
স্বরূপ দত্ত, আমাদের ভারত, উত্তর দিনাজপুর, ২৫ মে: “বড় হয়ে নার্স হওয়ার ইচ্ছে ছিল মেয়ের। কিন্তু সেই ইচ্ছে আর পূরণ হলো না।” করুণঘন কন্ঠে আক্ষেপ কালিয়াগঞ্জের সাহেবঘাটার গাঙ্গোয়া গ্রামের নিহত মেয়েটির মায়ের।
বুধবার প্রকাশিত হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল। আর সেখানে ২৪৩ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে কালিয়াগঞ্জের গাঙ্গোয়া গ্রামের নাবালিকা ছাত্রী। যার মৃত্যুতে তোলপাড় হয়েছিলো গোটা রাজ্য। দফায় দফায় উত্তেজনা, সংঘর্ষ, ভাঙ্গচুর চলেছিলো কালিয়াগঞ্জে। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত, গ্রামটিও এখন নিরব। শুধু সমাধির নিচে শায়িত রয়েছে সেই নাবলিকার মৃতদেহ। মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলেও আনন্দ এবং উচ্ছ্বাস নেই পরিবারের মধ্যে, রয়েছে শুধু বিষাদের ছাপ।
নাবালিকার মা অশ্রুভেজা কন্ঠে বলেন, “মেয়ে পড়াশোনায় খুবই ভালো ছিল। ইচ্ছে ছিল মানুষের মত মানুষ হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। মেয়ের ইচ্ছে ছিল যে সে একজন নার্স হবে। উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট দেখে খুবই দুঃখ হচ্ছে, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আফসোস সেই আশা আর পূর্ণ হল না। যদি আজ মেয়ে বেঁচে থাকতো তাহলে রেজাল্ট দেখে কত আনন্দ পেত। দোষীদের চরম শাস্তি চাই। সিবিআই তদন্ত চাই।”
ইতিমধ্যেই ওই নাবালিকার মৃত্যুর তদন্তে শিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এমনকি দরকারে মৃতদেহ তুলতেও পারবে তদন্তকারী দল। এতকিছুর মধ্যেও মেয়েটির উচ্চ মাধ্যমিকের সফলতার পরও বিষাদের সুর গ্রামজুড়ে।
রতন বর্মন নামে এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, “ছোটবেলা থেকেই মেয়েটি পড়াশোনায় ভালো ছিল। মাধ্যমিকেও রেজাল্ট ভালো করেছে। উচ্চমাধ্যমিকেও ভালো ফল করেছে। কিন্তু মেয়েটাই তো নাই, রেজাল্ট নিয়ে আর কি হবে? বলার ভাষা নেই। শুনেছি সিট গঠন করেছে। কিন্তু কই? কি যে হচ্ছে?” তদন্ত তাড়াতাড়ি হোক এটাই আশা গ্রামবাসীদের।
অপরদিকে, সাহেবঘাটা এনএন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আখতার হোসেইন বলেন, “মেয়েটি ভালো রেজাল্ট করেছে। ক্লাস ফাইভ থেকেই ভাল ছাত্রী ছিল। খেলাধূলাতেও ভালো ছিল। আচার-আচরণেও ভালোই ছিল। মেয়েটি আজ নেই, খুব খারাপ লাগছে। আমরা বাকরুদ্ধ।”
মেয়েটির স্বপ্ন পূরণ হল না। এই আক্ষেপেই দিন কাটাচ্ছে নাবালিকার পরিবারের সদস্যরা। তাদের একটাই আশা, যে যারা প্রকৃত দোষী তাদের চরমতম শাস্তি হোক। আর এই আশাতেই বুক বাঁধছে নাবালিকার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা। এখন কবে তদন্ত শেষে প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাবে সেটা সময়ের অপেক্ষা।