সাহিত্য ও মানবাধিকার, নেহু-র ৫০ বছর উপলক্ষে আলোচনা

অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, শিলং (মেঘালয়), ৩১ মার্চ: “সাহিত্যের সঙ্গে মানবাধিকারের সম্পর্কটা ভীষণ নিবিড়। রাজা রামমোহন রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে অধুনা বিভিন্ন ভাষার লেখকদের সৃষ্টিতে বার বার উঠে এসেছে মানবাধিকারের কথা।”

শুক্রবার শিলংয়ে নর্থ ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটির (নেহু) এক অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার ভাষণে এ কথা বলেন কলকাতার বাবা সাহেব অম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটির (পূর্বতন ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ টিচার্স ট্রেনিং, এডুকেশন, প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন) উপাচার্য ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি বলেন, মানবাধিকার কথাটা মানুষের জন্যই সবচেয়ে বেশি খাটে। কেবল রাজনৈতিক মানচিত্রের বিন্যাস ধরে রাখাই নয়, সমাজের প্রয়োজনেও এর একটা বিশেষ উপযোগিতা আছে। সাহিত্যের মাধ্যমেই সেটা মানুষকে সবচেয়ে ভাল বোঝানো যায়। কীভাবে মানবাধিকারকে সুরক্ষিত রাখা যায়, কীভাবে শোষিত-নির্যাতিতরা এর সুফল পেতে পারে, সাহিত্যিকরা তা নানা সময় তার হদিশ দিয়েছেন সাহিত্যের মাধ্যমে। তাই একটা অন্তরঙ্গতা তৈরি হয়েছে সাহিত্য আর মানবাধিকারের মধ্যে।

ডঃ সোমার কথায়, “বিশ্বের অনেক চিরকালীন সৃষ্টিতে ফুটে উঠেছে এই শাশ্বত সত্যটি। এক্ষেত্রে ইংরেজিতে চার্লস ডিকেন্স, হিন্দিতে প্রেমচাঁদ, বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবী, ওডিয়ায় ফকিরচাঁদ সেনাপতি, মারাঠিতে নানা পানসের লেখা। ডিকেন্সের ‘ব্লিক হাউস’ তো প্রথম রব তুলেছিল মানবাধিকার নিয়ে।”

উপাচার্যের কথায়, “আর যদি সাহিত্য আর মানবাধিকারের অন্তরঙ্গতা খোঁজায় সহায়ক পাঁচটি সেরা বইয়ের নাম বলি তাহলে বলবো তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গণদেবতা’, মার্গারেট মিশেলের ‘গন উইথ দি উইন্ড’, ভার্জিনিয়া উলফের ‘থ্রি জিনিয়াস’, শিরিন সুলতানার ‘এ ওয়ার্ল্ড ডিভাইডেড বাই’ ও প্রেমচাঁদের ‘গোদান’। আমেরিকায় আব্রাহাম লিঙ্কন কীভাবে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, মিশেল তাঁর লেখায় সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন।

নেহু-র আসন্ন ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নেহু এবং জাতীয় মানবাধিকার রক্ষা কমিশনের (এনএইচআরসি) যৌথ উদ্যোগে হচ্ছে দু’দিনের এই আলোচনাচক্র। শুক্রবার উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতা দেন এনএইচআরসি-র চেয়ারপার্সন তথা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ও রাজস্থান হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং কমিশনের সদস্য ডঃ জ্ঞানেশ্বর মূলে। অনুষ্ঠান সংযোজনায় ছিলেন এনএইচআরসি-র সহ অধিকর্তা অঞ্জলি সাঁতরানি। দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন মরাঠি লেখক দামোদর খারসে, অরুণাচল প্রদেশের অরুণ কুমার পাণ্ডে এবং নীতি আয়োগের অন্যতম আধিকারিক অর্চনা পাণ্ডে। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *