প্রবীনদের আনন্দে মাতাতে দুর্গাপুরের বিধাননগর শিল্পকাননে আবসনের গ্যারেজ ঘরেই মা দুর্গার আবাহন

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ২৮ সেপ্টম্বর: করোনা আবহ সারা বিশ্বকে সিঁটিয়ে রেখেছিল। মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে লকডাউনের গৃহবন্দি দশা। আর ওই লকডাউনে বাঙালির দুর্গাপুজোর আনন্দে ঘাটতি পড়েছিল। করোনা আবহে অনেকে হারিয়েছে তাদের প্রিয়জনকে। তার ওপর সামজিক দূরত্ব বিধির জেরে মন্ডপে প্রবেশের ওপরও বিধি নিষেধ ছিল। স্বাস্থ্যবিধিকে মান্যতা দিয়ে আবাসনের প্রবীণদের আনন্দ দিতে আস্ত গ্যারেজ ঘরকে সাজিয়ে হয়ে উঠেছে মা দুর্গার আবাহনের স্থান। এমনই নজির বীহিন চিত্র ধরা পড়ল দুর্গাপুর শিল্পকাননের ফেজ থ্রি’র সম্মিলনী শারদ উৎসব। 

দুর্গাপুরের অভিজাত এলাকা বিধানগর শিল্পকানন ফেজ থ্রি আবাসন। গত বছর চারেক ধরে আস্ত গ্যারেজ ঘরকে সাজিয়ে হয়ে উঠেছে মা দুর্গার পূজা মন্ডপ। ওই আবাসনরে ১০-১২ টি পরিবার নিজেদের উদ্যোগে দুর্গাপুজো শুরু করেন। সংকীর্ণ জায়গা। তাই আবাসনের দুটি গ্যারেজ ঘরকে সাজিয়ে মন্ডপ করা হয়। আবাসনের স্মেহময় ব্যানার্জীর গ্যারেজে একটিতে প্রতিমা থাকে, পূজার্চনা হয়। অপরটি কাজল পন্ডিত নামে একজনের গ্যারজে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর। প্রতিমা ছোটো হলেও ষষ্ঠীর দিন বোধন থেকে সপ্তমীতে নবপত্রিকা আনা। কোনো কিছুতেই খামতি থাকে না। প্রশ্ন, হাতে গোনা ক’য়েকটা পরিবার নিয়ে পুজোর চিন্তাভাবনা কেন?

দুর্গাপুর শিল্পকাননের ফেজ থ্রি’র সম্মিলনী শারদ উৎসব কমিটির পক্ষে স্নেহময় ব্যানার্জী ও কাজল পন্ডিত জানান, “১০-১২টি পরিবারে ১৬ জন প্রবীন বৃদ্ধ, বৃদ্ধা রয়েছেন। বয়সের ভারে তাদের বাইরে পূজার আরতি দেখানো, অঞ্জলি দিতে নিয়ে যাওয়া কঠিন। তাই পুজোর ক’টা দিন ওইসব বয়স্ক মা-বাবাদের আনন্দে মাতিয়ে রাখতে ছোট্টো করে হলেও দুর্গা পুজোর আয়োজন।” স্নেহময়বাবু আরও বলেন,” ১০-১২টি পরিবারের সদস্যরা নিজেরা মন্ডপ সজ্জা থেকে আলেক সজ্জা করি। পুজোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তার সঙ্গে পুজোর চারটি দিন একজায়গা রান্না হয়। কোনো দিন, ভাত ডাল সবজি। কোনো দিন লুচি তরকারি। পুজোর চারদিন হইহুল্লোড়, আনন্দে ভরে থাকে।”

সত্তোরোর্দ্ধ শান্তিদেবী, আন্নাদেবী প্রমুখ জানান,”কোভিড আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করিয়ে গেছে। তাই বৃদ্ধা বয়সে যতটা সতর্ক থাকা যায়। সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলা। ভিড় জমায়েতে না যাওয়া। এসব থেকে সচেতন থাকতে ছেলেরা দুর্গাপুজোর আয়েজন করে। ছোটোবেলার স্মৃতি ফিরে পাই। মন্ডপ ছোটো ক্ষতি নেই। অঞ্জলি দেওয়া আরতি, ধুনুচি নাচ। নাচ গান বাচ্চাদের মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান মনটা ভরিয়ে রাখে। পরিবারের সকলের সঙ্গে উৎসবের আনন্দটা অনেক হয়।” 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *