নদী পরিণত হয়েছে চাষের জমিতে, আশঙ্কায় কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দারা

স্বরূপ দত্ত, আমাদের ভারত, উত্তর দিনাজপুর, ১৫ মার্চ: আস্ত নদী পরিণত হয়েছে চাষের জমিতে। নদী দখল করেই চলছে চাষবাস। এমনকি চাষ করার জন্য বৈধ কাগজ পেয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা, এমনই অভিযোগকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কালিয়াগঞ্জে। উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জে শ্রীমতি নদীর এমনই বেহাল ছবি ধরা পড়েছে, যা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পুর প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন।

উত্তর দিনাজপুরে কালিয়াগঞ্জের শ্রীমতি নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন। এই নদীকে স্বচক্ষে দেখেছেন যারা তারাই আজ খুঁজে পাচ্ছেন না শ্রীমতি নদীর অস্তিত্ব। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে উত্তর দিনাজপুর জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা এই নদী মিশেছে ইটাহার ব্লকের মারনাই এলাকায় মহানন্দা নদীতে। কিন্তু এই নদী বক্ষ এখন পুরোপুরি চরে পরিণত হয়েছে। জলা জমি ডাঙ্গা জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, যেখান দিয়ে শ্রীমতি নদী একসময় বয়ে যেত সেখানে এখন ধান চাষ করছেন এলাকার কৃষকরা। বেশ কিছু এলাকায় রীতিমতো কংক্রিটের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ওই জমির ভোগ দখলকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা নাকি রায়ত জমি হিসাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও দেখিয়ে দেন। তবে কেউই এঘটনার দায় স্বীকার করতে চাইছেন না।

যদিও পুর কর্তৃপক্ষ বলেন, শ্রীমতি নদীর যেখান দিয়ে বয়ে যেত, সেই জমি রায়ত জমি হিসাবে পরিগণিত রয়েছে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারবে।

কালিয়াগঞ্জ শহরের বিজেপি নেতা গৌরাঙ্গ দাস বলেন, কালিয়াগঞ্জের ভূমিপুত্র তথা তৎকালীন কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির আমলে শ্রীমতি নদীর সংস্কারের কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সময় বাম সরকারের উদাসীনতায় তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে সরকারের পক্ষ থেকেও নদীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করা হয়নি। যদিও এ ব্যাপারে কালিয়াগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান রাম নিবাস সাহা বলেন, মহকুমা শাসক ও বিএলআরও কে বিষয়টি জানিয়েছি। সেখানে ভোগ দখলকারী অনেকের কাছে নাকি বৈধ কাগজও রয়েছে। তারা নতুন করে প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ করার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।

কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দারা বলেন, একসময় তিস্তা প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল শ্রীমতি নদীকে। কিন্তু নেভার এন্ডিং এই তিস্তা প্রজেক্ট এর কারণেই শ্রীমতি নদী আজ তার অস্তিত্ব খুঁইতে বসেছে। আমরা শ্রীমতি নদীকে আবার পুরনো অবস্থায় দেখতে চাই। কিন্তু কি করে তা সম্ভব, প্রশাসনই তা বলতে পারবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথা সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ করা না হলে এই নদীর অস্তিত্ব পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে তা বলাই বাহুল্য।

অন্যদিকে নদীর উপর কীভাবে চাষবাসের বৈধতা পাচ্ছেন কৃষকরা, কীভাবেই বা দিনের পর দিন আস্ত একটি নদীকে দখল করে চাষবাস করছেন কৃষকরা? এই নিয়ে রায়গঞ্জের মহকুমা শাসক কিংশুক মাইতির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এভাবে নদী দখল করে চাষবাস চলতে থাকলে একদিন নদী নব্যতা হারিয়ে ফেলবে বলে জানান তিনি। তবে এই বিষয় নিয়ে পদক্ষেপ করতে ভূমি রাজস্ব দপ্তরকে বিষয়টি জানাবেন বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *