আদিবাসী উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছায়নি রায়গঞ্জের এক আদিবাসী পরিবারে, দুই কন্যা সন্তান নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন অসুস্থ বাহামণি হেমব্রম

স্বরূপ দত্ত, আমাদের ভারত, উত্তর দিনাজপুর, ১৭ জুলাই: রাজ্য সরকারের আদিবাসী উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছায়নি রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন সোহারই মোড়ের এক আদিবাসী পরিবারে। সেই ছবিই ধরা পড়ল আমাদের ক্যামেরায়। দুই কন্যা সন্তান নিয়ে অনাহার আর অর্দ্ধাহারে অসুস্থ অবস্থায় চরম কষ্টে দিন কাটছে বছর ছাপ্পান্নর গুরুতর অসুস্থ বিধবা আদিবাসী মহিলা বাহামণি হেমব্রমের। দুই পায়ে গোদ নিয়ে চিকিৎসাহীন অবস্থায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন গোটা পরিবার। স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানলেও কিছু সুরাহা করতে পারেননি কেন তার কোনও উত্তর নেই। স্থানীয় বাদিন্দারাও আশায় রয়েছেন যদি কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা সরকারি পরিষেবা পায় দুর্দশাগ্রস্থ আদিবাসী পরিবারটি।

বেশ কয়েক বছর আগে সাইকেল সারাইয়ের কাজ করা স্বামীকে হারিয়েছেন রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন সোহারই এলাকার বাসিন্দা অসুস্থ বাহামণি হেমব্রম। বর্তমানে দুই কন্যা সন্তান একজন বাসন্তী বেসরা সুভাষগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ের এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আর অপরজন ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্রী ঝুমা বেসরা। একমাত্র রোজগেরে ছেলে গাড়ি চালকের কাজ করে। সে পরিবার ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে। দুই মেয়ে নিয়ে বাহামণি হেমব্রমের আয় বলতে কিছুই নেই। প্রায় দিনই অনাহারে কাটাতে হয় তাদের। পড়াশোনার খরচ চালানো তো দূর অস্ত। এদিকে বাহামণি হেমব্রমের দু’পায়ের গোদ বেড়েই চলেছে, চিকিৎসা করানোর মতো অবস্থাও নেই।

অসুস্থ আদিবাসী বৃদ্ধা বাহামণি হেমব্রম বলেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে এই রোগে ভুগছেন তিনি। এখানকার চিকিৎসকরা বলেছেন বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে। সেই সামর্থ্য তাঁর নেই। ভীষণ অসহায় হয়ে তিনি বলেন, একমাত্র রোজগেরে ছেলে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে। এখন সংসারে আয় বলে কিছু নেই। কিভাবে দু’বেলা পেটের ভাত জোগাড় করব আর কিভাবেই বা চিকিৎসা করাবো বা মেয়ে দুটোর পড়াশুনা চালাবো? গ্রামের বাড়ি বাড়ি সার্ভে করতে গিয়ে এই পরিবারটির খোঁজ পেয়েছিলেন সরকারি সার্ভে টিম। ভীষণ অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে রয়েছে আদিবাসী পরিবারটি।

বাহামণির মেয়ে বাসন্তী বেসরা জানিয়েছে, একমাত্র রোজগেরে দাদা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে। খুবই অসুবিধার মধ্যে দিন কাটছে তাঁদের। পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের বিনামূল্যে রেশনের চাল দিয়ে কোনওমতে একবেলা খাওয়া হয়। তাও সবদিন খাওয়া জোটে না। কোনও সহৃদয় ব্যক্তি যদি তাঁদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে ওঁরা উপকৃত হয়।
একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বহুদিন আগে ওদের একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই কোনওমতে তিনটি প্রাণী মাথা গুঁজে থাকেন। অসুস্থ বাহামণি হেমব্রমের চিকিৎসার জন্য বহু জায়গায় ঘুরেও কোনও সুরাহা হয়নি।

স্থানীয় ৮ নং বাহিন গ্রামপঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সদস্য প্রধান মুর্মু জানিয়েছেন, বাহামণি হেমব্রমের অসহায়তার কথা তিনি জানেন, বার্ধক্য ভাতা ও চিকিৎসার জন্য বহুবার রায়গঞ্জ ব্লকে ঘুরেছেন কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। প্রয়োজনে তিনি ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তদারকি করবেন। নিজে অসুস্থ, তার উপর দুই মেয়ে পড়াশোনা করে কিন্তু ঘরে খাবারের ব্যাবস্থা নেই চিকিৎসা করানোর কথা মাথায় আনতে পারছেন না চরম অসহায় বাহামণি হেমব্রম। বাহামণির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা এখন পথ চেয়ে বসে আছেন সরকার বা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যদি সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। কেউ যদি তাদের পেটের জ্বালা মেটাতে এগিয়ে আসে সেই দিকেই তাকিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *