তীর্থে তীর্থে পথে পথে, গঙ্গোত্রী ধাম দর্শন (চতুর্থ পর্ব)

স্বামী প্রৌঢ়ানন্দ
আমাদের ভারত, ২৩ জানুয়ারি: লোকে লোকারণ্য লখনৌ স্টেশন চত্বর, তিল ধারণের জায়গা নেই। সবারই একই গন্তব্য কুম্ভমেলা, সবাই দুন এক্সপ্রেসের যাত্রী। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এসে পড়বে ট্রেন। যে যার ব্যাগপত্তর নিয়ে আগলে আছি। শুনেছি কুম্ভস্নানে শুধু সাধুরাই যান না, অনেক দুর্বৃত্ত শ্রেণির মানুষও যায়। যাই হোক এই দ্বিতীয় শ্রেণির লোকের হাতে পড়ে সর্বস্ব খোয়াতে আমরা একেবারেই রাজি নই।
অনেকে চাদরবিছিয়ে শুয়েআছেন, কেউ কেউ খাবার বের করে নৈশভোজ সারতে ব্যস্ত, আবারকোথাও কোথাও ভক্তরা সুর করে ভজন কীর্তন করছেন। এমন অবস্থা একটু হাঁটতে গেলেই কারোর গায়ে পা লাগছে, তাই এক জায়গায় চুপ করে বসে থাকাই শ্রেয় ভাবলাম। এখন প্রায় সন্ধ্যা সাতটা বাজে। ট্রেন ঢুকবে আরও ঘন্টা খানেক পর।এখানেই তাই আমরা নৈশভোজ সেরে নেব মনস্থ করে প্লাটফর্মের দোকান থেকে কেনা লুচি আর আলুর দম বের করে ফেললাম। অমরদা সবে একটা লুচি আর আলুর দম মুখে পরেছে ঠিক সেই সময় হন্তদন্ত হয়ে আসা এক যাত্রীর ধাক্কায় লুচি আর আলুর দম প্রপাতধরনীতল। উল্টো দিক থেকে আসা আর এক যাত্রীর পা তার উপর পড়ে পিছলে গিয়ে সোজা আমার উপর। তাঁর ধাক্কা সামলাতে না পেরে আমিও গিয়ে পড়লাম এক বিশাল দেহী ব্যক্তির উপর। সে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা, সবাই মিলে যেন গড়াগড়ি খাচ্ছি। যাই হোক খানিকটা পরে সবাই নিজেদের সামলে নিয়ে উঠে পড়লাম। জামাকাপড়ের অবস্থা আর কহতব্য নয়, প্লাটফর্মের নোংরা ধুলো লেগে সাদা জামার রঙ কালো হয়ে গেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ঘটনা যেটা হল সেটা সবারই অল্প বিস্তর আঘাত লেগেছে কিন্তু কারো তার জন্য রাগ নেই, উপরন্তু সবাই সবার কাছে ক্ষমা চাইছে। ঠিকই তো আমরা তো সবাই মহাকুম্ভের যাত্রী, তাই সাধারণ দুঃখ, কষ্ট,রাগ, অভিমান সব পথের ধুলোয় ত্যাগ করে এসেছি।পথের ধুলোকেই যখন সাথী করেছি তখন পরিধানের ধুলোতে আর ভয় কিসের।

অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হল। দুন এক্সপ্রেস প্রবেশ করল স্টেশনে। ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকতেই যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেল। জন স্রোত ঠেলে সবাই তাদের নির্দিষ্ট কামরার দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে। দুই বিপরীত মুখী স্রোতের ঠেলায় আমাদের’ন যযৌ ন তস্হৌ ‘ অবস্থা।তারি মাঝে ভিড় টেলে এগোতে গিয়ে অমরদার চটির ফিতে গেল ছিড়ে। আমার দুহাতে বড় দুটি লাগেজ, যা অবস্থা তাতে যে লাগেজ ফেলে অমরদার চটি তুলব সে উপায় নেই। শেষমেশ ঠাকুর মশাই কোনও রকমে নীচু হয়ে চটিটি তুলে বগলদাবা করলেন। রনবিধ্বস্ত হয়ে কোনও রকমে যখন ট্রেনের কামরায় উঠলাম, তখন ট্রেন ছাড়তে আর কয়েক মিনিট বাকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *