করোনা প্রতিরোধে রাজ্যের ত্রাণ তহবিলে বিপুল অর্থ, রাজারহাটেও তৈরি করোনা হাসপাতাল

চিন্ময় ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ২৭ মার্চ: থেমে থাকার নামই মৃত্যু, তিনি জানেন। স্বভাব ছটফটে, তা-ই দরকার না-থাকলেও স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল জোগাতে তিনি ছুটে গিয়েছেন হাসপাতাল। ছুটে গিয়েছেন বাজারে পুলিশের মতো চক দিয়ে গণ্ডী আঁকতে। তাঁর এসব কাণ্ড-কারখানায় যথেষ্ট স্বস্তি অনুভব করেছেন লকডাউনের জমানায় ঘরে বসে থেকে ক্লান্ত হয়ে ওঠা জনতা। খুশি হয়েছেন তাঁর এই কিছু করার চেষ্টা দেখে। বিভিন্ন আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ী তাই খুশি হয়ে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্যের ত্রাণ তহবিলে অর্থ দান করছেন। বিশিষ্ট শিল্পপতিরা তো বটেই, ‘দত্ত ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর মতো বহু ছোটখাটো সংস্থাও রাজ্যের এই তহবিলে করোনা প্রতিরোধে লক্ষ লক্ষ টাকা দিচ্ছে।

শুধু তাই নয়, রাজ্যের মন্ত্রীরা তাঁদের একমাসের বেতন দান করছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিধায়ক এবং সাংসদরাও কেউ সরকারের এই তহবিলে অর্থ দিচ্ছেন। কেউ বা সরাসরি জেলা প্রশাসনের হাতে বিধায়ক বা সাংসদ কোটার অর্থ তুলে দিচ্ছেন নোভাল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য। যা জনপ্রতিনিধি তো বটেই, সমগ্র রাজনৈতিক মহলের প্রত্যেক নেতা ও কর্মীর প্রতি সাধারণ মানুষের সম্মান কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। এই দানের তালিকায় পিছিয়ে নেই সমাজের এগিয়ে থাকা অন্যান্য পেশার মানুষরাও। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ক্রীড়াবিদ থেকে টলিউডের শিল্পীরা- সকলেই এগিয়ে এসেছেন মুক্ত হস্তে দানের জন্য।

এই অর্থের বেশিরভাগটাই জমা পড়ছে হাওড়ায় এক বেসরকারি ব্যাংকে রাজ্যের ত্রাণ তহবিলে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অর্থের উপযুক্ত ব্যবহারে নজরদারি করছেন। যার সৌজন্যে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পর, রাজ্যের তথা পূর্ব ভারতে দ্বিতীয় করোনা চিকিৎসার হাসপাতাল তৈরি হয়েছে রাজারহাটে। এখানকার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটকে করোনা স্পেশালিটি হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যভবন ৫০ জন ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে ওই হাসপাতালে পাঠিয়েছে। রাখা হয়েছে ৫০০টি শয্যাও।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, ৩০ জন নার্স, ২জন টেকনিশিয়ান, চিকিৎসক, দু’জন ডেপুটি নার্সিং সুপার, একজন নার্সিং সুপারও এই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। করোনার উপসর্গ থাকা ও আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য শনিবার থেকে রোগী ভর্তি শুরু হচ্ছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। প্রাথমিকভাবে সেখানে করোনা চিকিৎসার জন্য ৩০০ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরে প্রয়োজনে আরও ২০০ বাড়ানো হবে। মেডিক্যাল কলেজের ৫ নম্বর গেটের নাম রাখা হয়েছে ‘করোনা গেট’। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সোমবার থেকে সিপিইউ এবং ভেন্টিলেশনেও রোগী ভর্তি শুরু হয়ে যাবে বলেই রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। এই সব ক্ষেত্রে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তা সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকেই মেটানো হচ্ছে বলে, বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *