পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৩ জানুয়ারি: পথ ভুলে বাংলাদেশে চলে যাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে ফিরে পেতে হয়রানির শিকার ষাটোর্দ্ধ মা-বাবার। দীর্ঘ প্রায় দু’বছর ধরে বাংলাদেশের জেলে বন্দি থাকলেও তাকে ফেরানোর কোনও দিশা পাননি দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলির অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি বিনোদ দেবনাথ ও ছবি দেবনাথ। বাংলাদেশের হাইকমিশনার সহ স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও সাংসদকে জানিয়েও কোনও ফল না পাওয়ায় আত্মহত্যার দিকে পা বাড়িয়েছেন অসহায় ওই পরিবারটি। যদিও দ্রুত ভারতীয় ওই যুবককে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছেন বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার।
ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলির ধরন্দা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় খড়ি বিক্রেতা বিনোদবাবু। ২০১৯ সালের ৮ মার্চ বাবাকে টাকা দেবার জন্য বাড়ি থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে যাবার পর আর ফেরেনি তাদের একমাত্র সন্তান মানিক দেবনাথ (৩২)। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ওইদিন মোটরবাইক নিয়েই পথ ভুলে বাংলাদেশে ঢুকে গিয়েছিল সে। যা প্রথমে না জানতে পেরে ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে লিখিত অভিযোগ জানান ওই দম্পতি। যদিও পরে তারা জানতে পারেন বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার বিরামপুর থানা আটকে রেখেছে তাদের একমাত্র ছেলে মানিককে। পাসপোর্ট করে ছেলেকে তড়িঘড়ি ফিরিয়ে আনতে গেলেও তা পারেননি অসহায় ওই বৃদ্ধ দম্পতি। সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের কারণে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুববকে ১ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় সেই দেশের আদালত। যার ফলে বাধ্য হয়েই ফিরে আসতে হয় অসহায় ওই দম্পতিকে। এরপরেই সারা বিশ্বে করোনার জেরে শুরু হয় লকডাউন। দেখতে দেখতে একবছর পেরিয়ে আরও অতিরিক্ত ৮ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। আজও ছেলেকে ফিরে পাননি ওই দম্পতি। একমাত্র ছেলেকে ফিরে পেতে জেলা প্রশাসন থেকে হাইকমিশনার, সাংসদ সর্বত্র দরবার করেও কোনও ফল পাননি জিরো পয়েন্টে থাকা অসহায় ওই পরিবারটি। যার ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চলেছেন, বলে আক্ষেপ প্রকাশ ওই বৃদ্ধ বৃদ্ধার।
বিনোদ দেবনাথ ও ছবি দেবনাথরা জানিয়েছেন, বৃদ্ধ বয়সে তাদের একমাত্র ভরসা ছিল মানিক। কিন্তু এখনও বাংলাদেশের জেলে বন্দি সে। এমত অবস্থায় ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে চোখের জল ফেলা ছাড়া কোনও উপায় নেই আর তাদের কাছে। প্রশাসনের কাছে দরবার করেও কোনও লাভ হয়নি। আগামীতে আত্মহত্যা করা ছাড়া তাদের কোনও উপায় নেই।
বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। লিখিত আকারে ই-মেলে বিদেশ মন্ত্রককে চিঠিও পাঠিয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি যাতে ওই বৃদ্ধ দম্পতির কাছে তাদের সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়া যায় সেই চেষ্টা তিনি করবেন।