চপ শিল্প না চললে ঢপ শিল্প করুন, ওটাই এখন রাজ্যে চলছে: মিঠুন

সাথী দাস, পুরুলিয়া, ২৩ নভেম্বর: “চপ শিল্প না চললে হলে ঢপ শিল্প করুন। ওটাই এখন রাজ্যে চলছে।” পুরুলিয়ার হুড়ার লোধুড়কায় দলীয় কর্মী সম্মেলনের মঞ্চ থেকেই এই ভাবেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেকার যুবকদের চপ ভাজার পরামর্শকে কটাক্ষ করলেন ‘এমএলএ ফাটা কেষ্ট’ মিঠুন চক্রবর্তী।

বিজেপির রাজনৈতিক মঞ্চে নেতা হিসাবে নয়, মিঠুন এলেন অভিনেতা হিসাবে। বুধবার লধুড়কার সভায় উপস্থিত হন নায়কের মতো। মিঠুন বলেন, আজ আমি ভাষণ দিতে আসিনি, শুনতে এসেছি। মানুষের কথা শুনে নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে দেব। উপস্থিত দর্শক, বিজেপি সমর্থকদের হাতে মাইক্রোফোন দিতে বলেন তিনি। তাঁদের সমস্যা অসুবিধা জানতে চান মিঠুন চক্রবর্তী। মোট ১৩ জন মানুষের কথা শোনেন তিনি। কেউ সরকারি আবাস পাননি, কেউ বার্ধক্য ভাতা পাননি। এমনকি জোর করে পঞ্চায়েত দখল করার কথাও বলেন কয়েকজন। চপ শিল্প করেও যে লাভদায়ক ফল হয়নি, তাও জানান হুটমুড়ার এক চপ বিক্রেতা যুবক। ঐ ব্যক্তি বলেন, “দিদির অনুপ্রেরণায় চপ শিল্পে উদ্যোগী হয়েছি। দোকান করেছি। কিন্তু চপ বিক্রি হচ্ছে না। আর অন্য কাজও নেই।” মিঠুন উত্তরে বলেন, চপ বিক্রি না হচ্ছে তো ঢপ বিক্রি করুন এটাই রাজ্যে চলছে। পশ্চিমবঙ্গে দিনে দুপুরে পুকুর চুরি হয়।” তৃণমূলের নাম না করে স্থানীয় অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন তিনি। বলেন, “পুরুলিয়াতেও প্রকাশ্যে পাহাড় চুরির রেকর্ড আছে ওদের। যেখানে রামের টাকা শ্যামকে দেওয়া হয়, সেখানে আপনার পাওনা টাকা কে খাচ্ছে বুঝে নিন। কেন্দ্রের মোদী সরকার যথেষ্ট টাকা দিচ্ছে। কিন্তু মাঝখানে হাপিশ করে দিচ্ছে একজন। তাই আপনারা ঘর পাচ্ছেন না। ন্যায্য সুবিধা পেতে হলে, মাঝের মানুষটাকে বিদায় করুন।”

মিঠুন চক্রবর্তী বলেন, আপনাদের সমস্ত কথা শুনলাম। ঠিক জায়গায় এই তথ্য পৌঁছে দেব। পুরুলিয়ার ছয়জন বিধায়ক আছেন, সাংসদ জ্যোতির্ময় দা(জ্যোতির্ময় সিং মাহাত) আছেন। কাজ হবে। সোনার বাংলা গড়া কেউ আটকাতে পারবে না। আজ না হয়, কাল হবে।” দলের নীচুতলার কর্মীদের উদ্দেশ্যে মিঠুন বলেন, চিন্তা করবেন না। পঞ্চায়েতে পাল্টে দিন। তৃণমূল কংগ্রেস পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত দুর্নীতির সিস্টেম তৈরী করেছে। তার ভিতটা আগে ভাঙুন। না হলে সাধারণ মানুষ কিচ্ছু পাবে না। এখানে তৃণমূলের প্রিয় লোক হলে সব পাওয়া যায়। আপনারা বিজেপি করেন, তাই সরকারি পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। তবে আপনারাই পারবেন আসল পরিবর্তন নিয়ে আসতে। জেলা পরিষদ দখল করুন। মিঠুন চক্রবর্তী আবার আসবে।”

বক্তব্যের শুরুতে রাজনীতির কথা না বলেও, মিঠুন চক্রবর্তী দুঁদে রাজনীতিকের মতো ছুঁয়ে গেলেন আদিবাসী ভাবাবেগ। তিনি বলেন, “দ্রৌপদী মুর্মু ভারতের সম্মান। আদিবাসী সম্প্রদায়ের গৌরব। কিন্তু অখিল গিরির মতো তৃণমূল নেতারা আদিবাসীদের জাত্যাভিমানকে আঘাত করেছেন। জঙ্গলমহলের আদিবাসীরা বুকে গেঁথে রাখুন এই অপমান। আগামী পঞ্চায়েতে আপনারাই এর জবাব দেবেন।”

এদিন সভা মঞ্চে মিঠুন চক্রবর্তীর হাত ধরে তৃণমূলের ১৭২ টি পরিবার বিজেপিতে যোগ দেন। মূলত ঝালদা ২ ব্লক, জয়পুর এবং পাড়া ব্লকের বেশ কিছু নেতা ও পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপিতে যোগ দেন। এদিন রাজ্য বিজেপির সভাপতি না আসায় পুরুলিয়ায় সাংগঠনিক সভা বাতিলের কথা ঘোষণা করেন জেলা বিজেপি সভাপতি বিবেক রাঙা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *