প্রয়াত সাংবাদিক সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়

আমাদের ভারত, কলকাতা, ২৪ ফেব্রুয়ারি: সাংবাদিক সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার সকালে কলকাতার নীল রতন সরকার হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই কন্যাকে রেখে গেছেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিকতার শুরু সত্যযুগ পত্রিকায়৷ ১৯৭৬ সাল নাগাদ তিনি কলকাতা দূরদর্শনের সংবাদ বিভাগে সংবাদ ও সমসাময়িক বিষয়ের অনুষ্ঠানের প্রযোজক পদে যোগ দেন। দীর্ঘদিন তিনি সংবাদ প্রযোজনার সঙ্গে সমসাময়িক বিষয়ের অনুষ্ঠান প্রযোজনায় বিশেষ পারদর্শীতার পরিচয় দেন।

দূরদর্শন কলকাতার বিভিন্ন নির্বাচন বিষয়ক আলোচনার পরিকল্পনায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছেন। পরে তিনি আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রের সহকারি কেন্দ্র অধিকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। দূরদর্শনের স্বায়ত্তশাসনের জন্য সারা ভারত জুড়ে আন্দোলন সংগঠিত করেন ও তার নেতৃত্ব দেন। দেশ জুড়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে এবিষয় যোগাযোগ স্থাপন করে তিনি জনমত গঠন করেন। পরে তিনি পশ্চিম বঙ্গ সরকারের অধীন রূপকলা কেন্দ্রের উপ অধিকর্তা হিসেবে কাজ করেন।

তিনি সত্যযুগ সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখার জন্য পরিচিত ছিলেন। প্রেস ক্লাব, কলকাতার সভাপতি স্নেহাশিস সুর এবং সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন।

প্রেস ক্লাব কলকাতার সহ সভাপতি শৈবাল বিশ্বাস সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, যাঁর নিরলস সংগ্রাম ও প্রচেষ্টায় প্রসার ভারতী গঠনের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছিল সেই আপসহীন সাংবাদিক সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণ আমার কাছে মহীরুহ পতন। একবার সুমিতদাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, দূরদর্শনে প্রযোজকের অমন লোভনীয় চাকরি ছাড়লেন কেন? সুমিতদা জানিয়েছিলেন, দূরদর্শনের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সর্ব ভারতীয় স্তরে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে বিপদে পড়ে।

সুমিতদা ছিলেন এই আন্দোলনের সর্বপ্রধান নেতা। একবার কেরলের এক ক্যামেরাম্যানকে শ্রীনগর বদলি করে দেওয়া হয়। তিনি নিতান্ত অসুবিধার সম্মুখীন হন। তাঁর স্ত্রী সুমিতদাকে প্রশ্ন করেছিলেন, এবার কী হবে? আমার স্বামীকে তো গুলি খেয়ে মরতে হবে। আন্দোলন করে কী হল? এই প্রশ্নের মুখে তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়েছিলেন। সুমিতদা জানালেন- “সেদিন বিবেকের কাছে অত্যন্ত অসহায় বোধ করে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই।”

আশৈশব মার্ক্সবাদে বিশ্বাসী এই মানুষটি একসময় সিপিআইএমের সদস্য ছিলেন। তিনি যে ব্রাঞ্চে যুক্ত ছিলেন তার নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামী কল্পতরু সেনগুপ্তর রোষে দলের সদস্যপদ হারান। পরে স্বয়ং প্রমোদ দাশগুপ্তর অনুরোধেও সদস্যপদ গ্রহণ করেননি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁকে সদস্যপদ নেওয়ার একপ্রকার নির্দেশই দেন। এবারেও অনড় ছিলেন। পরে অবশ্য বুদ্ধবাবুর হস্তক্ষেপে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত রূপকলা কেন্দ্রর উপ অধিকর্তা হন। সারাজীবন যা লেখালেখি করেছেন তার সবটাই বামপন্থী মতাদর্শ প্রসূত। এমন একজন আদর্শবাদী দিগদর্শককে হারিয়ে কলকাতার সংবাদ জগৎ রিক্ত হল।

আপনাদের মতামত জানান

Please enter your comment!
Please enter your name here