দেশনায়ক নেতাজি সুভাষের জন্মদিনে জেনে নিন তাঁর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলি

আমাদের ভারত, ২৩ জানুয়ারি: দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যেন একটা আবেগের নাম। যে আবেগের জন্ম আছে, মৃত্যু নেই। দেশ নায়ক নেতাজি প্রথম ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনী আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরি করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা বলেছিলেন। আজ নেতাজীর ১২৩ তম জন্মদিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে স্মরণ করা হলেও অনেকেই ভুলে গিয়েছেন তাঁর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলি। আসুন আজ এক ঝলকে জেনে নেওয়া যাক সেই জায়গাগুলি যেখানে আজও বিরাজ করে নেতাজির অমর স্মৃতি। চাইলে ভ্রমণের মাধ্যমে ছুঁয়ে দেখতে পারেন সে সমস্ত স্মৃতি।

কটক:
নেতাজির জন্ম কটকে ১৮৯৭ সালে, সকলেই জানেন। ওড়িশা বেড়াতে গেলে নেতাজির নামাঙ্কিত মিউজিয়াম যেতে ভুলবেন না। নেতাজি বার্থ প্লেস মিউজিয়াম একসময় নেতাজির বাড়ি ছিল। যার নাম ছিল জানকীনাথ ভবন। জানকীনাথ বসু ছিলেন নেতাজির বাবা। এখানে এখন একটি মিউজিয়াম করা হয়েছে। কটকের সুতাহাট অঞ্চলের ওড়িয়া বাজারে মিউজিয়ামটি অবস্থিত। নেতাজির বিষয়ে ভালো ভাবে জানতে গেলে এই মিউজিয়ামটিতে একবার যেতেই হবে। সোমবার এই মিউজিয়ামটি বন্ধ থাকে। এখানে ১৫টি গ্যালারি আছে। যেখানে আছে বিভিন্ন ছবি, নেতাজির ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং বিভিন্ন জেলে থাকাকালীন নেতাজির লেখা চিঠি।

গোমো স্টেশন:
রাঁচি যাওয়ার পথে এবং অন্যান্য সময় ট্রেনের জানলা দিয়ে গোমো স্টেশন নিশ্চয়ই দেখেছেন। ২০০৯ সালে এই স্টেশনটির নাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস গোমো রেলওয়ে স্টেশন। স্টেশনের ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে আছে নেতাজির মূর্তি। ব্রিটিশদের নজর এড়িয়ে এই গোমো স্টেশন থেকেই হয়েছিল নেতাজির গ্রেট এসকেপ বা চূড়ান্ত নিষম্ক্রণ।

নেতাজি ভবন, ভবানীপুর:
এলগিন রোডের ফোরাম মলের ঠিক উল্টোদিকে আছে নেতাজির এই বাড়িটি। ১৯০৯ সালে নেতাজির বাবা এই বাড়িটির নির্মাণ করেন। এখান থেকেই ১৯৪১ সালে ব্রিটিশদের চোখে ফাঁকি দিয়ে ছদ্মবেশে নেতাজি বার্লিন পালিয়ে যান। বর্তমানে নেতাজির এই বাড়িটির তত্ত্বাবধান করে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো। এখানে আছে একটি মিউজিয়াম, গ্যালারি ও লাইব্রেরি। সোমবার এটি সাধারণের জন্য বন্ধ থাকে। অন্যদিন ১১টা থেকে খোলা থাকে।

কার্শিয়াং:
দার্জিলিং জেলার কার্শিয়ং-এ আছে নেতাজি মিউজিয়াম। ১৯৩৬ সালের কথা। নেতাজি তখন ব্রিটিশ সরকারের নজরবন্দি। সেই সময় সাত মাসের জন্য তিনি এখানে এসে এই বাড়িটিতে ছিলেন। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৩৭ সালের অক্টোবর মাসে তিনি আবার এখানে আসেন। এখান থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চিঠি তিনি পাঠিয়েছিলেন। তাছাড়া স্ত্রী এমিলিয়েকেও অনেক চিঠি এখান থেকে লিখেছিলেন। ২০০৫ সালে কলকাতা মিউজিয়ামের তত্ত্বাবধানে এই বাড়িটি মিউজিয়ামে পরিণত হয়।

কলকাতা পুলিশ মিউজিয়াম:
২০১৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে নেতাজির স্মৃতিবিজড়িত প্রায় ৬৪টি হারিয়ে যাওয়া ফাইল উদ্বোধন করেছিলেন। এখানে এলে ওই ফাইলগুলির মাধ্যমে অনেক হারিয়ে যাওয়া কথা জানতে পারবেন।


ছবি: সুভাষচক।


ছবি: সুভাষ বাউলি।

সুভাষ চক ও সুভাষ বাউলি: যারা হিমাচল প্রদেশের ডালহৌসি বেড়াতে গেছেন তারা অবশ্যই এই দুটি জায়গার সাথে পরিচিত। ডালহৌসির জনপ্রিয় জায়গা হল সুভাষ চক। এখান থেকে দেখা যায় অপূর্ব সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। আশেপাশে ছোট ছোট দোকান আছে। স্থানীয়রা বেশিরভাগ সন্ধেবেলা এখানে কাটান। চকের ঠিক মাঝখানে আছে সুভাষচন্দ্র বোসের একটি সুন্দর মূর্তি। মজার কথা হল ডালহৌসি ছাড়াও সুভাষ চক আছে জয়পুরে (এখানেও আছে নেতাজির মূর্তি), গুরুগ্রামে, দিল্লির লক্ষ্মী নগরে এবং মহারাষ্ট্রের জলগাঁওতে। বাওলি, অর্থাৎ জলের আধার। এটিও আছে হিমাচল প্রদেশের ডালহৌসিতে। শোনা যায়, ১৯৩৭ সালে নাকি পেটের অসুখে ভুগছিলেন নেতাজি। স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য তিনি এখানে আসেন। এই বিশেষ বাউলির জল খেয়েই রোগ সেরে যায় নেতাজির। পরে এটি তাঁর নামেই নামকরণ করা হয়। বর্তমানে বাউলির চারপাশ বাঁধিয়ে বসার জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। আশেপাশের দৃশ্য খুবই সুন্দর। এখানে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধ্যান করতেন নেতাজি। অনেকে এখনও বোতলে করে বাউলির জল নিয়ে যান। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, এই জল সর্বরোগ নিরাময় করে।

রেনকোজি মন্দির, জাপান:
জাপানের রেনকোজি মন্দিরেই রাখা আছে নেতাজির চিতাভস্ম, এমনটাই বিশ্বাস করেন অনেকে। যদিও এই নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। ২০০৫ সালে মুখার্জি কমিশন দাবি করেছিল প্লেন দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি এবং রেনকোজির চিতাভস্ম নেতাজির নয়। তবে কখনও টোকিও গেলে একবার ঘুরে আসতে পারেন জায়গাটি। এখানে আছে নেতাজির আবক্ষ মূর্তি। একজন ভারতীয় হিসেবে বিদেশের মাটিতে প্রিয় নেতার মূর্তি দেখা অবশ্যই গর্বের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আন্দামান ও নিকোবরের রস আইল্যান্ডের নামকরণ করেছেন সুভাষ দ্বীপ। কখনও আন্দামান ও নিকোবর বেড়াতে গেলে ওই দ্বীপটিও হয়ে উঠতে পারে আপনার বিশেষ দ্রষ্টব্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *