ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বর্ণিত রাধা-কৃষ্ণের তথাকথিত কামপূর্ণ লীলা কতটা সত্যি

“ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ লেখাই হয়েছিল সনাতন ধর্মের প্রধান পুরুষ কৃষ্ণের চরিত্রকে ধ্বংস করে হিন্দুধর্ম ও সমাজকে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করার জন্য।”

আমাদের ভারত, ৫ নভেম্বর: হিন্দুধর্মের প্রাচীন কোনো গ্রন্থে রাধার উল্লেখ না থাকলেও, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে রাধার উল্লেখ আছে এবং এই পুরাণেই রাধার উৎপত্তি। এই পুরানে রাধার যে চরিত্র এবং কৃষ্ণের সাথে রাধার যে সম্পর্ক তা জানলে, শুনলে বা পড়লে আপনার মনে রাধা ও কৃষ্ণ সম্পর্কে শুধু ঘৃণার জন্মই হবে এবং আপনি যদি বিবেকবান লোক হন, আপনার মনে হবে- এই যদি হয় কৃষ্ণের চরিত্র এবং এই কৃষ্ণ যদি হয় হিন্দু ধর্মের প্রধান পুরুষ, তাহলে হিন্দুধর্ম কোনো ধর্মই নয়। তাই, শুরুতেই জেনে নিন, এই পুরাণ রচনার রহস্য।

ভারতে মুসলমান শাসন শুরু হওয়ার পর, হিন্দুদের প্রতি মুসলমান শাসকদের নির্দেশ ছিল- হয় ইসলাম গ্রহন, নয় মৃ্ত্যু। এর ফল ১০ জনে ৯ জন হিন্দুই জীবন দিচ্ছিল, কিন্তু ধর্মত্যাগ করছিল না। এতে করে মুসলমান শাসকরা চিন্তা করল, ধর্মের কারণে সব প্রজাকে যদি হত্যা করা হয় তাহলে রাজ্য পরিচালনা করবে কাদের নিয়ে? কারা দেবে খাজনা? আর কিভাবেই বা বসে বসে খাওয়ার অর্থকড়ি আসবে? তাই তারা, সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী হলেও জিজিয়া করের বিনিময়ে ধনী হিন্দুদের বাঁচিয়ে রাখে এবং আস্তে আস্তে সাংস্কৃতিকভাবে হিন্দুধর্মকে ধ্বংস করার জন্য রচনা করে এক দীর্ঘ পরিকল্পনার, যার ফসল হলো ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ।

ইসলামে কবিতা লেখা হারাম, তাই মুসলমান শাসকরা রাজসভায় রাখতো হিন্দু কবিদের এবং তার থেকে তারা কাব্যরস আস্বাদন করত। এই রকম কোনো এক হিন্দু কবিকে দিয়ে কোনো এক মুসলমান শাসক লেখায় ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ এবং রচয়িতা হিসেবে নাম দেয় বহু পুরাণ রচয়িতা বেদব্যাসের। ফলে সাধারণ হিন্দুরা ধোকা খায় এবং ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান রচনার আসল উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে এই পুরাণের কথাকে বিশ্বাস করে ক্ষতি করে বসে হিন্দুধর্ম ও সমাজের।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেই প্রথম রাধার উৎপত্তি এবং রাধার সাথে কৃষ্ণের প্রেম ও যৌনলীলার শুরু, যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার; কারণ- হরিবংশ, মহাভারত, সংস্কৃত মূল ভাগবত যাতে কৃষ্ণের প্রামান্য জীবনী রয়েছে, সেগুলোতে রাধার নামের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে কৃষ্ণের যে চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা হরিবংশ, মহাভারত এবং সংস্কৃত মূল ভাগবতের কৃ্ষ্ণের যে চরিত্র, তার সাথে মোটেই মিল নেই। এই সমগ্র বিষয় উপলব্ধি করলেই বোঝা যায় যে, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ লেখাই হয়েছিল সনাতন ধর্মের প্রধান পুরুষ কৃষ্ণের চরিত্রকে ধ্বংস করে হিন্দুধর্ম ও সমাজকে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করার জন্য।

একটা বিষয় খেয়াল করুন, হরিবংশ, ভাগবত এবং মহাভারতে কৃষ্ণের একজন স্ত্রীর কথা বলা হয়েছে তিনি রুক্মিণী। অচথ তার সাথে কৃষ্ণের প্রেমের কথা বাদ দিয়ে এক নারীকে কৃষ্ণের পাশে দাঁড় করানো হয়, যিনি অন্যের স্ত্রী, আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলা হয় তিনি নাকি কৃষ্ণের মামী। যদি কৃষ্ণের সাথে এমন একটি মেয়ের প্রেম ও বিয়ের সম্পর্কের কথা বলা হতো, যেটা সাধারণ, যেমন রুক্মিনী, তাহলে কিন্তু কোনো কথা ছিলো না, কিন্তু ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের লেখক এবং তার পৃষ্ঠপোষকদের উদ্দেশ্য ছিলো তো অন্য, তাই তারা কৃষ্ণের পাশে এমন একজনকে দাঁড় করিয়েছে, যার সাথে কৃষ্ণের সম্পর্ক হয়েছে অনৈতিক ও অবৈধ, উদ্দেশ্য একটাই, এর মাধ্যমে কৃষ্ণ চরিত্রকে ধ্বংস করা গেলে সমগ্র হিন্দু সমাজকে ধ্বংস করা যাবে এবং ভারতে ইসলাম কায়েম করা যাবে।

যাই হোক, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আমি ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অবলম্বনে এই পুরাণে বর্ণিত রাধা ও কৃষ্ণের চরিত্রকে তুলে এনে আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, রাধাকে নিয়ে কৃষ্ণ সম্পর্কে যা বলা হয় তা সর্বৈব মিথ্যা, এই ঘটনা সীমাবদ্ধ শুধু ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেই, আর বাংলা পদ্য ভাগবতগুলোতে রাধাকে নিয়ে যেটুকু বলা আছে, তা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেরই প্রভাব এবং বহুল প্রচারণার ফল। নিচে দেখে নিন ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে- আসলে রাধা ও কৃষ্ণকে কিভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে এবং দিব্যজ্ঞানীরা যেটা বলে থাকে যে রাধা ও কৃষ্ণের প্রেম- অপ্রাকৃত অপার্থিব, সেটা প্রকৃতই সত্য কি না?

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ- ব্রহ্মখণ্ড, প্রকৃতি খণ্ড, গণপতি খণ্ড এবং শ্রীকৃষ্ণজন্ম খণ্ড- এই চার খণ্ডে বিভক্ত। এর মধ্যে শ্রীকৃষ্ণজন্ম খণ্ডের বিভিন্ন পর্ব বা অধ্যায়ে রাধা সম্পর্কে বলা হয়েছে। এর মধ্যে – নন্দ কর্তৃক শ্রীরাধিকার স্তব করণ – পর্বের ঘটনা এরকম- একদিন নন্দ, কৃষ্ণকে কোলে করে বনের মধ্যে গেছে গরু বাছুরকে খাওয়াতে, সেখানে হঠাৎ যুবতী রাধার আবির্ভাব, এখানে যুবতী রাধার রূপের বর্ণনা এরকম :

কিবা উচ্চ স্তনযুগ শোভে বক্ষপরে।
নিতম্ব দেখিয়া ধরা লাজেতে বিদরে।।
করিশুণ্ড সম উরু অপূর্ব বাহার।
দেখিয়া রাধার শোভা লাগে চমৎকার।।
রাধারের দেখিয়া কৃষ্ণ পুলকে বিভোর।
মরি মরি কিবা হায় প্রণয়ের ডোর।।

-যে কৃষ্ণ তখনও হাঁটতে শিখেনি, সেই কৃষ্ণ নাকি রাধার রূপ দেখে পুলকে বিভোর! ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ রচনার উদ্দেশ্যটা একবার বিচার করুন। যা হোক, তারপর রাধাকে দেখে নন্দ বলে,
জগৎ জননী তুমি জগত মোহিনী।
প্রকৃতিস্বরূপা সতী হরি বিমোহিনী।।
আদ্যাশক্তি তুমি মাতা জগত ঈশ্বরী।
তব পদে শত শত প্রণিপাত করি।।
…….…………….
………………….

ব্রজের ঈশ্বরী তুমি হরি তব ধন।
কৃষ্ণের জনম শুধু তোমার কারণ।।

– কৃষ্ণের জন্ম শুধু নাকি রাধার কারণে, আরো খোলামেলা বলতে গেলে বলতে হয় ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে কৃষ্ণের জন্ম শুধু রাধার সাথে প্রেম এবং যৌনক্রিয়া করার জন্য, দেখুন নিচে-

তারপর রাধা সতী হরি অঙ্কে করি।
অন্য বনে যান ত্বরা ব্রজের ঈশ্বরী।।
বনমাঝে গুপ্তস্থানে হরিরে লইয়ে।
কামেতে মাতিল রাধা হরিষে মজিয়ে।।
রাসমণ্ডলের কথা জাগিল অন্তরে।
চু্ম্বন হরির মুখ পুনঃ পুনঃ করে।।

– যে শিশু তখনও হাঁটতে শিখেনি, তাকে দিয়ে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের লেখক যৌনক্রিয়া করাচ্ছে যুবতী মেয়ের সাথে, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের লেখকের উদ্দেশ্যটা কী এবার বুঝতে পারছেন? এখানে আরেকটি অসঙ্গতি লক্ষ্য করুন, শিশু কৃষ্ণের সাথে যৌনক্রিয়া করার সময় রাধার রাসমণ্ডলের কথা মনে পড়ছে, যেই রাস হয়েছিলো কৃষ্ণের আট বছর বয়সের সময়; এই পুরাণের লেখককে বলছি, আরে বলদ, মিথ্যা কাহিনী লিখতে গেলেও তো একটু আগে পিছে ভেবে লিখতে হয়, যাতে মিথ্যাটা সাদা চোখে সবার কাছে ধরা না পড়ে। যা হোক, তারপর রাধা-

অঙ্কে করি হরিধনে শয়ন করিয়া।
মনের বাসনা পুরে পুলকে মাতিয়া।।
একদৃষ্টে হরি প্রতি করে দরশন।
মূহুর্মুহুঃ মুখপদ্ম করেন চুম্বন।।

– এই রাধার সাথে কৃষ্ণের নাকি আবার অপ্রার্থিব, অপ্রাকৃত, নিষ্কাম প্রেম, যেখানে যৌনতার লেশ গন্ধ মাত্র নেই ! হ্যাঁ, এই কথাই বলে বা প্রচার করে থাকে- অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অল্পজ্ঞানী, দুই এক বইয়ের পাঠক বৈষ্ণব গুরুরা, যারা কোনো দিন ভাগবত, গীতা, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ভালো করে পড়েও দেখেনি। রাধার সাথে কৃষ্ণের প্রেম ও বিবাহের কোনো ঐতিহাসিক দলিল না থাকলেও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে রাধার সাথে কৃষ্ণের বিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এই বিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং ব্রহ্মা। আমার এই কথার প্রমান পাবেন কলকাতার অক্ষয় লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের ৪০৩ নং পৃষ্ঠায়। যা হোক, বিয়ের আগেই তো ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের রাধা কৃষ্ণ, বাসর সেরে ফেলেছিল, এবার দেখা যাক বিয়ের পর তারা কীভাবে বাসর করছে এবং বৈষ্ণব গুরুদের মতে, সেখানে রাধা কৃষ্ণের অপার্থিব অপ্রাকৃত নিষ্কাম প্রেম আছে কি না?

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ‘শ্রীকৃষ্ণসহ রাধিকার বিহার’ পর্বে বলা হয়েছে,

বিভা (বিবাহ) দিয়া পদ্মাসন (ব্রহ্মা) করিল গমন।
দেখিতে দেখিতে রাত্রি করে আগমন।।
ঘন ঘন শ্রীরাধিকা কৃষ্ণপানে চায়।
ক্ষণে ক্ষণে নম্রমুখী বিষম লজ্জায়।।
কামবানে জর জর কাঁপে থর থর।
মূহুর্মূহু রতিপতি মারে খর শর।।
রাধা প্রতি কৃষ্ণ ধন করে দরশন। কামেতে উন্মত্ত হয়ে পড়ে দুইজন।।
……………..
………………
লজ্জাতে রাধিকা করে মুখ আচ্ছাদন।
এই রূপে ক্রীড়া করে সুখে দুই জন।।
ক্ষণপরে শ্রীরাধারে তুলি বক্ষপরে।
ঘন ঘন চুম্বে তার বদন কমলে।।
কামেতে মাতিল দোঁহে অপূর্ব দর্শন।
অধরে অধর দোঁহে করিছে দংশন।।
………………….
…………………..
বিকল দোঁহার অঙ্গ অজ্ঞান জীবন।
রতিক্রীড়া দোঁহে ক্রমে করে সমর্পন।।
নখ দন্তাঘাত কত দেহেতে হইল।
তবু মদনেতে মত্ত দোঁহেতে থাকিল।।
মুহুর্মুহু রতিক্রীড়া করে দুই জন।
ঘর্মজল অঙ্গ মাঝে দিল দরশন।।
অলকা তিলকা যত বিনষ্ট হইল।
নূপুরের মিষ্ট শব্দ বাজিতে লাগিল।।
……………………
……………………
এইরূপে রতিক্রিয়া হৈলে সমাপন।
বালরূপ পরে কৃষ্ণ ধরেন তখন।।
……………………
……………………
লাগলো প্রতিদিন রাত্রিকালে করি আগমন।
বিহার করিব আমি বলিনু বচন।।
নটবর সাজে আমি আসিব সুন্দরী।।

-এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, নন্দের কাছ থেকে শিশু কৃষ্ণকে নিয়ে যুবতী রাধা যখন গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করে, তখন কৃষ্ণ শিশুর রূপ ছেড়ে নাকি যুবকের রূপ ধারণ করে, হ্যাঁ, এই কথাই বলা আছে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের ৪০১ পৃষ্ঠায়, এভাবে-
তখন শিশুর রূপ করি বিসর্জন।
নটবর বেশ ধরে দেব সনাতন।।

-এই কথাই কৃষ্ণ আবার বলেছে ৪০৫ পৃষ্ঠায়, এভাবে- নটবর সাজে আমি আসিব সুন্দরী।।

–জন্মের পর থেকেই কৃষ্ণ সব অসাধ্য সাধন করেছে, যেমন- যমলার্জুন ভঙ্গ, রাক্ষসদের বধ, কালীয়নাগ দমন, গোবর্ধন পর্বত উত্তোলন, মুষ্টিকের সাথে লড়াই, কংসের সাথে লড়াই ও তাকে হত্যা এবং এসব করার সময় তাকে কখনো তার রূপ পাল্টাতে হয়নি, আর কৃষ্ণ যে এমন রূপ পাল্টাতে পারে বা তাকে কখনো রূপ পাল্টাতে হয়েছে, এমন কোনো নিদর্শন বা উদাহরণ হরিবংশ, মহাভারত, ভাগবতের কোথাও নেই কেনো? কোনো তথ্য প্রমান ছাড়া কোনো এক পুরাণ যদি হঠাৎ কোনো কথা বলে, সেই কথাকে কেনো বিশ্বাস করতে হবে? কৃষ্ণের শিশুরূপ ছেড়ে যুবক দেহ ধারণের কোনো ইঙ্গিত কোনো প্রমান হিন্দু শাস্ত্রের প্রামান্য কোনো গ্রন্থে না থাকলেও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে; কারণ, কৃষ্ণকে লম্পট ও যৌনকাতর পুরুষ প্রমান করতে এই লেখকের আর তর সইছিলো না, তাই সে কৃষ্ণের জীবনে কাম ও প্রেমের আবির্ভাব ঘটাতে এই থিয়োরি আবিষ্কার করেছে; কেননা, মূল কাহিনীতে তো আছে, যে কৃষ্ণ ১০ বছর ২ মাস বয়সে বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় চলে যাবে, তারপর সে আর কোনোদিন বৃন্দাবনে ফিরবে না, তাহলে যুবক কৃষ্ণের সাথে যুবতী রাধার প্রেম ও যৌনতা দেখাবে কিভাবে? তাই এই লেখক শিশুকৃষ্ণকে দিয়েই যৌনক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে, যাতে কৃষ্ণকে লম্পট ও চরিত্রহীন হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, কিন্তু কোনো শিশুর সাথে যুবতী মেয়ের প্রেম ও যৌনতা তো অসম্ভব, এই অসম্ভবকে সম্ভব করতেই ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের লেখকের এই অতি আশ্চর্য থিয়োরির আবিষ্কার-

নটবর সাজে আমি আসিব সুন্দরী।।

-এইভাবে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের লেখক এটা বুঝিয়েছে যে, পৃথিবীতে কৃষ্ণের অবতরণের একমাত্র কারণ শুধু প্রেম ও যৌনলীলা করা। কিন্তু গীতার ৪র্থ অধ্যায়ে ১০ম শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, পৃথিবীতে তার অবতরণের একমাত্র কারণ, অধর্মকে বিনাশ করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সেই পথে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসেবে তুলে না ধরে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের লেখক শ্রীকৃষ্ণকে যৌনকাতর ও লম্পট পুরুষ হিসেবে তুলে ধরেছেন, হিন্দুধর্মের প্রধান পুরুষ শ্রীকৃষ্ণের চরিত্রকে ধ্বংস করে হিন্দু সমাজকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে। আর সেটা না বুঝে, আমরা হিন্দুরা, হরিবাসরে কৃষ্ণ সম্পর্কে এসব কথা প্রচার করে তিলে তিলে হিন্দুধর্ম ও সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। যা হোক, শিশু কৃষ্ণের সাথে রাধা কেবল একদিন বা দুইদিন এই কুকর্ম করে নি, এটা ছিলো তার প্রতিদিনের কাজ, দেখুন নিচে-
প্রতিদিন রাত্রিকালে করি আগমন।
বিহার করিব আমি বলিনু বচন।।
…………………..
……………………
এই রূপে প্রতিদিন শ্রীমতি সুন্দরী।
বনমধ্যে ক্রীড়া করে লইয়া শ্রী হরি।।

