রাজেন রায়, কলকাতা, ১৩ জানুয়ারি: বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখের মতো লক্ষ্য রেখে তৈরি হচ্ছে যুযুধান দুই রাজনৈতিক দল তৃণমূল এবং বিজেপি। একসময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বিরোধী দলে থাকার সময় যে অভিযোগ করতেন, এখন তার বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ তুলল বিজেপি। বিজেপির অভিযোগ, ভোটার লিস্টে ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে। আচমকাই সীমান্তবর্তী এলাকায় বিপুল হারে ভোটার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে।
সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়া ভোটদান করা যাবে না, এই দাবিতে এক সময় কলকাতায় সোচ্চার হয়েছিল যুব কংগ্রেস। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই তৎকালীন যুব কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুতে মহাকরণ অভিযান করেছিলেন। সেখানে পুলিশের গুলিচালনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জন কংগ্রেস কর্মীর। মমতার অভিযোগ ছিল, ভোটার লিস্টে প্রচুর ভুয়ো ভোটারের সংখ্যা রয়েছে। সেই দাবিতে তদন্ত চেয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি। সেদিন মুখ্যমন্ত্রী যে দাবি করতেন সিপিএম তথা বামেদের বিরুদ্ধে, এখন সেই দাবিতে সরব হল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি।
এ প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ”গত ডিসেম্বর মাসে আমরা দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার সঙ্গে দেখা করি। আমরা জানাই ভোটার লিস্টে অস্বাভাবিকভাবে নতুন ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে। মৃত ভোটারদের নাম কাটা হয়নি। বাসস্থান বদল করেছেন যারা তাঁদের অনেকের নাম রয়ে গিয়েছে পুরনো ভোটার তালিকায়। কয়েকটি জেলায় অস্বাভাবিক হারে নতুন ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা তাঁর কাছে বিষয়টি নিয়ে অডিটের দাবি জানিয়েছিলাম। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনের কাছে গিয়ে একই দাবি করেছি আজ। এই সংক্রান্ত কাগজপত্র তুলে দিয়েছি তাঁর হাতে।”
এ বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্তারিতভাবে তথ্য পেশ করেছেন স্বপনবাবু। তিনি বলেন, “সবচাইতে বেশি ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে মালদা জেলায়। সবমিলিয়ে ৯.৬ শতাংশ ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সংখ্যাটা অস্বাভাবিক। মুর্শিদাবাদে বৃদ্ধির হার ১৪.২, উত্তর দিনাজপুরে ১৩, দক্ষিণ দিনাজপুরে ১১.৮, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১১.৩, জলপাইগুড়িতে ৯.৩, উত্তর ২৪ পরগনায় ৯.৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ভোটার সংখ্যা। খেয়াল করলে দেখবেন সীমান্তবর্তী জেলাতে ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রচুর। আমরা বিষয়টি নিয়ে সুদীপ জৈনের হাতে সমস্ত কাগজপত্র তুলে দিয়েছি। অবিলম্বে অডিট করার দাবি জানাচ্ছি নির্বাচন কমিশনের কাছে।”
তিনি বলেন, আমরা চাই সত্যিকারের যারা নাগরিক তাঁরাই ভোট দিন। ভুয়ো ভোটার যেন না থাকে রাজ্যে। আমরা যখন সুনীল অরোরার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন বিষয়টি দেখবেন। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে স্থানীয় পর্যায়ে বহু অফিসার নাম কাটতে সমস্যা করছেন ভুয়ো ভোটারদের নাম কাটতে। আমরা চাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক। এত পরিমাণে ভুয়ো ভোটার থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হওয়া সম্ভব নয়।