দাদা ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত পুজো জৌলুস হারিয়েছে সিমলান্দি গ্রামে

আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ১৬ অক্টোবর: অর্থাভাবে জৌলুসহীন কথাশিল্পী ও সাংবাদিক শরৎ চন্দ্র পণ্ডিতের মামার বাড়ির দুর্গাপুজো। বর্তমানে টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়েছে বীরভূমের নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের সিমলান্দি গ্রামের ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো।
১৯৮১ সালের ২৭ এপ্রিল নলহাটির সিমলান্দি গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শরত চন্দ্র পণ্ডিত। বাংলা সাহিত্যের পাঠক সমাজে তিনি দাদাঠাকুর নামেই পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি কথাশিল্পী ও সাংবাদিক। যিনি মুখে মুখে ছড়া, হেঁয়ালি ও হাস্যকৌতুক রচনা করতেন। তাঁর রচিত নানান হাসির গল্প বাঙলা সাহিত্যের অমর কীর্তি। তাঁর পিতৃভূমি ছিল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে।

তবে দাদাঠাকুর সময় পেলেই মামার বাড়িতে আসতেন। বিশেষ করে দুর্গাপুজোয় অংশগ্রহণ করেছেন বহু বছর। নিজে উদ্যোগে পুজো করেছেন। প্রায় ২০০ বছর আগে পুজোর সূচনা করেন জমিদার ক্ষীরোদ চন্দ্র রায়। তাঁর মৃত্যুর পর পুজোর দায়িত্ব নেন জামাতা বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য। সেই থেকে পুজো ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো নামে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমান পুজো উদ্যোক্তা অনিন্দ্য সুন্দর ভট্টাচার্য বলেন, “বোধনের দিন থেকে পুজো শুরু হয়। সেই দিন থেকে প্রতিদিন পাঁচ ফুল ও পাঁচ ফল দিয়ে পুজো করা হয়। প্রতিদিন চণ্ডীপাঠ করা হয়। এক সময় নবমীর দিন দুই সহস্রাধিক মানুষ এখানে প্রসাদ গ্রহণ করতেন। কিন্তু বর্তমানে অর্থাভাবে গ্রামের কয়েকজন শিশুকে সেবা করিয়ে নিয়ম রক্ষা করা হয়”।

এই পুজো হয় শাক্ত মতে। পুজোর বলিদানের মাংস ও মাছ দিয়ে মাকে ভোগ দেওয়া হয়। নবমীর দিন খিচুরি ভোগ দেওয়া হয়। আগে মানুষের কাঁধে চড়ে মা দুর্গার শোভাযাত্রা করা হত। বর্তমানে যন্ত্রচালিত ভ্যানে মা দুর্গার শোভাযাত্রা করা হয়। তবে বহু মানুষ মনস্কামনা পূরণ করতে এই পুজোয় মানসিক করেন। তবে এবার করোনার কারনে সেই পুন্যার্থীর সংখ্যাও কম। অনিন্দ্যবাবু বলেন, “বর্তমানে জিনিসপত্রের যা দাম তাতে পুজো টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার ক্লাবের পুজোকে টাকা দিচ্ছে। সাবেকি পুজোর দিকের একটু নজর দিলে প্রাচীন ঐতিহ্য বহনকারী পুজোগুলি ফের জৌলুস ফিরে পেত।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *