আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ৩ সেপ্টেম্বর: কোভিড পরিস্থিতিতে মানুষ প্রায় দেড় বছর ঘরবন্দী হয়ে রয়েছে। তবে এই সময়কালে অবাধ বিচরণ বেড়েছে বন্যপ্রাণীদের। যার অনেকটা প্রমাণিত বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বিগত দেড় বছরের ট্রাপ ক্যামেরা রিপোর্ট।
বক্সার বনাধিকারিকদের থেকে পাওয়া তথ্য বলছে বিগত দেড় বছরে কোভিড পরিস্থিতিতে জাতীয় উদ্যানের ভেতর লাগানো ট্রাপ ক্যামেরায় ধরা দিয়েছে কমবেশি ১১টি বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণ। গত দেড় বছরে অন্তত ৫ বার ক্লাউডেড লেপার্ড, ৩ বার ব্ল্যাক প্যান্থারের ছবি উঠেছে। পাশপাশি বুনো কুকুর, ভাল্লুক, সজারু, প্যাঙ্গোলিন, ৪ প্রজাতির হরিণ, বাইসন ভোরাল, হিমালয়ান থর রয়েছে এই তালিকায়। কার্যত লোক চক্ষুর আড়ালে থাকা লেজার ক্যাট, এশিয়াটিক গোল্ডেন ক্যাটের ছবি তুলতেও সক্ষম হয়েছে গোপন ট্রাপ ক্যামেরাগুলো।
উল্লেখ্য, সাধারণ লেপার্ড ছাড়া বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে বরাবরই ক্লাউডেড লেপার্ড, ব্ল্যাক প্যান্থারের অস্তিত্ব রয়েছে। বিলুপ্ত প্রায় হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার কদাচিৎ চোখে পড়ে বনকর্মীদের। তবে এবার বিগত দিনের থেকে অত্যাধিক মাত্রায় সাড়া মিলেছে এই ট্রাপ ক্যামেরার ছবিতে। বনদফতর সুত্রে জানা গেছে, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভেতর কমবেশি ৩০০টি ট্রাপ ক্যামেরা পাতা রয়েছে। বক্সা বাঘবনের ভূটান সীমান্ত লাগোয়া পাহাড়ি এলাকায় গত দুই বছর ধরে পাতা হয়েছে স্থায়ী ক্যামেরা। সমতলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্থান পাল্টে পাল্টে ব্যাবহার করা হচ্ছে ক্যামেরা। প্রতিটি ক্যামেরাই অত্যাধুনিক ইনফ্রারেড প্রযুক্তির।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেকটার বুদ্ধরাজ শেওয়া বলেন, “বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জীব বৈচিত্র্য বরাবরই যথেষ্টই ভালো। আমরা এনটিসিএ-কে ইতিমধ্যেই আরও ১৫০টি ক্যামেরার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অর্থ বরাদ্দ হলেই আরও নতুন ক্যামেরা বসানো হবে।”
এদিকে বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার স্বার্থে আপাতত সাম্প্রতিক উঠে আসা ছবি প্রকাশ করছে না বনদফতর। বনকর্তাদের মতে অনেক সময় বক্সার মত গভীর জঙ্গলের জীব বৈচিত্র্য খালি চোখে ধরা পড়ে না। বিশেষ করে নিশাচর প্রাণীদের ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে ইনফ্রারেড ক্যামেরা না থাকলে বিভিন্ন প্রজাতির বনবিড়াল, সজারু, ব্ল্যাক প্যান্থার, ক্লাউডেড লেপার্ডের ছবি উঠে আসা যথেষ্টই কঠিন ছিল। ৪ প্রজাতির হরিণের মধ্যে স্পটেড ডিয়ার, বার্কিং ডিয়ার, সম্বর সহজেই দেখা পাওয়া গেলেও হগ ডিয়ার, হিমালয়ান থর, ভোরাল প্রায় লোক চক্ষুর আড়ালেই থাকে বছরভর। তবে ট্রাপ ক্যামেরাগুলোতে এখনও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া না গেলেও অপ্রত্যক্ষভাবে তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ রয়েছে বনদফতরের কাছে। যদিও এদিন পর্যন্ত একটিও ছবি ট্রাপ ক্যামেরায় বন্দি করা সম্ভব হয়নি।
তবে কোভিড পরিস্থিতিতে গত রায় দেড় বছরে জঙ্গলে পর্যটকদের আনাগোনা ছিল সামান্যই। যানবাহনের অত্যাচারও তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম ছিল। স্বাভাবিকভাবে খালি চোখেও আগের তুলনায় অনেক বেশি বন্যপ্রাণ নজরে এসেছে বাঘ বনের ভেতরে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানান, “বক্সার জীব বৈচিত্র্য, বাস্ততন্ত্র যে যথেষ্টই ভালো, সুস্থ স্বাভাবিক রয়েছে তা ক্যামেরায় ধরা পড়া বন্যপ্রাণীর ছবিতেই পরিস্কার হয়ে যায়। বিড়াল প্রজাতির যতগুলি প্রাণী বক্সাতে দেখা যায় তেমনটি দেশের খুব কম অরন্যেই রয়েছে।