
স্বামী প্রৌঢ়ানন্দ
আমাদের ভারত, ৯ জানুয়ারি: ট্রেনে বসে আছি,নির্দিষ্ট সময়েই অমৃতসর মেল হাওড়া থেকে ছাড়ল। আমার উপরের বার্থ আর আমার সঙ্গী দুজন দুটি লোয়ার বার্থ পেয়েছেন।
আমার সঙ্গী দুজনের পরিচয় একটু পাঠকদের অবগতির জন্য জানাই। প্রথম জন মন্দিরের পূজারি, মাতৃসাধক, মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন থেকে শত হস্ত দুরে থাকেন।
নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ, দুবেলা জপ আহ্নিক না করে জল গ্রহণ করেন না। আমাদের মধ্যে বয়সের বেশ খানিকটা ফারাক থাকলেও আমি উনাকে দাদা বলেই সম্বোধন করি। আমার অপর সঙ্গী স্থানীয় একটি নামকরা বেসরকারি স্কুলের মালিক, এখন তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই। স্বভাবে ইনি ঠাকুর মশাই এর একেবারে বিপরীত। খেতে খুবই ভালবাসেন, রক্তে চিনির মাত্রা বেশি থাকলেও চিনি খেতে ইনি খুব পছন্দ করেন। কারন লক্ষ্য করেছি ইতিমধ্যেই বাড়ি থেকে আনা লাড্ডুর প্যাকেট থেকে দুটো লাড্ডু তার খাওয়া হয়ে গেছে, অবশ্য আমরাও একটা করে ভাগে পেয়েছি। মুখ ইনার অমৃতসর মেলের মতন সবসময় চলছে, মেলের ইঞ্জিন যদিও বা স্টেশনে থামে, কিন্তু মুখরূপ ইঞ্জিনের কোনও বিরাম নেই। বয়সে ইনি আমার বাবার বয়সী হলেও আমি অভ্যাস বশত আমরদা বলেই ডাকি, পুরো নাম অমরনাথ দে। যাইহোক বাড়ি থেকে আনা খাবার খেয়ে যে যার বার্থে শুয়ে পড়লাম, সেই কাল বিকেলে পৌঁছব লখ্নউ, সেখানে নেমে ট্রেন বদল করে পিছনে আসা দুন এক্সপ্রেসে করে যাব হরিদ্বার।
খুব ভোর থাকতেই ট্রেনে ঘুম ভেঙে গেল। নীচে তাকিয়ে দেখি অমরদা চা নিয়ে বসেছেন আবার তার সঙ্গে বিস্কুট।আমায় জাগতে দেখে বললেন কি চা খাবে? সম্মতির অপেক্ষা না রেখে চা ওয়ালার কাছ থেকে এক কাপ চা নিয়ে আমায় দিলেন। বেশ জোরেই ট্রেন চলছে। চারিপাশে ফাঁকা মাঠ আর তার মাঝে দু একটা করে বাড়ি চোখে পড়ছে। মাঝে মাঝেই চাষের জমি চোখে পড়লেও কর্ম ব্যস্ততা এখনও চোখে পড়ছে না। পূর্ব দিকে লাল রঙের ছটা দেখে জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখে পড়ল দিবাকরমনি কে। তাঁর লাল আলোকে উদ্ভাসিত দিগন্ত। সূর্য কে সাক্ষী রেখে সূচনা হল আর এক নতুন ভোরের, জীবন থেকে ঝরে পড়ল আর একটা দিন। মৃত্যুর দিকে এক পা এগোলাম নাকি পরমাত্মার সাথে মিলনের পথে এক পা এগোলাম তা জানি না, তবে এটুকু জানি বর্তমান কে কেন্দ্র করেই বেঁচে থাকার নামই জীবন। তাই এখন কুম্ভমেলায় স্নানই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য, সে কথাই আমরা এখন ভাবব। সূর্য দেবতার উদ্দেশ্যে প্রনাম জানাই-
“ওঁ জবাকুসুম শঙ্কাশং,
কাশ্যপেয়ং মহাদূত্যিম।
ধ্বন্তারিং সর্বপাপঘ্ন,
প্রাণহতস্মি দিবাকরম।”