ডাক্তার প্রশান্ত কুমার ঝরিয়াৎ, ২৯ ডিসেম্বর :
“খোকা ঘুমল পাড়া জুড়াল,
বর্গী এল দেশে।
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে,
খাজনা দেব কিসে।।”
ছোট বেলায় মায়েরা এই ছড়াটি সুর করে গেয়ে শিশুদের ঘুম পাড়াতেন। ছোট ছোট শিশুরাও সুরের আবেশেই হউক বা,বর্গীদের ভয়েতেই হউক ঘুমিয়ে পড়ত ।তবে এখন মায়েদের এই ঘুম পাড়ানি গানের জায়গাটা দখল করে নিয়েছে নতুন অ্যানড্রয়েড মোবাইল। মোবাইলে নিত্যনতুন গেম খেলতে খেলতে শিশু ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে, কানের কাছে চলতে থাকে মোবাইল,যার তরঙ্গের ক্ষতিকারক প্রভাব গিয়ে পড়ে শিশু মস্তিষ্কে। যাইহোক এ নিয়ে পরে এক সময় বিস্তারিত আলোচনা করব। আজ আমরা ঘুম নিয়ে আলোচনা করব।
দিনের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ঘুম হচ্ছে সেই সময় যখন আমরা আমাদের চারপাশ সম্বন্ধে অবহিত থাকি না। প্রধানত দুধরনের ঘুম হয়ঃ
রেম
সারা রাতের পাঁচ ভাগের এক ভাগ আমাদের এই ঘুমে কাটে। রেম ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক সজাগ থাকে, আমাদের মাংসপেশি শিথিল থাকে, আমাদের চোখ এদিক থেকে ওদিকে ঘুরতে থাকে এবং আমরা স্বপ্ন দেখি।
নন রেম
এই ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় থাকে, তবে শরীর নড়াচড়া করতে পারে। এই সময় হরমোন নি:সৃত হয় এবং দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে শরীর আবার সতেজ হয়ে ওঠে। নন রেম ঘুমের চারটি স্তর আছে।
১। ঘুমের আগের স্টেজ – মাংসপেশি শিথিল হয়, হৃদস্পন্দন কমে আসে, শরীরের তাপমাত্রা কমে।
২। হাল্কা ঘুম – এই স্টেজে সহজেই ঘুম ভেঙ্গে যায়, চারপাশ সম্বন্ধে স্বাভাবিক সচেতনতা থাকে।
৩। ‘স্লো ওয়েভ ঘুম’ – ব্লাড প্রেসার কমে, এই স্টেজে লোকে ঘুমের ঘোরে হাটে বা কথা বলে।
৪। গাঢ় ‘স্লো ওয়েভ ঘুম’ – ঘুম সহজে ভাঙতে চায় না। ভেঙ্গে গেলে চারপাশ সম্বন্ধে স্বাভাবিক সচেতনতা থাকে না।
আমরা রাতে রেম এবং ননরেম ঘুমের মধ্যে থাকি, অন্তত পাঁচবার এই স্টেজগুলি ঘুরে ঘুরে আসে। সকালের দিকে আমরা বেশি স্বপ্ন দেখি।
রাতে আমাদের ঘন্টা দুয়েক বাদে বাদে মিনিট খানেকের জন্য ঘুম ভাঙতে পারে। এটা আমাদের সবসময় মনে থাকে না। এগুলি আমাদের মনে থাকে যদি আমরা চিন্তায় থাকি, কিংবা অন্য কোনো অসুবিধা হয় (যেমন অন্য কেউ যদি নাক ডাকায় বা বাইরে যদি কোনো আওয়াজ হয় ইত্যাদি)।
ছোট শিশু দিনে সতের ঘন্টা ঘুমোয়। একটু বড় হলে তারা রাতে আট ন ঘন্টা ঘুমোয়।
প্রাপ্তবয়স্কদের সাধারনতঃ সাত আট ঘন্টা ঘুম লাগে।
বেশি বয়স হলে একই রকম ঘুম দরকার হয়। তবে তাদের রাতে সাধারনতঃ একবার ভালো ঘুম হয়, প্রথম রাতে ঘন্টা তিন চারের জন্য। তারপর তাদের ঘুম সহজে ভেঙ্গে যায়।
ঘুম কম হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় দেহের ভিতরের কোনও রোগের জন্যও ঘুম কমে যেতে পারে। আবার অনেক সময় সারাদিন ধরে একটা ঝিমুনি ভাব চলতে থাকে, এটাও রোগের লক্ষণ হতে পারে, বিশেষত থাইরয়েডের সমস্যার কারনে এমনটা হতে পারে। আবার অনেকে ঘুমের মাঝে চিৎকার করে জেগে ওঠেন,এটিকেও অবহেলা না করে সঠিক চিকিৎসা করানো দরকার,নতুবা এটি প্রাণঘাতী পর্যন্ত হতে পারে।
আসুন এবার আমরা দেখি কোন কোন হোমিওপ্যাথি ওষুধ ঘুমের সমস্যা থেকে আমাদের রেহাই দিতে পারে।
অনেক রকম ঘুমের ওষুধ খেয়েও ঘুম না হলে প্যাসিফ্লোরা ঔষধটি আপনাকে নিরাশ করবেনা। এই ওষুধটির আরক প্রত্যহ সন্ধ্যায় সেবন করলে ট্র্যাঙ্কুলাইজারের মতন কাজ করে।
উচ্চ রক্তচাপের সাথে ঘুমের সমস্যা থাকলে রাউলফিয়া সারপেন্টিনা খুবই কার্যকরী।
মানসিক দুশ্চিন্তার জন্য ঘুম না হলে ইগ্নেশিয়াকে স্মরণ করতে হবে। মাথার মধ্যে বিভিন্ন রকমের চিন্তা জট পাকিয়ে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালে কফিয়া ক্রুডাম ধন্বন্তরী।
বায়োকেমিক মতে ক্যালিফস ঘুমের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী।
এছাড়াও ধাতু গত লক্ষণ বিচার করে আরও অনেক হোমিওপ্যাথি ওষুধ আছে যেগুলি ঘুমের সমস্যায় খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, তবে সে ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি ডাক্তার বাবুর সঙ্গে আলোচনা করে ওষুধের মাত্রা ও তার প্রয়োগ সম্পর্কে জেনে নেবেন।