নাগা সন্ন‍্যাসীর ইতিহাস

আমাদের ভারত, ২৯ নভেম্বর: কুম্ভমেলা বা গঙ্গা সাগর মেলায় হাজার হাজার নাগা সন্ন্যাসীদের দেখে আমরা অভ্যস্ত। সভ্য সমাজে একদল উলঙ্গ সাধুদের দেখে আমরা অস্বস্তিতে পড়ে যাই। আমাদের কাছে ওরা বিকৃত কাম পুরুষ, ওরা হাসির পাত্র, কারণ ওদের ব্যাপারে আমরা বিশদ জানি না বা জানার চেষ্টা করি না। আমি এই লেখার মাধ্যমে নাগা সাধুদের ইতিহাস বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। ভুল ত্রুটি হলে ধরিয়ে দেবেন।

আজ থেকে কয়েক শতাব্দী আগে আদি শংকরাচার্যর হাত ধরে নাগা সন্ন্যাসীদের উৎপত্তি। ওই সময় বিদেশী শত্রুদের দ্বারা ভারতবর্ষে বারবার আক্রমণ হতো ধন সম্পদের লোভে। কেউ ধন সম্পদ লুট করে দেশে ফিরে গেছে, কেউ থেকে গেছে বরাবরের জন্য এখানে। এতে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা যেমন বিঘ্নিত হয়েছে তেমনি বিপন্ন হয়েছে সনাতন হিন্দু ধর্মের অস্তিত্ব। আদিগুরু শংকরাচার্য ভারতের চার কোণে চারটি পিঠের নির্মাণ করেন। এগুলি হলো, গোবর্ধন পীঠ, সারদা পীঠ, দ্বারকা পীঠ এবং জ্যোতির্মঠ পীঠ। এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন মঠ ও মন্দিরের রক্ষার জন্য সনাতন হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোককে একত্রিত করে তিনি বিভিন্ন আখড়ার সূত্রপাত করেন।

কয়েকটি প্রসিদ্ধ আখড়া – শ্রী নিরঞ্জনী আখড়া, শ্রী জুনা আখড়া, শ্রী মহানির্বান আখড়া, শ্রী অটল আখড়া, শ্রী আনন্দ আখড়া, শ্রী পঞ্চগনি আখড়া, শ্রী গোরক্ষনাথ আখড়া, শ্রী বৈষ্ণব আখড়া, শ্রী নির্মল আখড়া, শ্রী নির্মোহী আখড়া। শংকরাচার্য বুঝতে পারেন কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক শক্তি বিদেশী শক্তির মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট নয়। উনি যুবক সাধুদের শরীর গঠন এবং অস্ত্র শিক্ষার উপর জোর দেন। অনেকবার অনেক রাজা মহারাজাও বিদেশী আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য নাগা সাধুদের সাহায্য নেন। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যাবে প্রায় ৪০০০০ নাগা সন্ন্যাসী বিভিন্ন সময় যুদ্ধে অংশ নেন। আহমেদ শাহ আবদালি গোকুল আক্রমণ করলে নাগারাই গোকুলকে রক্ষা করে।

নাগা সাধুরা সভ্য সমাজের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখেন না। নাগারা শিবের উপাসক হন। প্রত্যেকটি আখড়ায় একজন করে দারোগা থাকে যে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। এই দারোগারাই কুম্ভমেলার আগাম সংবাদ নাগাদের দেয় এবং লক্ষ লক্ষ নাগা সন্ন্যাসী পুণ্যস্নান করতে বেরিয়ে পড়ে লোকালয়ে। নাগারা যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হলেও তারা অহিংসা, সত্য এবং ব্রহ্মচর্যে বিশ্বাসী। তবে আপনি যদি মনে করেন যে কোনও লোক চাইলেই ল্যাংটো হয়ে ছাই ভস্ম মাখলেই নাগা সন্ন্যাসী হয়ে যেতে পারে তবে আপনি ভুল ভাবছেন।

নাগা সেনাদের ট্রেনিং কমান্ডো বাহিনীর ট্রেনিংয়ের চেয়েও কঠিন। দীক্ষা নেওয়ার আগে একজন নাগা সন্ন্যাসীকে নিজের পিন্ড দান করতে হয় এবং শ্রাদ্ধ করতে হয়। এতে করে তার পূর্বতন সংসারের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এর পরে নাগা গুরু তার নতুন নামকরণ করেন। কেউ নাগাদের আশ্রমে সাধু হবার জন্য এলে প্রথমে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর ব্রহ্মচর্য এবং আত্মসংবরণের পরীক্ষা নেওয়া হয়। দীক্ষা দেওয়ার আগে এটা নিশ্চিত করে নেওয়া হয় যে দীক্ষা নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি সকল কামনা বাসনা থেকে মুক্ত কি না। ব্রহ্মচর্য পালনের সময় এটাও শেখানো হয় যে ধর্ম, রাষ্ট্র এবং মানব সমাজের সেবা এবং সুরক্ষা একজন নাগার প্রাথমিক কর্তব্য। নাগা সাধুদের বস্ত্র পরিধান করার অধিকার থাকে না। তাদের সারা শরীরে বিভূতি মাখতে হয় এবং রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে হয়। নাগাদের চুল কাটার অধিকার থাকে না। সাধু হবার আগে বৈদিক মন্ত্রের সাহায্যে হাতের বিশেষ ঝটকায় নাগাদের পুরুষাঙ্গ নিষ্ক্রিয় করা হয়। নাগা সাধুরা সারাদিনে কেবলমাত্র একবার ভোজন করেন। সেই খাবারও ভিক্ষা করে সংগ্রহ করতে হয়।

একজন নাগা সর্বাধিক সাতটি বাড়িতে ভিক্ষা করতে পারে। যা মেলে তাতে কোনও বাছ বিচার করা চলে না। যদি কোনও ভিক্ষা না মেলে তবে উপবাসে দিন কাটাতে হয়। শুতে হয় মাটিতে। ব্রহ্মচর্য পালনের সময় ৬ মাস থেকে ১২ বছর। তারপরে যদি গুরুজীর মনে হয় যে ওই ব্যক্তি দীক্ষা নেওয়ার উপযুক্ত তবে তাঁকে ব্রহ্মচারী থেকে মহাপুরুষ পদে উন্নীত করা হয়। একজন মহাপুরুষের পাঁচ জন গুরু থাকে। এরা হলেন শিব, বিষ্ণু, শক্তি, সূর্য এবং গণেশ। নাগাদের পরবর্তী পদ হল অবধুত। এরপরে ধীরে ধীরে তাঁরা মহন্ত, শ্রী মহন্ত, জমানিয়া মহন্ত, থানাপতি মহন্ত, পীর মহন্ত, দিগম্বর শ্রী, মহা মণ্ডলেশ্বর, আচার্য মণ্ডলেশ্বর প্রভৃতি পদে উন্নীত হন। Collected

1 টি মন্তব্য

আপনাদের মতামত জানান

Please enter your comment!
Please enter your name here