জৈবচাষ জনপ্রিয় করার পথে ‘কর্মযোগী’, মাতৃশক্তিতে যোগ সনাতনী স্রোত

মিলন খামারিয়া
আমাদের ভারত, ব্যারাকপুর, ২১ নভেম্বর: কৃষি-রসায়নের কুফল আজকের সমাজ বুঝতে সক্ষম হলেও, কৃষিবিষমুক্ত ফল ও সব্জি এখনও আপামর দেশবাসীর নাগালের বাইরে। কিন্তু জৈব-ফসলের চাহিদা ও বাজার ক্রমেই বাড়ছে। ‘কর্মযোগী’ -র মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে তাই দেখা যায় জৈবচাষের প্রকল্প হাতে নিতে, কৃষি সম্প্রসারণ দিয়েই যে সংগঠনের প্রারম্ভিক বিস্তার হয়েছিল।

২০১৭ সাল থেকে শুরু করে সেবাব্রতী কাজে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে কর্মযোগী’। এ বছর সংগঠন তার পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতা সম্পন্ন করে দেখালো। সেবার নানান কাজে সাধ্যমতো ‘কর্মযোগী’-র বিচরণ। তাদের সাফল্য সংবাদে উঠে আসছে পরিবেশ, উদ্যানপালনের মতো বিষয়, তেমনই স্থান দখল করে আছে গৃহ পরিবেশে সনাতনী সংস্কৃতির প্রতি সম্পৃক্ততা, মাতৃশক্তির জাগরণ এবং জৈবচাষের গোড়ার কথা।

রবিবার সোদপুরে কামধেনু গোশালায় অনুষ্ঠিত হয় ‘কর্মযোগী’-র বার্ষিক সাধারণ সভা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সঙ্ঘচালক জয়ন্ত রায়চৌধুরী, রিষড়া প্রেম মন্দির আশ্রমের সম্পাদক স্বামী নির্গুণানন্দজী মহারাজ, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কল্যাণ চক্রবর্তী, বিশিষ্ট সমাজসেবী বিশ্বনাথ চক্রবর্তী এবং বিশিষ্ট চিকিৎসক ড. মানিক চ্যাটার্জি। উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক ডা. সনৎ বসু মল্লিক, ডা. তরুণ সরকার প্রমুখ ব্যক্তিত্ব। তাদের সঙ্গে একঝাঁক গুণী মানুষ, বিদ্যাবিদ ও প্রবুদ্ধজন।

এদিন কর্মযোগীর ‘স্মরণিকা’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন জয়ন্ত রায়চৌধুরী। এরপর সভায় অনুমোদনের জন্য কার্যবিবরণী পাঠ হয় এবং আর্থিক বাজেট পেশ করা হয়। পেশ করেন কোষাধ্যক্ষ কিংশুক লাহিড়ী। আগামী বছরের পরিচালন সমিতির প্রস্তাব পেশ করেন সভাপতি শান্তনু রুদ্র। তিনিই পুনরায় সংগঠনের সভাপতি এবং অসীম মণ্ডল সম্পাদক মনোনীত হন।

সংগঠন আহূত জৈবচাষে বিশেষত উদ্যানফসলে প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য এদিন আহ্বান করা হয় বিশিষ্ট কৃষিবিশেষজ্ঞ ড. কল্যাণ চক্রবর্তীকে। এদিন তিনি সভায় বলেন, কৃষি কখনোই কৌলিন্যবিহীন কর্ম নয়। যারা লাঙ্গল ধরেন, তারাই আসল ভদ্রলোক। গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারী গানে কৃষির মহিমা সম্প্রসারিত হয়েছে। আজ তিনিই সবচাইতে বড় শিল্পী, যিনি জৈবিক পদ্ধতিতে চাষ করে সবচাইতে বেশি লাভ ও উৎপাদন করতে পারেন। প্রতিটি বাড়িতে জৈবিকভাবে উদ্যান রচনার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।

সনাতনী রীতি মেনেই ‘কর্মযোগী’ সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়েছে। মঙ্গলাচরণ, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনির মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। শান্তিমন্ত্র পাঠ করেন রুবেল পাল। ছিল সুভাষিত ও সমবেত গীতের আয়োজন। ছিল গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ের সমবেত পাঠ।

এদিনের কার্যসূচিতে বিশেষ আকর্ষণ ছিল মাতৃ-পিতৃপূজন। মাতৃ শক্তি জাগরণের কর্মসূচিও নেওয়া হয়। লাভ-জেহাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে এবং প্রাণের অপচয় বন্ধ করতে হলে, পরিবারের মা-কেই সবার আগে সচেতন হতে হবে।

এদিন ছিল মাতৃ বন্দনার আয়োজনও। উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশই ছিলেন মাতৃশক্তি। প্রত্যেকেই লাল পেড়ে সাদা শাড়ি এবং অধিকাংশ পুরুষ সদস্য ধুতি পাঞ্জাবি পরিধান করে সভায় আসেন। সমবেত গীতের বিষয়বস্তুতেও জননীকে বিশেষ মহিমান্বিত করা হয়। সঙ্ঘ প্রার্থনা দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *