কলকাতায় ভুয়ো টিকাকরণ ক্যাম্প, টিকা নিয়েছেন মিমি চক্রবর্তীও, তদন্তে পুলিশ

রাজেন রায়, কলকাতা, ২৩ জুন: এমনটাও যে হতে পারে তা ভাবতেই পারেনি পুরসভা, পুলিশ থেকে খোদ যাদবপুরের সংসদ তথা অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। ভুয়ো আইএএস অফিসার সেজে কলকাতা পুরসভার নাম ভাঙিয়ে ভুয়ো টিকাকরণ শিবির চালাল কসবা থানা এলাকার এক ব্যক্তি। খোদ সাংসদও টিকা নিয়েছেন। সাংসদ টিকা নিয়েছে জেনে এই বিষয়ে নাক গলাতে রাজি ছিল না পুলিশ। কিন্তু কলকাতা পুরসভার তরফে নিউমার্কেট থানায় অভিযোগ জানানোর পর নড়েচড়ে বসে কসবা থানা। আর তারপরেই এই ভুয়ো ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পের পর্দা ফাঁস। গ্রেফতার করা হয়েছে দেবাঞ্জন দেব নামে অভিযুক্তকে।

তিনি নিজেকে আইএএস বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। আসতেন নীলবাতি লাগানো গাড়িতে। তাঁর সঙ্গে থাকত নিরাপত্তারক্ষীরাও। সাংসদ মিমি চক্রবর্তীও টিকা নিয়েছেন সেই ক্যাম্প থেকেই। কসবার ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভুয়ো ক্যাম্পে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কোনও মেসেজ না আসাতে খটকা লাগে মিমির। তারপর কসবার কো-অর্ডিনেটর কে খোঁজ নিতে বললে তিনি, খোঁজখবর করে গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন।

মিমি চক্রবর্তী বলেন, “আমার কাছে কয়েকদিন আগে একটি ফোন আসে। বলা হয় যে জয়েন্ট কমিশনার অফ কেএমসির উদ্যোগে একটি ক্যাম্প হচ্ছে। এখানে থার্ড জেন্ডার, বিশেষ সক্ষম ব্যক্তি, ছোটো ব্যবসায়ীদের টিকা দেওয়া হবে। তখন আমি বলি, অবশ্যই আসব। আমার আসাতে যদি ওঁরা অনুপ্রেরিত হন, আমি নিশ্চয়ই গোটা বিষয়টি প্রোমোট করব। আমি নিজেও ওখানে ভ্যাকসিন নিই। আর তারপরই আমার খটকা লাগে, যে আমার কোনও মেসেজ আসে না। আমি ভাবলাম চলে আসবে। সার্টিফিকেট চাই। তখন ওরা বলে, আমার বাড়িতে পৌঁছে যাবে। আমি বাড়ি চলে যাওয়ার পরও সার্টিফিকেট আসে না। আমার অফিসের লোক গিয়ে ফের খোঁজ করেন। তখন ওরা বলে, তিন চার দিন সময় লাগবে। তখনই বুঝি এটা তো হওয়ার কথা নয়। সকলের কাছ থেকে খোঁজ নিই। ওঁদের রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল কিনা, মেসেজ এসেছে কিনা! কিন্তু প্রত্যেকেই না জানান। তারপরই বুঝতে পারি, বড় গণ্ডগোল হচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি।”

মঙ্গলবার দেবাঞ্জনকে গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত এই ক্যাম্প থেকে টিকা নেন ২৫০ জন। জানা যায়, অনুমতি ছাড়াই চলছিল এই ক্যাম্প। পাকড়াও করা হয়েছে দেবাঞ্জনকে। তাঁর থেকে উদ্ধার হয়েছে জাল আই কার্ড। এমনকি তাতে কলকাতা পুর কমিশনার বিনোদ কুমারের সই জাল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। তাঁর থেকে মেলে নীল বাতি যুক্ত গাড়িও। কোথা থেকে এল এত টিকা? কীভাবেই বা পুরসভার লোগো ব্যবহার করা হল? আদৌ কি আসল টিকা? এই ক্যাম্পের উদ্যোক্তা কারা? উঠছে একাধিক প্রশ্ন। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন আধিকারিকরা।

রোজ গড়ে ১০০ জন করে নিয়েছেন ভ্যাকসিন। প্রাপকদের কথায়, বিনামূল্যেই দেওয়া হচ্ছিল ভ্যাকসিন। বাজেয়াপ্ত হওয়া ভ্যাকসিন ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। পুরসভা বা স্বাস্থ্য দফতরের রেকর্ডে এই ভ্যাকসিন নেওয়ার খবর নেই। ফলে এই ভ্যাকসিন জাল কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ভ্যাকসিন দেওয়ার আড়ালে মানুষকে সংক্রমিত করার অন্য কোনো ছক ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *