পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ালো গোলাড় সুশীলা বিদ্যাপীঠ

আমাদের ভারত, কলকাতা, ২০ মে: করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সঙ্কটকালে পরিযায়ী শ্রমিকের অস্থায়ী ক্যাম্পে ত্রাণ পৌঁছে দিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের গোলাড় সুশীলা বিদ্যাপীঠের শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীরা।

বুধবার সকালে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির মধ্যেই বিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক চাল, ডাল, তেল, মশলা, এক পেটি ডিম মাংস, সাবান, মাস্ক, আলু নিয়ে ৩টি মোটরসাইকেলে পৌঁছে যান শুকনাস শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে। বাঁশ দিয়ে ঘেরা শুকনাস শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে জন সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। ভিতরে ঘরবন্দি ১০ জন পরিযায়ী শ্রমিক। এঁরা উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্মৌ থেকে ওরা বাড়ি এসেছেন। কিন্তু বাড়িতে থাকার জায়গা নেই। শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে একপ্রকার বেসরকারিভাবে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন শ্রমিরা। লক্ষ্মৌ থেকে নিজ খরচে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। যা সম্বল ছিল, তাও শেষ।কয়েক রাত্রি রাস্তায় কেটেছে, প্রায় বিনা আহারে। সঞ্জয় ভুঁইঞা, শিশির ভুঁইঞা, প্রশান্ত ভুঁইঞা, শ্রীমন্ত দলই, তাপস দোলই, অলীপ দলবেরা সহ দশ জন শ্রমিকদের। আপাতত নিজেদের পরিবার ও অন্যান্য গ্রামবাসীদের কাছ থেকে আসা রসদে কোনক্রমেই দিন কাটছে ওঁদের। ঝড় জল মাথায় করে শিক্ষকদের উপস্থিত হতে দেখে অবাক হন শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা শিক্ষকদের বলেন, “জল ঝড়ে, কি করে এলেন স্যার, ইচ্ছে হলেও আমরা আপনাদের বসতে দিতেও পারবো না, আমরাও তো কোয়ারেন্টাইনে থাকা পরিযায়ী শ্রমিক। আমরা খুব খুশি, আপনারা এসেছেন। আপনাদের দেওয়া সামগ্রীতে আশাকরি আমাদের ১৪ দিন চলে যাবে। এতদিন ভাত ডাল জুটে গেলে মহা আনন্দে খেতাম। আজ মাংস নিয়ে এসেছেন, আজ মনে হচ্ছে নতুন করে বাঁচবো। আমাদের সমাজ, আমাদের বিদ্যালয় আমাদের ভুলে যায়নি। এটাই আমাদের বড় পাওনা।”

প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকরা তাঁদের জানান, তাঁরা আপাতত কিছু দিয়ে গেলেন এবং পরে প্রয়োজনে আরও কিছু দেবেন।বিদ্যালয়ের তরফে প্রধান শিক্ষকের ফোন নম্বর শ্রমিকদের দেওয়া হয় এবং জানানো হয় প্রয়োজন হলে যেন শ্রমিকরা তাঁদের ফোন করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরেশ চন্দ্র পড়িয়া বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সংকটকালে অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে আমরা সহকর্মীরা সবাই অনুদান দিয়ে একটা তহবিল গঠন করেছিলাম, সেখান থেকেই সাধ্যের মধ্যে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করলাম। এর আগে বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকার দুশোর কাছাকাছি পরিবারকে আমাদের সহকর্মীদের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হয়েছে, আগামীদিনেও আমরা সাধ্যমত অসহায়দের পাশে থাকব।”

গোলাড় সুশীলা বিদ্যাপীঠের পক্ষ থেকে এদিন ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরেশ চন্দ্র পড়িয়া, শিক্ষক সৌমিত্র কুলধ্যায়, মধুসূদন মাল, জয়ন্ত পন্ডিত, জিতেন্দ্রনাথ শী, গোপীনাথ কুলোধ্যায়, দীনবন্ধু দোলুই, স্বপন দিগার, পূর্ণিমা দোলুই প্রমুখ শিক্ষক- শিক্ষিকা- শিক্ষাকর্মীগণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *