দোলের আনন্দে আপনার চোখ ও ত্বকের ক্ষতি করে ফেললেন না তো! বাঁচতে হলে পড়ুন

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১০ মার্চ: চুটিয়ে দোল তো খেলা হল… কিন্তু আপনার চোখ ও ত্বক বাঁচানোর উপায় বের করেছেন তো? দোলের ঠিক পরে প্রতি বছরই অনেকেরই চোখের সমস্যা দেখা দেয়। একই ভাবে দোলের পরপরই ত্বকে সংক্রমণ, ত্বক রুক্ষ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও শোনা যায়।

দোলের রং-এ থাকা রাসায়নিক চোখের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই চেষ্টা করুন অর্গ্যানিক ও হার্বাল রং দিয়েই দোল খেলতে। রঙিন জল ভরা বেলুন থেকে দূরে থাকুন। কারণ দূর থেকে ছুড়ে মারা বেলুনে অজান্তেই আপনি কারও বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারেন। চোখে রং ঢুকেছে বলে মনে হলে ভুলেও চোখ রগড়াবেন না। ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলুন। রং-এ যদি অ্যালার্জি থাকে, তাহলে দোল খেলা থেকে দূরে থাকাই ভালো।

রং খেলতে যাওয়ার আগে অবশ্যই এসপিএফ ২০ বা তার বেশি মাত্রার সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। ত্বকে পিগমেন্টেশন থাকলে আরও শক্তিশালী সানস্ক্রিন লোশন লাগাতে হবে। ত্বক রুক্ষ হলে প্রথমে সানস্ক্রিন লাগিয়ে কয়েক মিনিট পর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ত্বক থেকে শুকনো রং ধুয়ে ফেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দরকারে রং খেলার মধ্যেই মাঝে মাঝে রুমাল বা ওয়েট টিস্যু দিয়ে রং মুছতে থাকুন। রং খেলা হয়ে গেলে প্রথম ত্বকে ক্রিম বা তেল লাগান। তারপরে হালকা কোনও ফেস ওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপরে আবার ক্রিম বা বেবি অয়েল লাগান। গুড়ো রং ত্বক খুব শুকনো করে দেয়। তাই তাকে আর্দ্র রাখা জরুরি।

যতটা সম্ভব শরীর ঢাকা পোশাক পরে দোল খেলতে যান। ত্বকে সরাসরি রং যত কম লাগবে, ক্ষতিও তত কম হবে। ভাববেন না দোলের পরই ম্যাজিকের মতো সব রং মুছে যাবে। রং তুলতে গিয়ে ত্বক ও চুলের অপর অত্যাচার করবেন না। ধীরে ধীরেই উঠবে রং। দলের পরে ত্বকে কোনওরকম সংক্রমণ দেখা দিলে দেরি না করে তখনই ডাক্তার দেখান।

জল খেতে হবে – মনে রাখবেন দোলের দিন কিন্তু হুড়োহুড়ি আর আনন্দে মেতে থেকে জল খাওয়ার পরিমাণ খুবই কম হয়। তাতে ত্বকের ক্ষতি করে। তাই ত্বক ভালো রাখতে দিনের শুরু থেকেই বেশি করে জল খেতে শুরু করুন, যাতে শরীরে জলের ঘাটতি না হয়। জল শরীরকে সতেজ করে, টক্সিন দূর করে, সঙ্গে শরীর যথেষ্ট আর্দ্র থাকলে রঙের সঙ্গের কেমিক্যালও শরীরে চেপে বসে যেতে পারে না। তাই খেলার আগে, পরে যতটা সম্ভব জল খান।

ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিন – খেলতে নামার আগে ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিন লোশন লাগিয়ে নিন ভালো করে। তা না হলে রঙের ওপর দিয়ে রোদ ত্বকের বারোটা বাজিয়ে দেবে।

জামাকাপড় – চামড়াকে রঙের কুপ্রভাব থেকে বাঁচাতে একটা আরও কাজ আপনাকে রং খেলার আগে করে নিতে হবে। তা হল যতটা সম্ভব গা হাত পা ঢাকা জামাকাপড় পরুন। তাতে ত্বক রঙের সংস্পর্শে কিছুটা কম আসবে।

স্নানের পদ্ধতি – ঘষে ঘষে নয়, রং তুলতে হবে অনেকটা যত্ন নিয়ে। তা না হলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই প্রথমেই টানা পাঁচ থেকে দশ মিনিট কল খুলে জলের নীচে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তাতে রঙের বেশির ভাগটাই ধুয়ে যাবে। এর পর কম ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে আলতো হাতে রঙ তুলতে হবে। মাথাতেও শ্যাম্পু ঘষতে হবে হালকা হাতে। তা না করলে চুলের গোড়া আলগা হয়ে যায়। চুল ঝরতে শুরু করে। স্নানের পর চুলে কন্ডিশনার আর গায়ে তেল বা বডি ক্রিম মাখতে ভুলবেন না।

প্যাক ব্যবহার – সাবানের পরিবর্তে হলুদ ও দই-এর একটা মিশ্রণ বানিয়ে নিয়ে তা দিয়েও হালকা করে মাসাজ করে রং তোলা যায়। এ ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধীরে ধীরে হালকা হাতে মিশ্রণটি সারা গায়ে মাখাতে হবে। তা ছাড়াও বেসন ও দুধ দিয়েও একটা প্যাক বানিয়ে নিয়ে বা শুধু অলিভ ওয়েলও একই ভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তার পর বেশি করে জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

স্নানের পরে রূপচর্চা – রং খেলার পর স্নানের পরেও চামড়ায় একটা অতিরিক্ত শুষ্ক ভাব থাকে। তা দূর করা যেতে পারে বাড়িতে তৈরি একটা অতি সাধারণ প্যাকের সাহায্যেই। খানিকটা লেবুর রস, এক চিমটে চন্দনের গুঁড়ো, খানিকটা টক দই, একটুখানি মধু মিশিয়ে নিয়ে মুখে হালকা হাতে মালিশ করুন। বিশেষ করে কানের পাশ, চোখের কোল, নাকের দু’ পাশে খাঁজ ঠোঁটের ওপর আর নীচে – এই সব অংশে রঙ জমে থাকে। উঠতে চায় না। তাই এই সব অংশের ওপর নজর দিতে হবে বেশি। এর পর কিছুক্ষণ রেখে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলেই হল।

ত্বকের স্বার্থে সাবধানতা – এর পরও যদি সামান্য রং কোথাও লেগে থাকে তা হলে অধৈর্য্য হবেন না। দু’ দিন সময় দিলেই স্বাভাবিক উপায়েই রং উঠে যাবে। রং তুলতে জোর করে স্ক্রাবার বা বাথ সল্ট ব্যবহার না করাই ভালো। রং খেলার পর দু’ দিন রোদে না বেরোনোই ভালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *