হাঁসখালি কান্ডের পুনরাবৃত্তি রানাঘাটে, এক বধূকে জোর করে তুলে নিয়ে গণনির্যাতন

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ১১ আগস্ট: হাঁসখালি কান্ডের পর এবার রানাঘাট আনুলিয়ার সারদা পল্লীতে এক গৃহবধুকে গণধর্ষণ করে খুন করে ফেলে যাবার অভিযোগ উঠল। পাশাপাশি হাঁসখালি কান্ডের মত প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে রাতারাতি তার দেহ পুড়িয়ে ফেলারও অভিযোগ উঠছে।

মালতী চক্রবর্তী নামে ওই গৃহবধু কিছুদিন যাবৎ পায়রাডাঙ্গায় তার শশুর বাড়িতে থাকতেন না। সম্প্রতি তিনি রানাঘাটে তার বাপের বাড়িতে থাকতেন দুই সন্তান নিয়ে।মালতী দেবীর পরিবার অত্যন্ত গরিব। সন্তানদের পড়াশোনা করানোর জন্য তিনি রান্নার কাজ করতেন। অভিযোগ কয়েকদিন আগে বাবুসোনা নামে এক ব্যক্তি তাকে বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দিয়ে যায় প্রাণে মেরে ফেলবে বলে। অভিযোগ, গত শনিবার সেই বাবুসোনা ওই মহিলাকে প্রায় জোর করে টেনে নিয়ে যায়। এরপর আরও কয়েকজন মিলে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। রাতে তাকে বাড়ির সামনে ফেলে দিয়ে যায়। গতকাল কল্যাণী হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর রাতারাতি তার দেহ দাহ করা হয়।

এই খবর আস্তে আস্তে আজ চাউর হতেই খবর পেয়ে ছুটে আসেন রাজ্য বিজেপি নেত্রী অর্চনা মজুমদার সহ রানাঘাট উত্তর পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ সারথী চ্যাটার্জি সহ বিজেপির একাধিক নেতা কর্মীরা। বিজেপি নেতৃতের দাবি, হাঁসখালি কান্ড এবার রানাঘাটে। আমরা দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি জানাচ্ছি। তারা এও জানান এর মধ্যে শাসক দলের কেউ জড়িত আছে কিনা তার তদন্ত করতে রানাঘাট থানায় তারা একটি অভিযোগ করবেন।

অন্যদিকে আজ এখবর শোনা মাত্র ছুটে আসে আনুলিয়া পঞ্চায়েত প্রধান শম্পা বিশ্বাস সহ তৃণমূলের জেলা নেত্রী বর্নালী দে সহ একাধিক কর্মীরা। তারাও এই ঘটনার সাথে যারা যুক্ত তার উপযুক্ত শাস্তির দাবী করছেন। এককথায় নির্মম ঘটনার নিন্দায় সরব সকলেই।

রানাঘাট থানার পুলিশের ভুমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিজেপি নেত্রী ড: অর্চনা মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমার কাছে খবর আছে একটা মেয়েকে গণধর্ষণ করে বাড়িতে ফেলে দিয়ে আসা হয়েছে। এরপর ওইদিনই প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে রাতারাতি শব দাহ করা হয়েছে। মেয়েটি ৩-৪ দিন পর মারা গেছে। পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে মার্ডার কেস বা রেপ কেসের কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। আমরা যখন এই ঘটনার প্রতিবাদ শুরু করলাম তারপরে আইসি এবং তার টিম এই বাড়িতে প্রথম এলেন। গত ৬ দিন আগে ঘটনাটা ঘটেছে। কোনও জবানবন্দী নেই, কোনও লিখিত অভিযোগ নেই। উল্টে রোড অ্যাকসিডেন্ট বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যে মেয়েটিকে বাড়িতে ফেলে দিয়ে আসার পর হাসপাতালে ভর্তির পর মারা যায় তার মাথায় গভীর ক্ষত ছিল। মেয়েটি ধর্ষণের আগে হয়তো প্রতিবাদ করেছিল, তাই হয়তো ধর্ষকেরা তাকে কোনও কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করেছিল। এর ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সে মারা যায়।

বাবুসোনা নামে একজন ব্যক্তি কয়েক দিন আগে বন্দুক দিয়ে মারবেন বলে হুমকি দিয়ে যায়। এরপর ঘটনার দিনে দু’ঘণ্টা আগে সেই বাবুসোনা ওই মহিলাকে প্রায় জোর করে টেনে নিয়ে যায় এবং তার দলবলই তাকে বাইকে করে ফেলে দিয়ে যায় বলে আমাদের সন্দেহ। আমরা যে সন্দেহ করছি যে মেয়েটা গণধর্ষণের শিকার হয়েছে সেটা অবশ্যই ময়নাতদন্তের পরই জানা যাবে। অবশ্য বাংলার পোস্টমর্টম রিপোর্ট বাংলার ডাক্তার, সুপার স্পেশালিস্ট এসএসকেএম হাসপাতাল তারা যে ভুল রিপোর্ট দিচ্ছে সেটা আমার বলার অপেক্ষা রাখে না। এই যে মার্ডার বা গণধর্ষণ আদৌ পোস্টমর্টেমে উঠে আসবে কিনা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারণ দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এখন শাসকদলের একটা প্রবণতা যে সত্যকে ধামাচাপা দেওয়া। দোষীদের সাজা না দেওয়া আজকের দিনে অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *