উন্নাও গণধর্ষণ কান্ডে দোষী সাব্যস্ত প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার,শাস্তি ঘোষণা বৃহস্পতিবার

আমাদের ভারত,১৬ ডিসেম্বর: শেষপর্যন্ত বিচার পাওয়ার দিকে প্রথম সফল পদক্ষেপ উন্নাও নির্যাতিতার পরিবারের। ২০১৭ সালে উন্নাওয়ের নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগে প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারকে দোষী সাব্যস্ত করল দিল্লি আদালত। ধর্ষণ ভয় দেখানোর সহ শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন বিরোধী পকসো আইনের একাধিক ধারায় দল থেকে বহিষ্কৃত এই বিজেপি নেতা কে সোমবার দোষী সাব্যস্ত করেছে দিল্লির তিশ হাজারী আদালত।তিনদিন পর অর্থাৎ ১৯ ডিসেম্বর তার শাস্তি ঘোষণা হবে।তবে এই মামলার অন্য অভিযুক্ত শশী সিং বেকসুর খালাস হয়েছেন। সেঙ্গারের বিরুদ্ধে নির্যাতিতাকে গাড়ি দুর্ঘটনায় খুনের চেষ্টার অভিযোগে অন্য মামলা এখনো চলছে।

ধর্ষণের বিচার চাওয়ার জন্য লড়াই করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে নির্যাতিতার। তাই আজকের রায় অল্প হলেও স্বস্তি দিল নির্যাতিতার পরিবারকে। আজ সারা দেশ এই রায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। নাবালিকা এই মেয়েটিকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। সেঙ্গার বিজেপির চার বারের বিধায়ক।

অভিযোগ ছিল ২০১৭-র ৪ জুন একটি চাকরির জন্য স্থানীয় এক মহিলার সঙ্গে উন্নাওয়ের ওই বিধায়কের বাড়িতে গেলে ধর্ষণের শিকার হয় ওই ১৬ বছরের মেয়েটি। এরপর নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ ১১ জুন গ্রামের দুই যুবক ওই কিশোরীকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে। তারা সবটাই সেঙ্গারের নির্দেশে করে কাজগুলি। ২০ জুন অভিযোগ দায়ের হলে কিশোরীর বয়ানের ভিত্তিতে শুভম সিং, নরেশ তিওয়ারি,বৃজেশ যাদব নামে ৩ জনকে গণধর্ষণ পকসো আইনে গ্রেফতার করা হয়।জানা যায় শুভম সিংয়ের মা শশী সিং সবটা জেনে শুনে ওই কিশোরীকে সেঙ্গারের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন।

বহুবার কুলদীপের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করতে গেলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি বলেও দাবি করে ধর্ষিতার পরিবার। শেষ পর্যন্ত অভিযোগ নিলেও তদন্তের কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরিবারটি জানিয়েছিল তারা আবার অভিযোগ জানাতে গেলে কুলদীপ সেঙ্গার দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে নির্যাতিতার বাবাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগ আনা হয়েছিল। গ্রেফতার করা ধর্ষিতার বাবাকে বন্দী রাখা হয় উন্নাও জেলে। সেখানে চলতে থাকে তার ওপর অকথ্য অত্যাচার। মেয়ের ধর্ষণের বিচার চাওয়ার অপরাধে তাকে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল। কোনভাবেই বিচার না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল নির্যাতিতা কিশোরী ও তার মা মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী বাড়ির সামনে গিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আর তখনই জানাজানি হয় ঘটনার। আর অদ্ভুত ভাবে তারপরের দিনই খবর পাওয়া যায় উন্নাও জেলে মৃত্যু হয়েছে ওই ধর্ষিতা কিশোরীর বাবার। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে তার শরীরজুড়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলেও মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয় রক্তে বিষক্রিয়া।

বিনীত বাউয়া, শৈলী এবং সোনু নামে চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষিতার বাবাকে খুন করার অভিযোগ দায়ের হয়। এই চারজনই ওই বিজেপি বিধায়কের ঘোষিত সমর্থক বলে খবর।

এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে এই মামলা সিবিআই-এর হাতে যায়। তখনই সেঙ্গার এর বিরুদ্ধে পকসো আইনে ধর্ষণ অপহরণ অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র অস্ত্র আইন লঙ্ঘন অভিযোগের ভিত্তিতে চার্জশিট গঠন করা হয়। এরপর ২০১৮-র ১৩ এপ্রিল গ্রেপ্তার হয় অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক। ওষ তার সঙ্গে গ্রেফতার অভিযুক্ত আরোও চারজন। যারা সকলেই তিহার জেলে যায়।

এখানেই শেষ নয় নির্যাতিতার পরিবার অভিযোগ করে জেলে বসেই সেঙ্গার বহুবার তাদের হুমকি দিয়ে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এরপর ৩০১৮-র ২৮ জুলাই রায়বেরেলি যাওয়ার পথে সড়কে মারাত্মক দুর্ঘটনার মুখে পড়েন ধর্ষিতা। তার সঙ্গে ছিল তার কাকিমা,বোন ও আইনজীবী। ধর্ষিতা ও আইনজীবীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হলেও মৃত্যু হয় তার কাকিমা ও বোনের।

জানা যায় এই ঘটনার দুই সপ্তাহ আগেই নির্যাতীণা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে নিজে প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও সেই চিঠি সময়মত পাননি বিচারপতি। দুর্ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে চিঠির বিষয়ে জানতে পেরছ পদক্ষেপ গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্ট। মামলাটি উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেন তিনি। ধর্ষিতার আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না তা প্রমাণ হয়ে যায় যখন জানা যায়, যে ট্রাকটি ধর্ষিতার গাড়িকে ধাক্কা মেরে ছিল সেটি রাস্তার উল্টো দিক থেকে আসছিল এবং ট্রাকের নম্বর প্লেট কালো রঙ করা ছিল। আবার সেদিন ধর্ষিতাও পরিবারের জন্য যে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছিল তারাও ছিলেন না।

এই সময় ধর্ষিতার শারীরিক অবস্থা সংকটজনক হলে তাকে দিল্লির এইমসছ আনা হয়। সে সেখানেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বয়ান দেয়।

মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করলেও বিচার কিন্তু কোনোভাবেই এগোচ্ছিল না। সেঙ্গারের বিরুদ্ধে মামলা উঠছিল না আদালতে। উল্টো ধর্ষিতা হওয়ার অপরাধে বাবা বোন কাকিমাকে হারিয়েছে ওই তরুণী। শেষমেষ মামলা ওঠে দিল্লির তিল হাজারী আদালতে। এরমধ্যে ঘটে মায় মর্মান্তিক ঘটনা। ধর্ষিতা গায়ে আগুন লাগিয়ে মারার চেষ্টা করা হয়। মৃত্যুর আগেও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে গিয়েছিল তরুনী। আজকের রায় সেই দাবি পূরণের প্রথম পদক্ষেপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *