পূর্ববঙ্গে হিন্দু স্মৃতি সাপ্তাহিক বিশেষ সাক্ষাৎকার ৫- “ব্যাপক হিন্দুনিধন হল, মা-বোনদের ওপর অত্যাচার হল, স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হতে পারে, ভাবতে পারিনি,”— শাহরিয়ার কবির

“আমরা বাঙালিদের উপর ধর্মের নামে ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানের শোষণ- পীড়ন-বঞ্চনার বীভৎস নগ্ন রূপ প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করেছি।”
“১৯৬৪ সালে কাশ্মীরের কোনও মসজিদ থেকে মহানবী মুহম্মদের একগাছি চুল কারা চুরি করেছে- এ নিয়ে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর সরকারের সমর্থক সাম্প্রদায়িক গুণ্ডারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল”
“একই ঘটনা ঘটেছিল সাধনা ঔষধালয়ের যোগেশচন্দ্র ঘোষের ক্ষেত্রে। ১৯৭১-এর ৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যরা রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে, তার পর গুলি করে মেরে ফেলেছিল তাঁকে।”
“২০০১-এর ১ অক্টোবর ভোট হল বাংলাদেশে। ব্যাপক হিন্দুনিধন হল। লুন্ঠন, মা-বোনদের ওপর অত্যাচার হল। হিন্দুদের ভোটদানে বাধা দেওয়া হল। নির্বাচনের পর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের কারণে হাজার হাজার হিন্দু সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গিয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হতে পারে, ভাবতে পারিনি।”

____________________________________
(শাহরিয়ার কবির লেখক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা। ১৯৭১-এর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯২-এ গঠিত মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সামাজিক সংগঠন ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান সভাপতি। ‘সাউথ এশিয়ান পিপলস ইউনিয়ন এগেনস্ট ফাণ্ডামেন্টালিজম অ্যান্ড কমিউনালিজম’-এর অন্যতম প্রাণপুরুষ। তিনি মানবাধিকার, সাম্যবাদ, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, বাঙালির ইতিহাস এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ১০০টিরও বেশি বই লিখেছেন। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার সহ বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত মানবাধিকার নেতা। ১২ এপ্রিল, ২০২৩ লেখকের কলকাতা ভ্রমণকালে নিম্নোক্ত সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয়।)
—————————————————————

অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ১৪ মে: প্রশ্ন ১. আপনার জন্ম কবে, কোথায়? শৈশবের হিন্দু বন্ধুদের কথা মনে পড়ে?

উত্তর: আমার জন্ম ১৯৫০ সালে, ঢাকায়। হ্যাঁ, মনে পড়ে। স্কুলে অনেক হিন্দু সহপাঠী পেয়েছিলাম, যাদের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। ১৯৬৪-র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তাদের অনেকে দেশ ত্যাগ করেছে। অনেক খুঁজেও শেষ পর্যন্ত বাল্যবন্ধু শেখরকে আর পাইনি। আমার স্কুলজীবনের কথা লিখেছি ‘সাধু গ্রেগরির দিনগুলি’-তে। শৈশবে সত্যিই কখনও সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি দেখিনি। ১৯৬৪-র দাঙ্গা আমার জীবনে একটা বড় ক্ষত। সেবার ক’দিনের জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। স্কুল খোলার পর সহপাঠী বন্ধু শঙ্করলাল, রতন ঘোষ, বিজন দাস, মৃণাল কান্তি, শেখর রঞ্জন দাশগুপ্ত- এদের হদিশ পেলাম না। ওরা পরিবারের সঙ্গে ভারতে চলে এসেছিল। পরে ’৭১-এ টালিগঞ্জে বিজন আর বর্ধমানে রতনের সঙ্গে দেখা হয়। শেখরের খোঁজ কিছুতেই পাইনি। ওর বাবা ছিলেন ডাক্তার। সংস্কৃতিমনা ভাল পরিবার। ওর বোন ইন্দ্রানী। আনন্দবাজার পত্রিকাতে শেখরের সন্ধান জানতে বিজ্ঞাপনও দিয়েছিলাম। কে জানে, হয়ত ভিটেত্যাগে বাধ্য হওয়ার অভিমানে ও আমাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি!

প্রশ্ন ২. ওই দাঙ্গায় আর কী অনুভব করেছিলেন?

উত্তর: অনুভব করেছিলাম একটা দাঙ্গা কীভাবে মানুষকে আতঙ্কিত ও অসহায় করে তোলে। স্কুলে এস আর সরকার স্যার, নলিনী স্যার, বি জি চৌধুরী স্যার- এঁদের নামে আমরা থরহরি কাঁপতাম। এঁরা ধুতি পাঞ্জাবি পরতেন। ’৬৪-র দাঙ্গায় সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল খোলার পর এসে দেখলাম ওঁরা ধুতির বদলে পায়জামা পরেছেন। তাঁদের অসহায়তায় প্রচণ্ডভাবে বিচলিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। স্কুলের কাছেই থাকতেন নলিনী স্যার। তিনি দাঙ্গার সময় প্রাণের ভয়ে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন একদিন আমি দেখা করতে গেলাম। আমাকে ৫ টাকা দিয়ে অনুরোধ করলেন স্ত্রী-সন্তানদের জন্য একটু বাজার করে দিয়ে আসতে। আমি টাকাটা নিইনি, বাজার করে স্যারের বাড়িতে দিয়ে এসেছিলাম। এই ঘটনার উল্লেখ আমার ‘আলোয় পাখিরা’ উপন্যাসে আছে।

প্রশ্ন ৩. শৈশবের সেই দাঙ্গায় হিন্দুদের অসহায়তার আর কোনও স্মৃতি আছে?

উত্তর: আমার বাবা পুলিশের আইবি-তে কাজ করতেন। তখন বালিয়াটির জমিদারদের এক অধিগ্রহণ করা বাড়িতে আমরা থাকতাম। বাড়িতেই হরি গোয়ালা দুধ দিয়ে যেতেন। ওঁর বেশ ক’টি গরু ছিল। একদিন উনি একটি গরু বাবার কাছে এনে বিক্রির ইচ্ছে প্রকাশ করলেন। আমাদের গরুর প্রয়োজন ছিল না। হরি গোয়ালা নাছোড়বান্দা। কারণ তিনি ইণ্ডিয়াতে চলে আসবেন। কালীকে তিনি নিজের সন্তানের মতো লালন করেছেন। শেষ পর্যন্ত সেই গাই ‘কালী’ থেকে গেল আমাদের বাড়িতে। পরে ওর বাচ্চা হল। নাম লালী। বিশালাকার সেই ষাঁড়কে ’৭১-এ পাকিস্তানিরা মেরে ফেলেছিল। শৈশবে এসব ঘটনাও দাগ ফেলেছিল আমার মনে।

প্রশ্ন ৪. সেই প্রভাব আপনার কাজে কতটা প্রতিফলিত হয়েছিল?

উত্তর: ১৯৬৪ সালে কাশ্মীরের কোনও মসজিদ থেকে মহানবী মুহম্মদের একগাছি চুল কারা চুরি করেছে- এ নিয়ে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর সরকারের সমর্থক সাম্প্রদায়িক গুণ্ডারা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল- আমার শৈশব অত্যন্ত বেদনায়ক এই অভিজ্ঞতা শুধু গল্পে বা উপন্যাসে নয়, পরে অনেক ধরনের গদ্য রচনায়ও এসেছে। আমার স্কুল জীবনের স্মৃতি “সাধু গ্রেগরির দিনগুলি”তেও এর বর্ণনা আছে।

কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই ’৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে আমি লিখেছি, ‘৬৫ সালের যুদ্ধের বিরুদ্ধে লিখেছি, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে ‘মিছিলের একজন’-এর মতো গল্পও লিখেছি। এসব সামাজিক সংঘাত বা রাজনৈতিক বিষয় যে শিশু-কিশোর সাহিত্যের উপজীব্য হতে পারে- আমাদের আগে কেউ এমনটি ভাবেননি। আমাদের জন্য এসব লেখা সহজ ছিল। প্রথমত: আমরা সদ্য কৈশোর অতিক্রম করেছি, যে বয়সটা ছিল বিদ্রোহের এবং দ্বিতীয়ত: আমরা বাঙালিদের উপর ধর্মের নামে ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানের শোষণ- পীড়ন-বঞ্চনার বীভৎস নগ্ন রূপ প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করেছি।

প্রশ্ন ৫. এই সাম্প্রদায়িক বিষয়টা আপনার পরিবারে কতটা মাত্রা পেয়েছিল?

উত্তর: শৈশবের অনেকটা সময় আমি যৌথ পরিবারে কাটিয়েছি। জেঠতুতো বড়দা কমিউনিস্ট পার্টি করতেন। তার প্রভাবে আমাদের পরিবারে এক ধরনের রাজনৈতিক সচেতনতা ও প্রগতিশীলতার চর্চা ছিল। কারও ভেতর কোনও রকমের ধর্মীয় গোঁড়ামি বা সাম্প্রদায়িক মনোভাব ছিল না। ’৬০-এর দশকের শুরুতে সামরিক শাসন বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সাংস্কৃতিক আন্দোলন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের সামরিক সরকার বাংলাদেশে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী উদযাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। যার প্রতিবাদে সচেতন বাঙালি সমাজ বিক্ষোভ করেছিল। ১৯৬৬-তে শেখ মুজিব যে ছ’দফা দাবি পেশ করেছিলেন, তাতে বাঙালির অধিকার প্রাধান্য পেয়েছিল। স্বাধিকারের দাবিতে ধর্মনির্বিশেষ সব বাঙালি এক হয়ে আমরা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেমেছিলাম। পাক সরকার রবীন্দ্র জয়ন্তী নিষিদ্ধ করলেও আমরা ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে তার বিরোধিতা করেছিলাম। ১৯৬১ সাল থেকে এদেশে রবীন্দ্রচর্চা ক্রমশঃ বেড়েছে। পরিবারেও এর প্রতিফলন ছিল।

প্রশ্ন ৬. ’৭১-এর দাঙ্গা সম্পর্কে আপনার অভিমত?

উত্তর: দাঙ্গা হয় দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভেতর। ’৭১-এ কোনও দাঙ্গা হয়নি। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ধর্ম-নির্বিশেষে বাঙালি এবং নির্দিষ্টভাবে হিন্দুদের হত্যা করেছে। যেটাকে আমরা বলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সংঘটিত সবচেয়ে পরিকল্পিত ও ভয়াবহ গণহত্যা বা ‘জেনোসাইড’। ’৭১-এ কিন্তু হিন্দুর চেয়ে বাংলাদেশে মুসলিম বেশি নিহত হয়েছে। কারণ বেশির ভাগ হিন্দু ভারতে চলে এসেছিল। সে সময় ভারতে যে ১ কোটি শরণার্থী এসেছিল, তার ভেতর ৭২ লক্ষ ছিল হিন্দু, ২৮ লক্ষ মুসলিম। আমাদের স্কুলের গাঙ্গুলি স্যার সপরিবারে কলকাতায় চলে আসেন। ভুগোল আর গানের শিক্ষক ছিলেন নিখিল সূত্রধর। তাঁকে এবং আরও দুই হিন্দু শিক্ষককে পাকিস্তানিরা মেরে ফেলে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও বহু হিন্দু শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারী মুক্তিযুদ্ধকালে নিহত হয়েছেন। অবিভক্ত বাংলার মস্ত বড় দানবীর ছিলেন রণদাপ্রসাদ সাহা। টাঙ্গাইলে স্কুল, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা সহ সমাজসেবায় অনেক কাজ করেছিলেন। তাঁকে পাক সেনারা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেল। পূর্ব পাকিস্তানে তাঁর অনেক গুণগ্রাহী ছিল। ‘ছায়ানট’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ‘ন্যাপ’-এর কোষাধ্যক্ষ সাইদুল হাসান তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য সেনাছাউনিতে গেলেন। দু’জনের কেউ ফিরে আসেননি।

একই ঘটনা ঘটেছিল সাধনা ঔষধালয়ের যোগেশচন্দ্র ঘোষের ক্ষেত্রে। ১৯৭১-এর ৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যরা রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে, তার পর গুলি করে মেরে ফেলেছিল তাঁকে। লুট হল তাঁর বাড়ি, কারখানা। সেই যোগেশচন্দ্র, যিনি ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আয়ুর্বেদিক ওষুধের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ‘সাধনা ঔষধালয়’। বাঙালির মেধা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা, উদ্যোগী মানসিকতা এবং সফল ব্যবসায়িক প্রচেষ্টার প্রায়-বিস্মৃত ইতিহাসের সাক্ষী সাধনা ঔষধালয়।
চট্টগ্রামের কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নতুনচন্দ্র সিংহর কথাই ধরুন। পাক সেনারা যখন তাঁর গ্রামে ঢুকল গ্রামবাসীদের অনেকে ওদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিল। অনেক দরিদ্র মুসলিম ছাত্র তার অর্থে লেখাপড়া করত। ৮৫ বছরের বৃদ্ধা নতুনচন্দ্র তখন কুণ্ডেশ্বরীর মন্দিরে পুজো করছিলেন। গ্রামবাসীদের কথায় পাক বাহিনী ফিরে আসতে উদ্যত হয়। কিন্তু পাক সেনাদের পথপ্রদর্শক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী হুমকি দিয়ে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে বলেন, নতুনচন্দ্রকে হত্যা করতেই হবে। নাহলে ওপর মহলে অভিযোগ যাবে। তাঁকে ওরকম নৃশংসভাবে খুন করা হতে পারে, তা কেউ ভাবতেও পারেননি। পরে ২০১৩ সালে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারে সালাউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড হয়।

প্রশ্ন ৭. আপনার বেড়ে ওঠার সময়কালে প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান, পরে সদ্যসৃষ্ট বাংলাদেশ থেকে ক্রমাগত হিন্দুরা দেশান্তরী হয়েছে। সাম্প্রদায়িক এই পরিস্থিতি উন্নত করতে কতটা সক্রিয় হয়েছিলেন?

উত্তর: দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ’৭২-এ যে সংবিধান হল, তাতে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার চেতনা সংবিধান থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হল। এটা মেনে নিতে পারিনি। কারণ, কেবল একটা ভূখণ্ড বা পতাকা পাওয়ার জন্য তো আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি! একটা আদর্শ ছিল আমাদের। একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। তখন থেকে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে অনেক বই লিখেছি, সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। ১৯৯২ সালে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ করেছি। যার শতাধিক শাখা রয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে।

২০০১-এর ১ অক্টোবর ভোট হল বাংলাদেশে। ব্যাপক হিন্দুনিধন হল। লুন্ঠন, মা-বোনদের ওপর অত্যাচার হল। হিন্দুদের ভোটদানে বাধা দেওয়া হল। নির্বাচনের পর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের কারণে হাজার হাজার হিন্দু সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গিয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হতে পারে, ভাবতে পারিনি। স্থানীয় দুটি দৈনিকে স্বনামে কলম লিখতাম। এর বিরুদ্ধে শুধু লেখালেখি নয়, সাংগঠনিক ভাবেও জোরালো প্রতিবাদ করেছি। এসব কারণে বিএনপি-জামায়াতের রাজত্বে বার বার জেল খাটতে হয়েছে। কয়েকবার হত্যার চেষ্টাও হয়েছে, কোনওরকমে প্রাণে বেঁচেছি।

প্রশ্ন ৮. ২০০১-এ ভারতে লোকসভা ভোটে জিতে ক্ষমতায় এল বিজেপি। তারা এবং পশ্চিমবঙ্গের সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্রে এই হিন্দু নির্যাতন নিয়ে কতটা সরব হয়েছিল?

উত্তর: ২০০১-এর নির্বাচনের আগে ও পরে বাংলাদেশে হাজার হাজার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল। হত্যা, নির্যাতন, নারীধর্ষণ, লুণ্ঠন, গৃহে অগ্নিসংযোগ কিছুই বাকি ছিল না। হাজার হাজার হিন্দু প্রতিদিন দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাচ্ছিল। পরিস্থিতি দেখতে ২০০১-এর ২২ অক্টোবর আমি ভারতে এসেছিলাম। ২০০১ সালের জুনে ঢাকায় আমরা গঠন করেছিলাম ‘মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন’। ভারতের লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার পিএ সাংমা ছিলেন আমাদের অন্যতম সভাপতি। পি এ সাংমা আমাকে ভাল চিনতেন। তাঁকে বললাম, বাংলাদেশের হিন্দুরা কী পরিস্থিতিতে দেশ ত্যাগ করছেন এ নিয়ে আমি লিখতে চাই। তখন কলকাতার দূরদর্শন-এ ‘খাস খবর’ প্রচার করতেন রমেশ গান্ধী। যেখানে বাংলাদেশ থেকে আসা ভুক্তভোগীদের কথা থাকত। সাংমা রমেশ গান্ধীকে বললেন আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবার জন্য। টানা বেশ কিছুদিন বসিরহাট-বনগাঁ সহ সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আমি ও ‘খাস খবর’-এর আলোকচিত্রী গোটা পরিস্থিতি দেখলাম। ভুক্তভোগী বহু মানুষের সঙ্গে কথা ক্যামেরায় ধারণ করলাম। প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসা লোকজন ভয়ে মুখ খুলতে চায়নি। কারণ, তারা এদেশে ছিল অনাহুত। আমি লিখলাম, ভারত সরকারের উচিত এদের রিফিউজি হিসাবে চিহ্নিত করা। মানুষকে বাঁচাতে হবে। কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করলাম। টাইমস অফ ইণ্ডিয়া তিন কলম খবর করল। আমি বলেছিলাম, এক মাসে তিরিশ হাজারেরও বেশি হিন্দু ভারতে চলে এসেছেন। তৎকালীন বিজেপি সরকারের মুখপাত্র আমার এসব পরিসংখ্যানের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। কেন্দ্রের বিজেপি এবং এ রাজ্যের বাম সরকার- কেউ আমার বক্তব্যকে তখন সমর্থন করেনি। পরে অবশ্য তাদের বোধদয় হয়েছে। ততদিনে প্রায় লক্ষাধিক হিন্দু পরিবার ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছিল।

প্রশ্ন ৯. তার পর তো বোধহয় দেশে ফিরেই গ্রেফতার হয়ে গেলেন?

উত্তর: হ্যাঁ, বিএনপি-জামায়াত মিলে আমাকে গুম করে ফেলার মতলবে ছিল। দেশে ফেরার আগের দিনই সাংমা আমাকে খবর দিলেন, ঢাকায় ফেরা স্থগিত রাখতে। কারণ, ফিরলেই আমাকে গ্রেফতার করা হবে। আমি রাজি হলাম না। বরং ঢাকায় পরিচিত সাংবাদিকদের বললাম নির্দিষ্ট সময়ে বিমানবন্দরে চলে আসতে। আমি বিমানবন্দরে পৌঁছোনোর পর সাংবাদিকদের অত সমাবেশ দেখে পুলিশও ধন্দে পড়ে গেল। দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও যখন আমাকে ছাড়ছেও না, গ্রেফতারও করছে না, আমি চেঁচামেচি শুরু করলাম। শেষ পর্যন্ত মধ্যরাতে আমাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু হল। দশ বছরেও এই মামলায় পুলিশ চার্জশিট দাখিল করতে পারেনি। পরে উচ্চতর আদালত এই মামলা বানোয়াট বলে খারিজ করে দেয়।

প্রশ্ন ১০. এর পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে কীভাবে, কতটা সক্রিয় হওয়ার অবকাশ হয়েছিল?

উত্তর: জেল থেকে বেরুবার পরও বিভিন্ন দৈনিকে অবিরাম লিখেছি। এক ডজনের ওপর বই লিখেছি। কোথাও সাম্প্রদায়িক হামলার কোনও ঘটনা ঘটলে উপদ্রুত এলাকায় গিয়েছি। নির্যাতিতদের যতদূর সম্ভব সহযোগিতা প্রদান করেছি- যার মধ্যে রয়েছে আর্থিক, চিকিৎসা সেবা ও আইনি সহযোগিতা। ২০০১-এরপর ময়মনসিংহে একটি সিনেমাহলে জঙ্গি মৌলবাদীদের সন্ত্রাসী হামলার মামলায় ২০০২-তে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও আমার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে আবার গ্রেফতার করে সরকার। সেটাতেও আমাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। ২০০১-এর পর যে তিন লক্ষ হিন্দু ভারতে চলে এসেছিলেন প্রথমে এখানকার কেন্দ্রীয় সরকারকে তাদের শরণার্থীর মর্যাদা প্রদানের কথা বলেছি। ২০০৮ সালে পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ার পর দুই সরকারকেই বলেছি যারা বাংলাদেশে ফিরতে চায় তাদের নিরাপদে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে আর যারা ভারতে থাকতে চায় তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। ২০০৮-এর পর প্রায় আড়াই লক্ষ হিন্দু বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করার জন্য দেশে ও বিদেশে জনমত সংগঠিত করেছি। আমরা যে যেখানে থাকি- ধর্মের নামে বা বর্ণ বা জাতিসত্ত্বার নামে যে কোনও ধরনের নির্যাতন, বৈষম্য ও সন্ত্রাসের বিরোধিতা করতে হবে। ধর্ম থাকবে ধর্মের জায়গায়, রাজনীতি আলাদা- এটা মানুষকে সব সময় বোঝানোর চেষ্টা করি। পৃথিবীর সব জায়গাতেই এরকম হওয়া উচিত।

প্রশ্ন ১১. এখনও তো বাংলাদেশে হিন্দুদের একটা বড় অংশ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে?

উত্তর: সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে রমনার বিশাল জনসমুদ্রে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে আর তার ভিত্তি বিশেষ কোনও ধর্মীয়ভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।’ ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এই বোধই প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির মৌলবাদীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণ আরম্ভ হয়েছে। এর পেছনে পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের ইন্ধন রয়েছে। আমেরিকাও মনে করে জামায়াতে ইসলামী একটি গণতন্ত্রকামী মডারেট দল। জিয়া ও এরশাদ- এই দুই জেনারেল অবৈধভাবে ক্ষমতাদখল করে সংবিধান পরিবর্তন করে রাষ্ট্রের চরিত্র পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। বাংলাদেশকে তারা পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিলেন। তবে, এখন বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থা আগের চেয়ে ভাল। সংবিধানের চার মূলনীতি আবার ফিরে এসেছে। ২০১৮ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সংসদে এটা স্বীকার করেছেন। আওয়ামী লীগের ১২ বছরের শাসনে এটা হয়েছে। মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশের নিচে চলে গিয়েছিল হিন্দুরা। সেটা বেড়ে ৮ শতাংশের ওপর হয়েছে। তবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। জেনারেল এরশাদ ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’- এটা সংবিধানে ঢুকিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ এটা বাদ দিতে পারেনি। ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’- এটা আমাদের আন্দোলনের শ্লোগান। রাষ্ট্রের কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম থাকতে পারে না। এটা আমাদের সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদেরও পরিপন্থী, যেখানে বলা হয়েছে রাষ্ট্র কোনও বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বিশিষ্ট সংবাদিক এবং চিত্র পরিচালক শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, “রাজনৈতিক কারণে ভারত- বাংলাদেশ ভাগ হলেও, এই রাজনৈতিক বিভাজন আমাদের বাঙালিত্বের অসাম্প্রদায়িক মানবতার চেতনাকে ভাগ করতে পারেনি। দুই বাংলার বাঙালিরা অভিন্ন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অধিকারী। এই উপমহাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটেছে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর থেকে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অসাম্প্রদায়িক বাঙালিত্বের চেতনার প্রাণপুরুষ। তাঁর গান কণ্ঠে ধারণ করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। রবীন্দ্রনাথের গান আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হবে এটা মুক্তিযুদ্ধের আগেই ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই বাঙালিত্বের চেতনার অন্যতম রূপকার ও পথিকৃত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি।”

শাহরিয়ার কবির বলেন, “১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের যে সব মানুষ আমাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরাও মুক্তিযোদ্ধা। এক কোটি শরণার্থীর ভেতর ৭২ লক্ষ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে এই কলকাতার মানুষ। ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর শুধু বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করেনি, এটি ভারতেরও বিজয়। নির্দিষ্টভাবে দুই বাংলার বাঙালিদের জয়। এটা ধর্মনিরপেক্ষ মানবিকতার বিজয়। মুক্তিযুদ্ধকালে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের একজন হিসেবে আমারও অধিকাংশ সময় কেটেছে কলকাতায়, যার বিবরণ সদ্যপ্রকাশিত ‘আমার একাত্তর’ গ্রন্থে রয়েছে। আমার পিতার ছাত্রজীবন কেটেছে বৃটিশ আমলের কলকাতায়। তার কর্মজীবনের শুরুও কলকাতা থেকে। এসব কারণেই কলকাতা আমার এত প্রিয় শহর।”

তিনি বলেন, “তবে শুধু ১৯৭১ সালের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে দেখলে হবে না। বঙ্গবন্ধু ১৯৬১ সালেই বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে ভারত যদি সীমান্ত উন্মুক্ত না করত, তাহলে ৩০ লক্ষ নয় ৩ কোটি মানুষ মারা যেত। মুক্তিযুদ্ধকালে ভারত যেভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল- বিশ্বের অন্য কোনও দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে এ ধরনের সহযোগিতার নজির নেই। আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতারের পাশাপাশি ‘আকাশবাণী’-র খবরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। সেই সময় ইয়াহিয়া মন্তব্য করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ কোথাও নেই, এটা শুধু আকাশবাণীতে হচ্ছে।”

শাহরিয়ার কবির বলেন, “১৯৭১ সালে প্রচুর দুর্গা মণ্ডপে আমি দেখেছি, ঠাকুরের দু পাশে মুজিব এবং ইন্দিরা গান্ধীর ছবি। মুজিবের প্রতি ধর্মনির্বিশেষে মানুষের এই বিশ্বাস বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে গণযুদ্ধে রূপান্তরিত করেছে। আজ হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে। তবে আমরা ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছি। আন্তর্জাতিক আদালতের সহযোগিতায় সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ করতে পেরেছি। গঙ্গার জলবন্টনের সমস্যাও আলোচনা করে নিষ্পত্তি করেছি। আশা করি আগামীতে তিস্তা সমস্যারও সমাধান হবে। আমি মনে করি অমীমাংসিত সমস্যাগুলি শেখ হাসিনা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারবেন। তবে সকল ক্ষেত্রে মানুষে মানুষে সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক বজায় রাখা খুব জরুরী”।
***

One thought on “পূর্ববঙ্গে হিন্দু স্মৃতি সাপ্তাহিক বিশেষ সাক্ষাৎকার ৫- “ব্যাপক হিন্দুনিধন হল, মা-বোনদের ওপর অত্যাচার হল, স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হতে পারে, ভাবতে পারিনি,”— শাহরিয়ার কবির

  1. Alok Sarkar says:

    অধুনা বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের কাহিনী পড়ে যারপরনাই দুঃখিত হলাম। বহু মনীষী বার বার বলেছেন যে ধর্মের নামে পৃথিবীতে যত হানাহানি ও রক্তপাত হয়েছে তার নিদর্শন মানুষের জীবন ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। ভাবলে অবাক হতে হয় যে এত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, এত লেখাপড়া, জ্ঞান গরিমা থাকার পরও মানুষ এত অজ্ঞ কি করে হয়? এই প্রশ্নের একমাত্র উত্তর হচ্ছে যে মানুষ তার অন্তর্নিহিত দৈবী সত্তার খোঁজ পায়নি বলে এই রকম হচ্ছে। মানুষ – দেহ, প্রাণ, মন, বুদ্ধি এবং অহংকার নয়। মানুষের প্রকৃত পরিচয় হচ্ছে সে নিত্য শুদ্ধ বুদ্ধ মুক্ত অনন্ত আনন্দময় সত্তা বা আত্মা। আত্মা হচ্ছে চৈতন্যময় এক অবিনশ্বর শক্তি, যার কোন শুরু বা শেষ নেই, অনন্ত স্থায়িত্ব আছে। মন শুদ্ধ না হলে মানুষের অন্তরে এই সহজ সত্যটা ধরা পড়ে না, আর এখানেই যত গন্ডগোল। ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা যখন এই সহজ সত্যটাকে উপলব্ধি করতে পারবেন, তখনই, একমাত্র তখনই সব বিভেদ ঘুচে যাবে, পৃথিবীটা স্বর্গ হয়ে উঠবে। আর তা না হলে যেরকম চলছে সেরকম চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে। 😭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *