বিজেপির রাজ্য সংগঠন সম্পাদক পরিবর্তনের ইঙ্গিতে শুরু হয়েছে তীব্র অসন্তোষ

আমাদের ভারত, কলকাতা, ১২ অক্টোবর: বিজেপির রাজ্য সংগঠন সম্পাদক সুব্রত চ্যাটার্জিকে কি সরিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় কি আনা হচ্ছে অমিতাভ চক্রবর্তী’কে? রাজ্য বিজেপিতে এখন এই বিষয় নিয়ে তুমুল জল্পনা শুরু হয়েছে। অভিযোগ, সুব্রত চ্যাটার্জি’কে বসিয়ে রেখে সমস্ত কাজ করানো হচ্ছে অমিতাভ চক্রবর্তী’কে দিয়ে। এই নিয়ে বিজেপির অন্দরে শুরু হয়েছে তীব্র অসন্তোষ। অমিতাভ চক্রবর্তী যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দলের একাংশ।

বেশ কিছুদিন ধরেই সুব্রত চ্যাটার্জিকে সংগঠন সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জল্পনা চলছিল। সেই জল্পনা তীব্র আকার ধারণ করল দলের সহকারী সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীকে সংগঠন সম্পাদক করার খবর প্রকাশ্যে আসতে। আর এই নিয়ে তীব্র অসন্তোষ শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। এই ক্ষেত্রেও আরএসএসের ক্ষেত্রীয় প্রচারক প্রদীপ জোশির নাম জড়িয়েছে। দলের একাংশের বক্তব্য, প্রদীপ জোশির ইচ্ছাতেই এখন বিজেপিতে বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চ্যাটার্জি দীর্ঘদিন একাই দলের সংগঠন সামলেছেন। পরবর্তীকালে দুজন সহায়ক দেওয়া হয়। প্রথমে সহ সংগঠন সম্পাদক করা হয় কিশোর বর্মনকে। এরপর বছরখানেক আগে ওড়িশা বিজেপির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে এনে অমিতাভ চক্রবর্তীকেও সহ সংগঠন সম্পাদক করা হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। দুজনেই এবিভিপি থেকে রাজনীতিতে এসেছেন। দলের একাংশের বক্তব্য, এবিভিপিতে সেরকম ভাবে সফল কিছু করতে পারেননি তাঁরা। কোনওদিন ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্র সংগঠন করতে পারেনি তারা। বাইরে থেকেই বছরে কয়েকটা মিছিল করে আর কলেজ স্ট্রিটে কুশপুতুল দাহ করার মধ্যেই ছাত্র সংগঠন সীমিত রেখেছিলেন। তাদের বক্তব্য, যাঁরা ছাত্র সংগঠনে সফল হতে পারেনি, তাদের কেন সহ সংগঠন সম্পাদক করে রাখা হয়েছে? বিজেপির এই রমরমা সময়ে দায়িত্ব নেওয়ার পরও তাঁরা তেমন কিছুই করতে পারনেনি। অথচ আরএসএসের ক্ষেত্র প্রচারক প্রদীপ যোশীর হাত তাদের মাথায় থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এর আগেও অমিতাভ চক্রবর্তীকে বিজেপির দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে দলের একাংশের তীব্র আপত্তি ছিল। তাই তাঁকে ওড়িশা বিজেপির দায়িত্বে দেওয়া হয়েছিল।
অমিতাভ চক্রবর্তীর যোগ্যতা নিয়ে দলে প্রশ্ন উঠলেও এখন তাঁকেই সংগঠন সম্পাদক করা হচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। প্রদীপ যোশী তাঁকে এই পদে নিয়ে আসতে চাইছেন বলে জোর জল্পনা চলছে। বিরোধীদের বক্তব্য প্রদীপ জোশির সঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সংগঠন সম্পাদক বিএল সন্তোষের ভালো যোগাযোগ রয়েছে। তাই বিএল সন্তোষকে বলে অমিত চক্রবর্তীকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন প্রদীপ যোশী।

কিন্তু অমিতাভের বিরোধী গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে। তাদের বক্তব্য, সে যে অযোগ্য তার প্রমাণ আবার পাওয়া গেল সদ্য সদ্য তিনটি জেলা বারুইপুর, উত্তর কলকাতা ও কলকাতা উত্তর শহরতলীতে পার্টির মধ্যে প্রচণ্ড ঝামেলা, মারামারি ও বিজেপির পার্টি অফিস দখল হয়ে যাওয়ার ঘটনার মাধ্যমে।
তাঁদের অভিযোগ, তিনটি স্থানেই অমিতাভ চক্রবর্তী রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বা সংগঠন সম্পাদক সুব্রত চ্যাটার্জির সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে নিজের কর্তৃত্ব দেখানোর জন্য অযোগ্য ব্যক্তিদের পার্টির দায়িত্ব দেন। সেই কারণে বারুইপুরে তাঁর উপস্থিতিতেই মারামারি হয়। অভিযো, মারামারি না থামিয়ে তিনি গাড়িতে ঊঠে চলে যান। তার জেরে জেলা সাধারণ সম্পাদক স্বরূপ দত্তকে ৩০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ, ৭ দিন জেল খাটতে হয় তাঁকে।

উত্তর কলকাতায় জেলা কমিটি গঠন করার সময় পুরানো যোগ্য কার্যকর্তাদের কোনও দায়িত্বেই রাখা হয়নি বলে অভিযোগ। এই নিয়ে জেলায় তীব্র অসন্তোষ রয়েছে। এমনকি গত ২৫ সেপ্টেম্বর শ’পাঁচেক বিজেপি কর্মী রাজ্য সদর দফতরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তা সত্বেও ক্ষেত্র প্রচারক প্রদীপ জোশির অঙ্গুলি হেলনে অমিতাভ চক্রবর্তীকে সংগঠন সম্পাদক পদে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, সেকথা জেনে অমিতাভবাবু ইতিমধ্যে নিজেকে সংগঠন সম্পাদক ভাবতেও শুরু করে দিয়েছেন।
দলের একাংশে বক্তব্য, এই তিন জেলায় তাঁর যোগ্যতার প্রমাণ হাতেনাতে পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও শোনা যাচ্ছে তিনি নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবেও ভাবতে শুরু করেছেন।
জানাগেছে, সঙ্ঘের রাজ্য নেতৃত্ব ক্ষেত্রীয় প্রচারকের সঙ্গে একমত নন। তাঁরা সুব্রত চ্যাটার্জিকে সংগঠন সম্পাদকে পদ থেকে সরাতে আগ্রহী নন। তাঁদের বক্তব্য, সুব্রতবাবুর নেতৃত্বে বিজেপির সদস্য সংখ্যা একলাফে দ্বিগুণ হয়েছে, ৫০০ বিস্তারকে বেরিয়েছে। তার নেতৃত্বেই এখানে ১৮ জন এমপি হয়েছে। তা সত্বেও তাঁকে সরিয়ে ক্ষেত্র প্রচারক অমিতাভ চক্রবর্তী কে সামনে আনতে চাইছেন, কারণ সুব্রত চ্যাটার্জির “জী হুজুর” করার অভ্যাস নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *