রাইস মিলের জলে ক্ষতিগ্রস্ত ধান চাষিদের মাথায় হাত, খণ্ডঘোষ এলাকা পরিদর্শনে বিধায়ক

আমাদের ভারত, পূর্ব বর্ধমান, ২ ডিসেম্বর:
রাইস মিলের পরিত্যক্ত জলে পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ এলাকার শংকরপুর মৌজা, বলাবাটি মৌজা এবং আরিন মৌজা মিলিয়ে মোট তিনটি মৌজার প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ বিঘা ধান জমি জলে ডুবে গেছে। চাষিদের মাথায় হাত জমির ধান জলে ডুবে থাকার কারণে। বুধবার সকাল ১০ টা নাগাদ ওই তিন মৌজার চাষিরা বেশ কিছু রাইস মিলের গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে বলতে থাকেন, অবিলম্বে ধানের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

বিক্ষোভের খবর শুনে পূর্ব বর্ধমান জেলার যুব সভাপতি তথা জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলোক কুমার মাঝি বৃহস্পতিবার ছুটে আসেন এবং বিক্ষোভকারীদের সামাল দেন। অলোক কুমার মাঝি বলেন, রাইস মিলের পরিত্যক্ত জলে প্রায় বছরই অল্পবিস্তর চাষিদের জমির ধান ক্ষতি হয়। কিন্তু এই বছর অকাল বর্ষণের মত ক্ষতি হয়েছে এলাকার ধান জমির। চাষিরা কৈয়ড় গ্রাম পঞ্চায়েতে বিষয়টি লিখিত জানান এবং সেই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কৈয়ড় গ্রাম পঞ্চায়েত। এলাকায় ১৫ থেকে ২০ টি রাইস মিল আছে। তাদের পরিত্যক্ত জলেই এই অকাল বর্ষণের রূপ ধারণ করেছে এবং ফলস্বরূপ এলাকার চাষিদের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। রাইস মিলের পরিত্যক্ত জল নয়ানজুলির ওপর দিয়ে বয়ে যায়। কিন্তু নয়ানজুলি ভর্তি হয়ে থাকে রাইস মিলের আগরা ও পাঁশের জন্য। রাইস মিলের মালিকরা অধিকাংশ সময়ই নয়ানজুলি পরিষ্কার করে না। ফলস্বরূপ রাইস মিলের পরিত্যক্ত জল ধান জমির ওপর দিতে যেতে আরম্ভ করে। যদিও আজ বুধবার রাইস মিলের পক্ষ থেকে জেসিপি দিয়ে নয়ানজুলি পরিষ্কার করা হচ্ছে। বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা গোবিন্দভোগ ধান চাষ করেছিল। চাষিরা আবেদন করেছেন ক্ষতিপূরণের জন্য। বিষয়টি রাইস মিলের সঙ্গে আলোচনা করে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করব। বিক্ষোভকারী চাষিদের নিয়ে আলোক কুমার মাঝি ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলো পরিদর্শন করেন। সঙ্গে ছিলেন কৈয়ড় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শাজাহান মন্ডল, কৈয়ড় গ্রাম পঞ্চায়েতের যুব সভাপতি সৌগত হড় সহ অন্যান্যরা।

শংকরপুর গ্রামের চাষি জনার্দন চৌধুরী বলেন, প্রত্যেক বছর রাইস মিলের মালিকদের বলা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি রাইস মিল কর্তৃপক্ষ। এই বছর আমি ৮ বিঘা গোবিন্দভোগ ধান চাষ করেছি। সমস্ত জমিগুলি রাইস মিলের পরিতক্ত জলে ডুবে আছে। কৃষি লোন নিয়ে চাষ করেছিলাম। এমনিতেই অতিবৃষ্টি ও নিম্নচাপের ফলে বিভিন্ন রকম পোকার আক্রমণে অনেক বেশি টাকা খরচা হয়েছে বিঘা প্রতি। তার ওপর সরকারি লোন নিয়ে চাষ। কিভাবে সরকারি লোন শোধ করবো এবং আগামী দিনে বোরো চাষ করবো বুঝে উঠতে পারছি না। আমাদের চাষিদের একটাই দাবি, অবিলম্বে রাইস মিলের মালিকরা আমাদের ক্ষতিপূরণ দিক।

মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে জেলায় আলোচনা হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা ক্ষতিপূরণের দাবি করেছেন অনেক আগেই। চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে উনি বলেন, তদন্ত করে দেখার পর যদি রাইস মিলের পরিত্যক্ত জলে চাষিদের ক্ষতি হয় তবে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকারিভাবে কৃষি দপ্তর থেকেও প্রতি বছরই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের আর্থিক সাহায্য করা হয়।

খণ্ডঘোষ ব্লকের বিডিও সত্যজিৎ কুমার বলেন, রাইস মিলের মাধ্যমে এলাকা দূষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যেখানে সেখানে রাইস মিলের মালিকরা রাইস মিলের পাঁস ফেলে দিয়ে আসছেন রাস্তার ধারে। এ ব্যাপারে চাষিদের লিখিত আবেদনের ভিত্তিতেই বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে রাইস মিলের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খণ্ডঘোষ ব্লকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার ডক্টর অসীম কুমার ঘোষ বলেন, উক্ত বিষয়ে এখনও পর্যন্ত চাষিরা কোনও আবেদন করেননি। গত বছর এরকমই একটু ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছিল। ব্লকের আইডিও অফিসার আছেন উনার সঙ্গে আলোচনা করবো। রাইস মিল মিলিকদের নিয়ে আলোচনা করে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।

খণ্ডঘোষ ব্লকের ব্লক সভাপতি অপার্থিব ইসলাম বলেন, চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অবশ্যই ক্ষতিপূরণের দাবি থাকতে পারে চাষিদের। অন্যদিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থাৎ রাইস মিলের প্রয়োজন আছে এলাকার চাষিদের জন্য। চাষিদের উৎপাদিত ফসল ওই রাইস মিলে বিক্রি হয়। উভয়পক্ষকেই দরকার আমাদের। কিন্তু রাইস মিলের পরিতক্ত জলে জমির ধান নষ্ট হবে এটাও ঠিক নয়। পূর্ব বর্ধমান জেলার যুব সভাপতি তথা জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলক কুমার মাঝি যখন পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলেন চাষিদের কথা নিশ্চয়ই ভাববেন উনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *