আমাদের ভারত, ৬ জুলাই: শুক্রবারে আচমকাই লাদাখ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তার ঠিক ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে পিছু হটতে শুরু করল চিনা সেনা। সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী লাদাখ সফরের পর গত ৪৮ ঘণ্টায় ভারত এবং চিনের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায় একের পর এক বৈঠক হয়েছে। তার মধ্যে চিনা বিদেশ মন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের মধ্যেও ২ ঘন্টা ভিডিও কলে বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বৈঠকের পরই গালওয়ান থেকে পিছু হটতে শুরু করে চিনা ফৌজ।
সংঘাত এড়াতে গালওয়ান উপত্যকায় নদী সংলগ্ন যে এলাকাগুলো থেকে দু’পক্ষ পিছিয়ে আসার বিষয়ে একমত হয়েছিল সেখান থেকে চিনা সেনা তাদের তাবু বাহিনী ও যানবাহন সরিয়ে নিয়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটার পিছিয়েছে তারা। বর্তমানে ভারতীয় সেনাও পিছিয়ে আসতে শুরু করেছে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর লাদাখ সফরের পরই একের পর এক বৈঠকে চিনকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়। মোদীও লেহ থেকে সমস্বরে চিনের উদ্দেশ্যে বলে এসেছিলেন গাল ওয়ান আমাদের। ভারতের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনও আপস করা হবে না। ঠিক একই সুরে চিনা প্রতিনিধিদেরও নিজেদের অনড় অবস্থান বুঝিয়ে দেয় দিল্লি। ফলে গালওয়ানে চিনা সেনা পিছোনোর পেছনে প্রধানমন্ত্রী লাদাখ সফর যথেষ্ট কার্যকারিতা যে রয়েছে তা প্রমাণিত।
দেশের যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে দোভালের উপর ভরসা রেখেছে মোদী সরকার। এবারেও তার অন্যথা হল না।বিদেশমন্ত্রকের পক্ষে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী সীমান্ত বিবাদ বিষয়ে দু’দেশের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে রবিবার বৈঠক করেছেন। গালওয়ান সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমণে চিনের বিদেশ মন্ত্রীর সঙ্গে টানা দু’ঘণ্টার ভিডিও কলে কথা বলেছেন দোভাল। সূত্রের খবর তারপরেই সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেজিং। দীর্ঘ দুমাস ধরে গালওয়ান অঞ্চলে একই অবস্থানে অনড় ছিল চিন ও ভারতীয় সেনা। সেখান থেকে এই প্রথমবার চিনের পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপ নিতে দেখা গেল। অবশ্যই এর পেছনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সাথে চিনের বিদেশ মন্ত্রীর ভিডিও কলে দু’ঘণ্টা বৈঠক কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
জানা গেছে উভয়েই ওই বৈঠকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পূর্ণ ও স্থায়ীভাবে শান্তি ফেরানোর বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়াতে দু’পক্ষ একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে।
অন্যদিকে লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছিল বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। ফলে আন্তর্জাতিক স্তরেও চাপ ছিল চিনের উপর। দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রভাব পড়েছিল। ভারত এবং চিনের বাণিজ্য সম্পর্কে যারা বিনিয়োগ করেছেন বেজিংয়ের ওপর তারা চাপ বাড়িয়ে ছিল। সবমিলিয়ে অনড় অবস্থান থেকে সরে আসা ছাড়া চিনের কোন উপায় ছিল না।
ভারত আগাগোড়াই স্পষ্ট করে বুঝিয়েছে দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। তবে চিনের সেনাকে এখনই চোখ বুজে ভরসা করছে না ভারতীয় সেনা। অন্তত ৭২ ঘন্টা তাদের গতিবিধি না দেখে নিশ্চিত হতে চায়না ভারতীয় বাহিনী।