রাজেন রায়, কলকাতা, ২৪ জুন: পরনে শুধু অন্তর্বাস। অনাবৃত উর্ধাঙ্গ। মুখে গান,‘লায়লা ম্যায় লায়লা, লায়লা’। হাতে মদের বোতল। পুরুষ হৃদয় জ্বালিয়ে দেওয়ার সমস্ত উপকরণ মজুত। কোমর বাঁকিয়ে শরীর জুড়ে হিল্লোল তুলে প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে পুরুষদের কামাতুর নজর।
না, কোনও ড্যান্সিং বার বা রেস্তোরাঁর ঘটনা নয়। মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনা ঘটল কলকাতার বুকে থাকা রেড রোডে। মঙ্গলবার রাতে সেই মদ্যপ অর্ধনগ্ন তরুণীর কার্যকলাপে কার্যত কালঘাম ছোটে পুলিশের। তাকে বাগে আনতে গিয়ে উলটে ঠাটিয়ে চড় খেতে হল পুলিশকেই। শেষ পর্যন্ত প্রায় ৬টি ভ্যান পুলিশ নিয়ে এসে কোনওরকমে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয় ওই তরুণীকে।
পুলিশ জানিয়েছে, বালিগঞ্জের পদ্মপুকুর রোডের বাসিন্দা ওই তরুণী এবং এক পুরুষ বন্ধু রাতে রেড রোডের ধারে বসে মদ্যপান করছিলেন। আচমকা অতিরিক্ত মদ্যপান করতে করতে বেসামাল হয়ে পড়েন ওই তরুণী। জামা কাপড় খুলে উন্মত্ত নৃত্য শুরু করেন। অনেক বুঝিয়েও সামলাতে না পেরে সঙ্গী ওই যুবক চম্পট দেন। রাতে রাস্তায় যাবার সময় অনেকেই সে দৃশ্য দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিলেন। অনেকে আবার ক্যামেরাবন্দিও করছিলেন। ইতিমধ্যে খিদিরপুর থেকে রাজাবাজারে ফিরছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি ওই তরুণীর অবস্থা দেখে গোটা বিষয়টি অনুধাবন করে ১১টা নাগাদ পুলিশকে খবর দেন।
প্রথমে পুলিশ জানতে পারে, ফোর্ট উইলিয়ামের দক্ষিণ দিকের গেটের কাছে দেখা গিয়েছে ওই তরুণীকে। কিন্তু সেখানে তাঁকে না পেয়ে শেষে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাঁর হদিশ মিলল মেয়ো এবং রেড রোডের সংযোগস্থলে পুলিশ মেমোরিয়াল স্ট্যাচুর কাছে। দেখেন তরুণীর পরনে নীল রংয়ের ট্রাউজার, কিন্তু উর্ধাঙ্গে কিছু নেই।
কিন্তু খুঁজে পেলেও তাকে বাগে আনতে রীতিমতো নাজেহাল হতে হয় পুলিশকর্মীদের। শেষমেশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করলে মহিলা কনস্টেবল-সহ ছ’টি পুলিশের গাড়ি পৌঁছায় রেড রোডে। এর মধ্যেই তাকে জামা দেওয়ার চেষ্টা করায় এক পুলিশকর্মীকে সপাটে চড় মেরে বসেন ওই মদ্যপ তরুণী। তারপর রীতিমতো লড়াই করে যুবতীকে গাড়িতে তোলেন মহিলা পুলিশ কর্মীরা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত ওই যুবতী বাড়ি না ফেরায় খোঁজ শুরু করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তখন জানতে পারেন, পাড়ারই এক যুবকের সঙ্গে বিকেলে দেখা গিয়েছে ওই যুবতীকে। ইতিমধ্যে বুধবার সকালের দিকে পুলিশের কাছে হাজির হন দুই যুবক। তাঁদের এক জন বোনের খোঁজ করছিলেন। শেষে ওই দুই যুবকের এক জন ওই যুবতীকে নিজের বোন বলে চিহ্নিত করেন।
জানা যায়, ২০১০ সালে ওই তরুণীর বাবা মারা গিয়েছেন। ভবানীপুর এলাকার ওই তরুণী একটি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়েছেন। মা-দাদার কাছে থাকেন। যুবতীর ভাই জানান, তাঁর দিদিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর সঙ্গে পুরুষ সঙ্গী কে ছিলেন এবং কেন ওই যুবক তাকে ছেড়ে পালিয়েছিলেন, তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে তরুণীর কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে কি না বা তার কোনও মানসিক সমস্যা আছে কি না, তাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।