শ্রীকৃষ্ণকে লম্পট প্রমাণে বাংলা পদ্য ভাগবতগুলো এবং ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রধান বিষয়গুলোর একটি হলো কৃষ্ণ কর্তৃক গোপীনীদের বস্ত্রহরণ। এই বস্ত্রহরণ পর্বের মূল উদ্দেশ্য ছিলো, মেয়েরা যাতে নগ্ন হয়ে জলে স্নান করতে না নামে সেই শিক্ষা প্রদান করা, অথচ পদ্য ভাগবত এবং ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ইনিয়ে বিনিয়ে নানাভাবে কৃষ্ণকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে মনে হয়, নগ্ন নারীদেহ দেখাই কৃষ্ণের একমাত্র উদ্দেশ্য এবং এভাবে কৃষ্ণকে লম্পট প্রমান করার চেষ্টা করা হয়েছে। মূল সংস্কৃত ভাগবতে তো রাধার কথাই নেই, তাই বস্ত্রহরণ পর্বে রাধার উল্লেখ থাকার প্রশ্নই আসে না। সুবোধ চন্দ্রের ভাগবতেও বস্ত্রহরণ পর্বে রাধার কোনো উল্লেখ নেই, কিন্তু বেণী মাধবের ভাগবতে বস্ত্রহরণ পর্বে রাধার উল্লেখ আছে, কিন্তু সেখানেও রাধার সাথে কৃষ্ণের প্রেমের সম্পর্কের কোনো ইঙ্গিত নেই। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে তো মিথ্যার ছড়াছড়ি, তাই বস্ত্রহরণ পর্বেও সেই মিথ্যা ধরা পড়েছে এভাবে-

কৃষ্ণ যখন গোপিনীদের কাপড় চোপড় তথাকথিত চুরি করে গাছে উঠে বসেছে, তখন-

ব্রজাঙ্গনা দেখে লয় রাখালে বসন।
জানাইল গোপীগণ শ্রীরাধা সদন।।
জলে স্থিতা কোপান্বিতা শ্রীরাধা তখন।
সঙ্গের সঙ্গিনীগনে করে আবাহন।।

-কিন্তু গোপিনীদের কথায় কৃষ্ণ তাদের বসন ফিরিয়ে না দিলে, একজন গোপিনী বলছে-

“চলহ সত্বরে, রাধার গোচরে জানাও এ সমাচার।” ( ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, অক্ষয় লাইব্রেরী, পৃষ্ঠা ৪৮১)

– রাধা যদি সেখানে জলে ডুবে উপস্থিতই থাকে, তাহলে গোপিনীরা আবার কেনো বলছে যে, চল, রাধাকে এই বিষয়টি জানাই?

যাই হোক, উপরের এই কথা শুনে কৃষ্ণ বলছে- “বলিলে তাহারে, সে রাধা আমারে, বল কি করিতে পারে। এ সত্য বচন, শুন গোপিগণ, নাহি রাখি ভয় তারে।’

আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, এই রাধার ভয়ে কৃষ্ণ একবার লুকিয়েছিলো এবং বিরজা ভয়ে জলের রূপ ধরে নদী হয়ে গিয়েছিলো, পরে রাধার রাগ ভাঙাতে কৃষ্ণ, রাধার পা পর্যন্ত ধরেছিলো, সেই কৃষ্ণ এখন বলছে, বল গিয়ে তাকে, তাকে আমি ভয় করি?

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের লেখকের কাহিনী বর্ণনা এবং চরিত্র নির্মান যে বাংলা সাহিত্যে একেবারে নিচু মানের, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, এই জন্য তিনি মিথ্যা বলতে গিয়ে বার বার ধরা খেয়েছেন, তারপরও হিন্দু সমাজের কিছু নির্বোধ ধর্মগুরু আছে, যারা প্রকৃত সত্যটাকে উপলব্ধিই করতে না পেরে এটাকেই ধর্মগ্রন্থ বলে মনে করে।

কৃষ্ণের লীলাগুলোর মধ্যে বস্ত্রহরণের পর জনসাধারণে বহুল চর্চিত বিষয় হলো রাস। এই রাস এতটাই জনপ্রিয় যে, লীলা কীর্তনের হরিবাসরে রাস একটা প্রধান বিষয় এবং রাস কতটা জমে বা কোনো নর্তকী রাস কতটা জমাতে পারে, তার উপরই নির্ভর করে হরিবাসরে সাফল্য বা সার্থকতা।

যাই হোক, রাস প্রসঙ্গে রাধা ভক্তদের জন্য একটা চরম দুঃসংবাদ হলো- মূল সংস্কৃত ভাগবতে রাধার নাম তো নেই–ই, তাই সেখানে রাস প্রসঙ্গে রাধাকে নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই, কিন্তু বাংলায় প্রচলিত বেণীমাধব শীলের ভাবগত এবং সুবোধচন্দ্র মজুমদারের ভাগবত, যেখানে রাধার অস্তিত্ব ইনিয়ে বিনিয়ে প্রমাণ করা চেষ্টা আছে, সেই ভাগবতগুলোতেও রাস অধ্যায়ে রাধার কোনো নাম নেই, যদিও এই দুই ভাগবতে রাস লীলার বর্ণনায় অশ্লীলতার ছাড়াছড়ি এবং রাস হলো একটা খোলামেলা সেক্স পার্টি, আমার কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হলে এই দুই ভাগবতের রাস অধ্যায়গুলো পড়ে দেখতে পারেন।

যাই হোক, সুবোধ এবং বেণীমাধবের ভাগবতে রাস অধ্যায়ে রাধার নাম না থাকলেও, রাস অধ্যায়ে রাধার নাম আছে এবং বেশ জমিয়ে আছে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের ৪৮৮ পৃষ্ঠায় শ্রীকৃষ্ণের রাসযাত্রা পর্বে বলা হয়েছে, রাধার ২৭ জন সখী ৩৮ লক্ষ ৯ হাজার গোপিনীকে সাথে নিয়ে রাসমণ্ডলে উপস্থিত হয় এবং তারপর সেখানে যা ঘটে তার কিছু অংশ আপনাদের জ্ঞাতার্থে নিচে নিবেদন করছি-

পুষ্প মধুপানে মত্ত ভ্রমরী সহিত।
এ সময়ে রাধা রাসে হৈল উপনীত।।
…………………..
……………………
দেখিয়া রাধারে কৃষ্ণ কামেতে মোহিতা।
সখীগণমধ্যে রত্ন ভূষণে ভূষিতা।।

এ প্রসঙ্গে বলে রাখছি এবং আমার পাঠকদের এই তথ্যটি ভালো করে মনে রাখার জন্য অনুরোধ করছি যে রাসলীলার সময় কৃষ্ণের বয়স কিন্তু ছিলো মাত্র আট। এই আট বছর বয়সী বালক কৃষ্ণকে দিয়ে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের লেখক কিভাবে যৌনলীলা করাচ্ছে, সেই বিষয়টি একটু গভীর দৃষ্টি দিয়ে বিবেচনা করবেন, আর ভাববেন এই ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ রচনার আসলে উদ্দেশ্যটা কী ছিলো?

যাই হোক, ৮ বছর বয়সী কৃষ্ণ, রাধাকে দেখেই কামে মোহিত হয়ে যায় এবং কৃষ্ণ এমন মদন বাণ ছাড়ে যাতে-

মূর্চ্ছিত হইল রাধা মদনের বাণে।
শ্রীঅঙ্গ পুলকিত কামে হতজ্ঞানে।।
………………….
…………………..
ক্ষণেক চেতনা পেয়ে শ্রীরাধা সদন।
আইলেন মনোল্লাসে মদনমোহন।।
রাধার করিলা কৃষ্ণ শ্রীমুখ চুম্বন।
কৃষ্ণ-অঙ্গ-সঙ্গে রাধা পাইল চেতন।।
প্রাণাধিক প্রাণকান্তে করি আকর্ষণ।
শ্রীরাধা করেন কামে বদন চুম্বন।।
বচনে হরিলা কৃষ্ণ মানস রাধার।
রসিকা আইল দেখি কামের আগার।।
………………..
…………………
তদন্তর তথা কামে সুরতি উন্মুখে।
শুইলা রাধার অঙ্গে রতিকল্পে সুখে।।
শৃঙ্গার অষ্ট প্রকার বিপরীত মত।
করেন কোমল অঙ্গে নখ দন্তে ক্ষত।।
কামশাস্ত্রে সুগোপন অষ্টম প্রকার।
চুম্বন করেন কৃষ্ণ রণে পারাবার।।
অঙ্গে অঙ্গে প্রত্যঙ্গে প্রত্যঙ্গে কামপরে।
কামুক কামুকীদ্বয় আকর্ষণ করে।

– এই রাধা কৃষ্ণের প্রেম নাকি- নিষ্কাম, অপার্থিব, অপ্রাকৃত ?!

যাই হোক, তার বলা হয়েছে,

শৃঙ্গার কুশল কামশাস্ত্রে সুপণ্ডিত।
রতি যু্দ্ধ বিরাম না হয় কদাচিত।।
এইমত ঘরে ঘরে নানামূর্তি ধরি।
রমন গোপীর সঙ্গে রাস করে হরি।।
অভ্যন্তরে রতিক্রিয়া করিয়া সাদরে।
কত মত রাসক্রীড়া করেন বাহিরে।।
রাসেতে বিহার করে গোপ গোপীগণ।
নব লক্ষ গোপী নব লক্ষ গোপজন।।
এই অষ্টাদশ লক্ষ শ্রীরাস-মণ্ডলে।
গোপ আর গোপীকার বিহার সে স্থলে।।
মুক্তকেশ নগ্নবেশ বিচ্ছিন্ন ভূষণ।
প্রমত্ত মূর্চ্ছিত সবে কামে অচেতন।।
………………..
…………………
এই মত ক্রীড়া করি সবে কুতূহলে।
ততপরে বিহার করে যমুনার জলে।।
জলক্রীড়া করি পরিশ্রান্ত জনে জন।
উঠিয়া পরিল সবে স্বকীয় বসন।।

রাস মণ্ডলের এই বর্ণনার পর, “শৃঙ্গার রহস্য” পর্বে বলা হচ্ছে-

কেহ কামরসে, প্রেমের সাহসে, নগ্ন করি শ্রীহরিরে।
কাড়ি পীতবাস, কৌতুকেতে হাস, আনন্দে রতি মন্দিরে।
…………………….
…………………….
করি আকর্ষণ, বদন চুম্বন, পুনঃ পুনঃ আলিঙ্গন।
আননে আনন, করি আরোপন, ঘর্ষণ স্তন জঘন।
কোন গোপীগন, করান দর্শন, বক্ষোপরি সুললিত।
কান্ত করে ধরি, রাখি তদুপরি, করেন চূড়া নির্মিত।।
…………………
………………….
সব বরাঙ্গনা, কামে মত্তমনা, কৌতূকের নাহি পার।
গোপে নিলে হরি, সেই ত মুরারী, আনি দেয় পুনর্বার।।
কেহ নগ্ন করি, কানে কান্ত হারি, ক্রোড়ে করে কুতূহলে। কেহ রঙ্গভরে, সুখে নৃত্য করে, কান্তে রাখি মধ্যস্থলে।।
সুনির্জন বনে, নাচে কোন জনে, হরিয়া কৃষ্ণের বাস।
সেই বস্ত্র দ্বারে, নগ্না গোপিকারে, সাজায়ে কৌতূকে হাস।
কৃষ্ণ কুতূহলে, নিজ বক্ষঃস্থলে, বসাইল শ্রীরাধারে। আনন্দে শ্রীহরি, রাধার কবরী, নির্মায় স্বকর দ্বারে।।
………………….
…………………..
স্তন শ্রেণীভাগে, কাম অনুরাগে, নখেতে করেন চিত্রিত। দন্তেতে দলন, করে ঘন ঘন, বিম্বাধর সুললিত।
……………….
……………….
শৃঙ্গার বাসরে, চেতন অন্তরে, বরিয়া রাস বাসর। নখদন্তাঘাত, করে অচিরাত, কামশরে পরস্পর।।
গোপী স্তনোপরে, কৃষ্ণাঘাত করে, কর কমলে সঘন।
শ্রেণীর উপরে, নখচিত্র করে, হৈল অপূর্ব শোভন।।
কামে মত্তানন্দ, শ্লথ নীধিবন্ধ, ক্ষুদ্র ঘন্টিকা কবরী।
বসন ভূষণ, রত্ন আভরণ, গোপীর হরিল হরি।।
নবধা প্রকার, আলিঙ্গন আর, অষ্টম মত চু্ম্বন। ষোড়শ শৃঙ্গার, করে অনিবার, রাসেশ্বর সনাতন।।
অঙ্গে অঙ্গে মিলে, ভিন্ন নহে তিলে, ব্রজাঙ্গনা অঙ্গ সঙ্গ।
করে আলিঙ্গন, কামে মগ্ন মন, নাহি তার ক্ষণভঙ্গ।।

-ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে এই হলো কৃষ্ণের রাসলীলা, যদিও আমি একে বলি ওপেন সেক্স পার্টি।

যাই হোক, যদিও এক জায়গায় বলা হয়েছে,
রাসেতে বিহার করে গোপ গোপীগণ।
নব লক্ষ গোপী নব লক্ষ গোপজন।।

-কিন্তু অন্য এক জায়গায় রাধার ২৭ জন সখী মিলে যতজন গোপিনীকে রাস মণ্ডলে নিয়ে এসেছে, তার সংখ্যা ৩৮ লক্ষ, ৯ হাজার। এখন এই সংখ্যাতত্ত্বের দিকে একটু খেয়াল করুন, এক জায়গায় বলা হচ্ছে মোট ১৮ আঠার লক্ষ, অন্য জায়গায় হিসেব দেওয়া হচ্ছে ৩৮ লক্ষের! ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের লেখক যদি সত্য কাহিনী বর্ণনা করতো, তাহলে কিন্তু এমন হতো না। যা হোক, এই দু্ই হিসাবের মধ্যে ৩৮ লক্ষের হিসাবটাই নিচ্ছি; কারণ, রাধার ২৭ জন সখী মিলে এই ৩৮ লক্ষ ৯ হাজার জনকে রাসমণ্ডলে নিয়ে এসেছে এবং এই সংখ্যক যুবতী মেয়ে যদি সেই সময় বৃন্দাবনে থাকে, তাহলে আরও কমবেশি ৩৮ লক্ষ সক্ষম পুরুষ ছিলো বৃন্দাবনে, ছিলো তাদের বাপ মা মানে বৃদ্ধ বৃদ্ধা, এই সংখ্যা আরও কম বেশি ৩৮ লক্ষ; ছিলো ছেলে মেয়ে, ৩৮ লক্ষ যুবতী বধূর কম পক্ষে ৭৬ লক্ষ সন্তান থাকা সম্ভব, তাহলে সব মিলিয়ে সেই সময় বৃন্দাবনের লোক সংখ্যার হিসেব দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২ কোটি, যা বর্তমানের ঢাকা বা দিল্লি বা মুম্বাইয়ের লোক সংখ্যার সমান। সেই ৫২০০ বছর আগে সারা ভারত মিলেও ২ কোটি লোক ছিলো না, আর এক বৃন্দাবনেই ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের লেখক ২ কোটি জনসংখ্যার কথা বলছে, এই একটি তথ্য থেকেই প্রমাণিত হয় যে, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের সব কথা মিথ্যা।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ সম্পর্কিত আলোচনার এই দ্বিতীয় পর্বে- শিশুকালেই রাধা কর্তৃক কৃষ্ণকে ধর্ষণ, বস্ত্রহরণ এবং রাসলীলার পর্ব আলোচনা করে দেখালাম যে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে কিভাবে লম্পট ও চরিত্রহীন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এসব বিষয় থেকে এটা স্পষ্ট যে কৃষ্ণকে লম্পট ও চরিত্রহীন হিসেবে তুলে ধরে শ্রীকৃষ্ণের স্বর্গীয় মহিমাকে ধ্বংস করে হিন্দুধর্ম ও হিন্দু সমাজকে ধ্বংস করাই ছিলো এই পুরাণের লেখক এবং পৃষ্ঠপোষকদের মূল উদ্দেশ্য, তাই আমি আমার পাঠক বন্ধুদের কাছে এই অনুরোধ করবো, এই পুরাণের সত্যটা আজ থেকে আপনারা জানলেন, এখন এর বিষয়বস্তু রাধা ও কৃষ্ণের অনৈতিক প্রেমের প্রচারের বিরুদ্ধে যে যেভাবে পারেন প্রতিবাদ জানান এবং কৃষ্ণের স্বর্গীয় মহিমাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে হিন্দুধর্মকে কলঙ্কমুক্ত করে সকল হিন্দুকে হিন্দুধর্ম নিয়ে গর্ব করতে শেখান, যেন সবাই গর্বভরে উচ্চারণ করতে পারে, জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ। জয় হিন্দ। ✍️রূপকদা (ফেসবুক থেকে নেওয়া, কোনও পরিবর্তন না করেই প্রকাশ করা হল।)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *