আমাদের ভারত, ৬ সেপ্টেম্বর:
ধর্মাচরণের অধিকার দেশের সংবিধানে সংরক্ষিত। কিন্তু সেটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেনে নিয়ে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? সেই প্রশ্ন এবার তুলে দিল সুপ্রিম কোর্ট। কর্নাটকে স্কুলপড়ুয়াদের হিজাব নিষিদ্ধ করার মামলার শুনানিতে এমনটাই মন্তব্য করেছে দেশের শীর্ষ আদালত।
শীর্ষ আদালত প্রশ্ন করেছে, ধর্মাচরণের অধিকার খাটানো যায় কিন্তু যে স্কুলের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম রয়েছে, সেখানে ধর্মাচরণের অধিকার টেনে নিয়ে যাওয়া যায় কি? এমনটা চললে অধিকারের দোহাই দিয়ে পড়ুয়ারা স্কুলে মিনিস্কার্ট পরেও চলে যেতে পারে কি?
কর্নাটকে স্কুল এবং কলেজগুলোতে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরা নিয়ে বিতর্ক চলছে। হিজাব পরিহিত মেয়েদের ক্লাস করতে না দেওয়া, পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। সেই মামলায় দেশের শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চে পৌঁছেছে। পোশাকের জন্য কোনো পড়ুয়াকে ক্লাস করতে না দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, প্রশ্ন তুলেছেন মামলাকারীরা। ধর্মীয় অধিকারের আওতায় হিজাব পরা বৈধ বলেও যুক্তি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার তার শুনানিতে বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া বলেছেন, কারো অধিকার হরণের কথা বলা হচ্ছে না। কর্ণাটক সরকার শুধু বলেছে নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরে স্কুলে আসতে হবে পড়ুয়াদের।
বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত বলেন, এক মুহূর্তের জন্য যদি ধরে নিই, স্কুলে হিজাব, স্কার্ফ বা নিজেদের পছন্দমতো অন্য যা কিছু পরার অধিকার রয়েছে। কিন্তু স্কুলের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম রয়েছে যেখানে, সেখানে হিজাব পরা যায় কি?
তার প্রেক্ষিতে মামলাকারীদের আইনজীবী স্কুলের ইউনিফর্ম হিসেবে ওড়নাকে হিজাবের সঙ্গে তুলনা করেছেন। স্কুলের ইউনিফর্মে ওড়না থাকলে হিজাবে কেন আপত্তি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি?
বিচারপতিরা বলেন, ওড়না এবং হিজাবের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কাঁধ ঢাকতে ব্যবহার করা হয় ওড়না। মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, অনেক ক্ষেত্রে ওড়না দিয়ে মাথাও ঢাকেন মেয়েরা। জবাবে বিচারপতি গুপ্ত বলেন পাঞ্জাবের শিখ মেয়েরা শুধুমাত্র গুরুদ্বারে যাওয়ার সময় মাথায় ওড়না দেন তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।
এরপর মামলাকারীদের আরএক আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান আদালতে সংবিধান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে ধর্মের অধিকার দিয়েছে, হিজাব তার মধ্যেই পড়ে। তাই বিষয়টি একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত আদালতের। এর জবাবে বিচারপতি গুপ্ত বলেন, ধর্মাচরণের অধিকার অত্যাবশ্যক হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানে ধর্মাচরণের ওপর জোর দেওয়া যায় কি? বিশেষ করে সংবিধানের মুখবন্ধে যেখানে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বেশ কিছু রেস্তোরাঁ এবং গলফ কোর্সেও পোশাক বিধি রয়েছে বলে মন্তব্য করে আদালত।
আদালত আরও বলে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পোশাক বিধি চালু করতে পারে, আবার না–ও বলে করতেই পারে, তাই বলে কি একজন পড়ুয়া স্কুলে মিনিস্কার্ট, মিডি নিজের ইচ্ছে মত পোশাক পরে যেতে পারে? হিজাব বা স্কার্ফ পরা যেতে পারে, কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্দরে ধর্মাচরণের অধিকার টেনে নিয়ে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না। শুধু ইউনিফর্ম পরে আসতে বলা হচ্ছে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।