মেদিনীপুরে ডাইনি সন্দেহে এক আদিবাসী মহিলাকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ, গ্রেফতার ১০

জে মাহাতো, আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ৫ ডিসেম্বর: মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে ডাইনি সন্দেহে এক আদিবাসী মহিলাকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন অধিবাসীর বিরুদ্ধে। মারের চোটে গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই মহিলা। তাঁর শরীরে গুরুতর চোট রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোটা ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যা। তিনি সময় মত উদ্যোগ না নিলে ওই মহিলার জীবন সংশয় হয়ে যেত।

পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের সাতগেড়িয়া এলাকায়। মেদিনীপুর কেশপুর রাজ্য সড়কে পাঁচখুরি থেকে সামান্য পশ্চিম দিকে সাতগেড়িয়া গ্রামের অবস্থান। সাঁওতাল জনজাতি ভুক্ত এই গ্রামের অধিবাসীরা প্রায় অসুখ বিসুখে ভুগে থাকেন এমন কারণ দেখিয়ে গ্রামের কয়েকটি পরিবারকে দীর্ঘদিন ধরে ‘ডাইনি’ আখ্যা দিয়ে গ্রাম ছাড়া করে দেওয়া হয়েছিল। মোট ৬টি পরিবারের সদস্য ও সদস্যাকে ডাইনি বলে জানিয়েছিল জানগুরু বা ওঝা। সেই মত গ্রামের মোড়লরা ৬টি পরিবারের ৬জনকে গ্রামছাড়া করে।

জানাগেছে, দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর কিছুদিন হল ৩ জন গ্রামে ফিরেছে। ওই ৩ জন বাড়ি ফেরার খবর পেয়ে আরেক বাড়ি ছাড়া মহিলা বছর পঞ্চাশের মাদো হাঁসদা শনিবার গ্রামে ফেরেন। মাদো পাশের গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে মাদো যখন নিজের গ্রামের বাড়িতে ফেরেন তখন তাঁর দুই ছেলে বাড়িতে ছিল না। তাঁরা অন্য গ্রামে কিছুদিনের জন্য চলে যান ধান কাটতে। বাড়িতে শুধু বউমা’রা ছিল। মাদো বাড়ি ফিরেছে খবর পেয়ে গ্রামের কিছু ব্যক্তি ও মহিলা মাদো’র বাড়িতে চড়াও হয়। গ্রামে ফেরার অপরাধে তাকে বেধড়ক মারধর শুরু হয়।

এই খবর পেয়েই স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যা সোনামণি হাঁসদা কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন এবং মাদোকে তাঁদের হাত থেকে উদ্ধার করে প্রথমে পাঁচখুরি হাসপাতাল এবং পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে মহিলার পাশে এসে দাঁড়ান ভারত জাকাত মাঝি পরগনার ব্লক নেতা ও শিক্ষক সনাতন মুর্মু ও অধ্যাপক বিপিণ মুর্মু প্রমুখরা। মাদোর পরিবার জানিয়েছেন সময়মত পঞ্চায়েতে সদস্যা না ছুটে আসলে নিশ্চিত মৃত্যু ছিল বৃদ্ধার।

রবিবার মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে মাদোকে দেখতে যান বিধায়ক দীনেন রায়, সনাতন মুর্মু প্রমুখরা। দীনেন রায় জানান, মহিলার শরীরে গুরুতর আঘাত রয়েছে। প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি ওই এলাকায় একটি সচেতনতা শিবির করব আমরা। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষদের নিয়ে কিছু কর্মসূচি নেওয়া হবে।

শিক্ষক সনাতন মুর্মু বলেন, ‘অশিক্ষার সুযোগ নিচ্ছে কিছু ভন্ড মানুষ। শুনেছি ওই গ্রামের মোড়লরা ডাইনি ধরার জন্য জানবাবা নামে কার কাছে গিয়েছিল। ঘাটাল থেকে হুগলী গেছে জানগুরুর খোঁজে। সেই জানগুরু আবার আদিবাসীও নন। মহিলা সুস্থ হওয়ার পর আমরা আমাদের সমাজের পক্ষ থেকে ওই গ্রামে আলোচনায় বসবো। প্রশাসনের কাছে আবেদন ওই ভণ্ড জানগুরুরকে খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করা হোক।’ কোতোয়ালি থানার পুলিশ এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ১০জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *