আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ৯ জুলাই: আবারও কি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বুনো হাতির মৃত্যু হল বক্সার জঙ্গল লাগোয়া লোকালয়ে? কারণ বৃহস্পতিবার রহস্যজনকভাবে ধানক্ষেত থেকে তারে পেঁচানো অবস্থায় মাত্র ৮ বছর বয়সের আরও একটি বুনো হস্তিশাবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজাভাতখাওয়াতে ধান ক্ষেতের ভেতর থেকে হাতিটির দেহ উদ্ধার হয়। পেছনের পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল।ধানক্ষেতের চারপাশে তারের বেড়া ছিঁড়ে তাতে পেঁচিয়ে পড়েছিল শাবকটি।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বুধবার মাঝরাতের পর কোনও এক সময় রাজাভাতখাওয়ার ২২ মাইল গারো বস্তি এলাকায় ঢুকে পড়ে মায়ের সঙ্গে শাবকটি। রাতেই তীব্র কোনও আঘাতে মৃত্যু হয় হাতিটির। এদিন সকাল থেকেই শাবককের মৃত্যুতে করুণ আর্তনাদ শুরু করে মা হাতি। তার চিৎকারে ভোর বেলায় ঘুম ভেঙে যায় গারো বস্তির বাসিন্দাদের। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এদিন ফের জল্পনা ছরায় বিভিন্ন মহলে। স্থানীয়দের একটি অংশ মুখ খুলতে চায়নি। তবে রাজাভাতখাওয়ার একটি অংশের মানুষ সাফ জানিয়েছেন, বিদ্যুতের আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে ছোট্ট শাবকটির। না হলে সুস্থ সবল একটি শাবক হাতির ধান ক্ষেতে এসেই মৃত্যু হবে কেন?
এদিকে ঘটনাস্থলের কাছেই রয়েছে বনদপ্তরের রাজাভাতখাওয়া রেঞ্জ ও বিট অফিস। দ্রুত ঘটনাস্থলের যান বনকর্মীরা। দেহটি উদ্ধার করে রাজাভাতখাওয়াতে পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয় ময়নাতদন্তের জন্য।সেখানেই শুরু হয় ময়নাতদন্ত। তবে এদিন সন্ধ্যে পর্যন্ত বনদপ্তরের কাছে চূড়ান্ত রিপোর্ট আসেনি। জানাগেছে, বাঘ বন লাগোয়া গারো বস্তিতে বছরের প্রায় প্রতিটি দিন হাতির আনাগোনা। এলাকাটিতে হাতির করিডোরে রয়েছে। হাতিকে আকর্ষণ করতে পারে এমন সবকিছু। যার মধ্যে ধান, সুপারি, সবজি চাষ হচ্ছে এলাকায়। অভিযোগ, খুব চালাকি করে কেউ বা কারা ক্ষেতের ধারে বিদ্যুৎ হুকিং করে তারের বেড়া দিয়ে রাখে।রাতের বেলা কাজটি করা হয় বনকর্মীদের নজর এড়িয়ে। দিনের বেলা ফের হুকিং সংযোগ ছিন্ন করে দেওয়া হয়। বুধবার রাতে কি হয়েছিল তা নিয়ে অবশ্য ধোয়াশা রয়েছে। জানা গেছে, যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে রাতেই মৃত্যু হয় হাতিটির। এদিন সকাল থেকেই ঘটনাস্থলের কাছেই একাধিকবার ফিরে আসে মা হাতিটি। এই দৃশ্য অনেকের মনকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত, দুপুর ১২টা নাগাদ জানান, গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রকৃতি প্রেমিকদের একাংশ বলেন, যেভাবে জমির ফসল বাঁচাতে বিদ্যুতের বেড়া দেওয়া চলছে তা মেনে নেওয়া যায় না। আজকের ঘটনা যদি সত্যিই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হবার ঘটনা হয় তার থেকে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না।এতে আগামী দিনে আরও হাতির মৃত্যু হতে পারে।
উল্লেখ্য, এদিনের ঘটনাটি ধরলে গত একমাসে ৪টি হাতির মৃত্যু হল বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে। বিরল প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে হাতি সংখ্যার বিচারে অন্যতম। একের পর এক হাতি মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ প্রেমীরা।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপক্ষেত্র অধীকর্তা পশ্চিম কল্যাণ রাই বিকেল ৪টে নাগাদ জানান, “আমরা এখনো ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাইনি।তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যু হয়নি।মাথায় ভারি কিছুর আঘাত লেগেছিল। রিপোর্ট হাতে এলেই মৃত্যুর কারণ পরিস্কার হবে।”গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বাঘ বনে।