়ে ভাগ্যকে দোষারোপ করে ঘরেই কোনোক্রমে খাবার জোগাড় করছি”।

মা ভাগ্যবতী কর্মকার বলেন, “ন’বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছে। এখন পর্যন্ত বিধবা ভাতা পায়নি। এদিকে বন্ধ রেশন সামগ্রী। ফলে ছেলে বউমা নাতনিকে নিয়ে খুব কষ্টে রয়েছি”।

কাষ্ঠগড়া গ্রামের রেশন ডিলার কাজল হালদার বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। কেন রেশন পাচ্ছেন না বলতে পারব না”।

এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সঞ্জয় দত্ত বলেন, “আমরা জানতাম না। খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রাথমিক ভাবে ওই পরিবারকে সরকারি ত্রাণ হিসাবে কিছু চাল দেওয়া হবে। তারপরেই রেশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে”।

রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের বিডিও দীপান্বিতা বর্মণ বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ওই পরিবারকে রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করব”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *