জয় লাহা, দুর্গাপুর, ১০ জুন: ‘মাংস ভাতের থেকে আলু সেদ্ধ ভাত ভাল।’ বৃহঃস্পতিবার ত্রাণ ফিরিয়ে ঠিক এভাবেই পরিদর্শনে আসা জেলা বিজেপি নেতৃত্বকে জবাব দিল আউশগ্রামের ঘরছাড়া একসময়ের বিজেপি কর্মীরা। স্পষ্ট জানিয়ে দিল বিপদে যারা পাশে দাঁড়িয়েছে সেই সিপিআইএমএলের কর্মীদের সম্মান করব। একমাস পর ত্রাণ দিতে গিয়ে এভাবেই ফিরে আসতে হল বর্ধমান জেলা বিজেপি নেতৃত্বকে। আর তাতেই নতুন করে জল্পনা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
প্রসঙ্গত, গত ২ মে রাজ্য বিধানসভার ফলাফল ঘোষনার পর অমানবিক অত্যাচারের শিকার হয় আউশগ্রামের প্রেমগঞ্জের বিজেপিকর্মী ও তাদের পরিবার। রাতের অন্ধকারে প্রাণ ভয়ে গ্রাম ছাড়তে হয়। রাজনৈতিক হিংসার আক্রামণে ভাঙ্গচুর হয়েছে ঘরবাটি। লুট হয়েছে বাড়ির সামগ্রী।
সংসারে বেঁচে থাকার রশদটুকুও নেই। উধাও গবাদি পশু থেকে মাঠের সাবমার্শিবাল। পচে নষ্ট হচ্ছে মাঠে পাকা ধান। নিরাশ্রয় পরিবারগুলো জানায়, “গত দুদিন রায়ে বৃষ্টি। রান্না করা যায়নি। ত্রিপলের ওপর বসে কেউ মুড়ি, কেউ চিড়ে খেয়ে রাত কাটিয়েছে। বাচ্চাদের সেরকম কিছু খাবার জোটেনি। তার ওপর সাপের উপদ্রব। বৃষ্টির জলে ভেসে আসছে বিষধর সাপ। রাতভর আতঙ্কে কেউ ঘুমোতে পারেনি। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা লাটে উঠেছে। রাতে পুলিশ এসেছিল। নিজের মতো করে বাড়ি ফিরতে বলেছে।” পরিবারগুলো জানায়, “এখানেই রাতে প্রথমদিন বোমাবাজি করে গেছে দুষ্কৃতিরা। গ্রামে ফিরলে আরও অত্যাচার করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ত্রান সরকারি সাহায্য এখনও জোটেনি। ঘরবাড়ী সবই ভাঙ্গাচোরা। বৃষ্টিতে সেখানে থাকা অসম্ভব। নতুন করে ছাউনী না করলে থাকা যাবে না।”
এদিকে বৃহঃস্পতিবার ভাতকুন্ডায় তাবুতে থাকা পরিবারগুলোর কাছে ত্রাণ নিয়ে যান বর্ধমান জেলা বিজেপি সম্পাদক শ্যামল রায় ও অন্যান্য কর্মীরা। ঘরছাড়া পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছাতে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন একসময়ের বিজেপিকর্মীরা। সুভাষ বাগদী বিজেপির প্রেমগঞ্জ গ্রামের শক্তিকেন্দ্র প্রমুখ ছিলেন। ধর্মদাস বাগদী বিজেপির ওই গ্রামের বুথ সভাপতি ছিলেন। এদিন দুজনেই বিজেপির জেলা নেতৃত্বকে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। তারা জানান,”যে দলের জন্য নির্বাচনে লড়াই করেছি। ফলাফল ঘোষনার পর আমাদের ওপর যেভাবে আক্রমন হয়েছে, বিজেপির নেতৃত্বের খোঁজ নেওয়া দূরঅস্ত ফোন পর্যন্ত ধরেনি। জেলা অফিসে গিয়েছিলাম আমাদের অত্যাচারের কথা শুনে পাশে দাঁড়ায়নি। আজ একমাস পর ত্রাণ নিয়ে এসেছে। আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি।” ঘরছাড়া ওই পরিবার গুলো জানান,”বিপদে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সিপিআইএমএল (রেডস্টার) সংগঠন। আমাদের ত্রিপল দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে। আলু সেদ্ধ ভাত হলেও প্রতিদিন জোগাড় করে দিচ্ছে। একমাস পর হঠাৎ করে বিজেপির ত্রাণ নিলে সিপিআইএমএল (রেডস্টার) সংগঠনকে অসম্মান করা হবে। তাই বিজেপির ত্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছি। একমাস পর বিজেপির মাংস ভাতের থেকে বিপদে পাশে থাকা সংগঠনের আলু সেদ্ধ ভাতে অনেক তৃপ্তি।”
এপ্রসঙ্গে সিপিআইএমএল (রেডস্টার) সংগঠনের বর্ধমান জেলা সম্পাদিকা ফতেমা বেগম জানান,”আমরা যে সামান্যটুকু বিপদে সাহায্য করেছি। সেটাতেই হয়তো ওই পরিবারগুলো প্রয়োজন পুরন করতে পেরেছে। সেকারনেই হয়তো বিজেপির ত্রান নেয়নি।” তিনি আরও বলেন,”আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত জানিয়ে এসেছি। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে। ওইসব অসহায় মানুষদের পাশে রয়েছি। সুবিচার দিতে প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন হবে।”
ত্রান ফিরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে বিজেপির বর্ধমান জেলা সম্পাদক শ্যামল রায় বলেন,”বিজেপি করত বলেই আজ আক্রান্ত হয়েছে। ২ মে র পর যেভাবে বিজেপি কর্মীদের ওপর আক্রমন হয়েছে, তাতে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। হয়তো এখন অভিমান হয়েছে, আবারও ফিরে আসবে বলে আশাবাদী। আমরা ওইসব পরিবারের পাশে আছি। এখন যারা আশ্রায় দিয়েছেন তাদেরও ধন্যবাদ।” এদিন আউশগ্রাম -২ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হায়দার আলি বলেন,”প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা চলছে। তাদের বাড়ি ফিরতে বলেছি। প্রয়োজনীয় ত্রান পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”