পুজোর আগে অন্ধকার নামল শিল্পশহরে, দুর্গাপুরে বন্ধ হল ডিটিপিএস তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্মহীন ৭০০ ঠিকা শ্রমিক, দুঃশ্চিন্তায় শহরবাসী

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ২৩ সেপ্টেম্বর: দুর্গাপুজোর আগে অন্ধকার নামল শিল্পশহরে। এবার বন্ধ হল ডিভিসির দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (ডিটিপিএস) সর্বশেষ ইউনিট। শুক্রবার ডিটিপিএসের ৪ নং ইউনিটের কফিনের শেষ পেরেক পোঁতা হল, অর্থাৎ টারবাইনের সিল ব্রেক করা হল। আর তাতেই দুঃশ্চিন্তার কালো মেঘ শিল্পশহরে। নতুন ইউনিট তৈরী না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো ইউনিট চালু রাখার দাবিতে সরব হল আইএনটিইউসি, সিটু, ইউটিইউসি, এআইটিইউসির যৌথ মঞ্চ ইউনাইটেড ফোরাম অফ ডিভিসির (ডিটিপিএস)। শুক্রবার বিকেলে দুর্গাপুর ডিটিপএসে বিক্ষোভ সমাবেশে সামিল হল ওই যৌথমঞ্চ।

দুর্গাপুরের অর্জুনপুর এলাকায় ডিভিসির দুর্গাপুর তাপবিদ্যুত কেন্দ্র(ডিটিপিএস)। সাতের দশকে তৈরী হয় ডিটিপিএসের চারটি ইউনিট। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করত। এখানের উৎপাদিত বিদ্যুত মূলত গ্রিডে জোগান হয়। আগে ১, ২ ও ৩ নম্বর ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ৪ নং ইউনিটটি চালু ছিল। দৈনিক ২০০-২১০ মেগওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হত। গত দেড় মাস আগে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। ওই তাপবিদ্যুতে ডিভিসির এক নির্দেশিকায় মুখ ম্লান হয়ে আসে শিল্পশহরের। 

২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে নির্দেশিকা জারি করে ২৫ বছরের ঊর্দ্ধে দেশের প্রতিটি তাপবিদ্যুৎ ইউনিট বন্ধ করার। দূষণ মুক্ত রাখতে আরও বেশকিছু বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ২০২০ সালে। সেইমত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৫ বছরের ঊর্দ্ধের ইউনিটগুলির তালিকা প্রকাশ হয়। সেই তালিকায় ডিটিপিএস এর ৪ নম্বর ইউনিটটি চিহ্নিত করা হয়। তাতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ছাড়পত্র রয়েছে বলে শ্রমিকদের দাবি। যদিও সেই সময় থেকে শ্রমিকরা ইউনিট আধুনিকিকরণের দাবিতে ও নতুন একটি ইউনিট তৈরীর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। অভিযোগ, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবিতে কোনও কর্ণপাত করেনি। 

ডিটিপিএসে স্থায়ী শ্রমিক ও ঠিকা শ্রমিক রয়েছে প্রায় ১ হাজার। এছাড়াও ডিটিপিএসের ওপর পরোক্ষ ভাবে নির্ভরশীল আশপাশের অর্জুনপুর, পুরষা, অঙ্গদপুর ও মায়াবাজারের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। শুক্রবার ডিটিপিএসের ৪ নং ইউনিটের কফিনের শেষ পেরেকটি পোঁতা হল। অর্থাৎ ৪ নং ইউনিটের টারবাইন সিল ব্রেক করা হল। এবং এখানে মজুত থাকা প্রায় দু লক্ষ মেট্রিক টন কয়লা মেজিয়া এমটিপিএসে পাঠানো হবে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই দুঃশ্চিন্তার অন্ধকার নেমে এসেছে ওইসব এলাকায়। কর্মহীন হয়ে পড়ল প্রায় ৭০০ ঠিকাশ্রমিক। দুঃশ্চিন্তায় এলাকায় আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি। আর তাই প্রতিবাদে সরব হয়েছে শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি ও বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন সিটু, ইউটিইউসি,  এআইটিইউসির যৌথ মঞ্চ
ইউনাইটেড ফোরাম অফ ডিভিসির (ডিটিপিএস)।

শুক্রবার ওই ফোরাম দুর্গাপুর ডিটিপিএসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এবং দুপুরে ডিটিপিএস কর্তৃপক্ষের কাছে একগুচ্ছ দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেয়। তাদের দাবি ডিটিপিএস অত্যন্ত লাভজনক ইউনিট। সমসাময়িক বোকারো, চন্দ্রপুরা নতুন প্রজেক্ট পেয়েছে। কিন্তু দুর্গাপুর পায়নি। তাই মনে হচ্ছে ডিটিপিএসকে পরিকল্পিতভাবে বন্ধ করা হল। নতুন ইউনিট কবে চালু হবে, সেটাও অন্ধকারে। ইউনাইটেড ফোরাম অফ ডিভিসির (ডিটিপিএস) পক্ষে আইএনটিইউসির (ডিভিসির) সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মিশ্র বলেন, “নতুন ইউনিট না হওয়া পর্যন্ত ৪ নং ইউনিট বন্ধ করা যাবে না। এলাকার আর্থ সামাজিক ও ঠিকাশ্রমিকদের স্বার্থে চালু রাখতে হবে। স্থায়ী শ্রমিকদের ট্রান্সপার করা যাবে না। হাসপাতাল,  স্কুল বন্ধ করা যাবে না। অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের কোয়াটার থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। দ্রুত ৫ নং সুপার ক্রিটিক্যাল ইউনিটের কাজ চালু করতে হবে।”

জানা গেছে, দুর্গাপুর ডিটিপিএসে সুপার ক্রিটিক্যাল ইউনিট তৈরীর অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। ৮০০ মেগওয়াটের ওই ইউনিটের কাজ কার্যত বিশবাঁও জলে। আর তাই নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় শিল্পশহরবাসী। 

প্রসঙ্গত, অতিতে দুর্গাপুরে এমএএমসি, বিওজিএল, ফার্টিলাইজার, বার্ন স্ট্যান্ডের মত রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বন্ধ হয়েছে। বিলগ্নিকরণের খাঁড়া ঝুলছে অ্যালয় স্টিলের মাথার ওপর। তারপর ডিটিপিএস বন্ধ হওয়ায় আর এক অন্ধকারময় দিন শিল্পশহরের। ইউটিইউসির(স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন) কার্যকরী সভাপতি দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন,” যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন ইউনিট চালু করতে হবে। যতদিন না নতুন ইউনিট চালু হবে,  ততদিন ৪ নং ইউনিট চালু রাখতে হবে।” 

যদিও এবিষয়ে ডিভিসির ও ডিটিপিএসের কোনো আধিকারিক মন্তব্য করতে চায়নি।

                    

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *