কাজের দাবিতে লংমার্চ বাম শ্রমিক সংগঠনের

আমাদের ভারত, ঝাড়গ্রাম, ৩০ নভেম্বর: ভাতের দাবি, কাজের দাবি, অধিকার রক্ষার লড়াইতে আর মৌনব্রত বা আপস নয়। কারখানা বা শিল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির পরিবারের একজনের কাজ এবং চুক্তি অনুযায়ী শেয়ার বন্ধের দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুরে লংমার্চ করল বামপন্থীরা।

যুবসমাজকে হতাশায় জর্জরিত করার হাত থেকে মুক্তি, কৃষকের ফসলের দাম, ক্ষেতমজুরের বছরে ২০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি সহ দৈনিক মজুরী ৩৭৫ টাকা, শ্রমিকের মাসিক ন্যুনতম বেতন ২২ হাজার টাকা, ৬০ ঊর্ধ্ব সমস্ত শ্রমজীবী মানুষের মাসিক পেনশন ৬ হাজার টাকা দেওয়ার দাবিতে জেলার দুই প্রান্তে শ্লোগান মুখরিত বর্নময় ঝান্ডার স্রোতে উত্তাল ঠেউয়ের মতো লংমার্চে সামিল হলেন জমিদাতা পরিবার সহ জেলার কৃষক শ্রমিক সহ বঞ্চিত যন্ত্রনায় জর্জরিত সাধারন মানুষ।

৭২ বছরের বিধবা মালিনী মাহাতো জমি দিয়েছিলেন, ছেলের কাজ জোটেনি শালবনীর জিন্দাল প্রকল্পে। তার স্বামী পাট্টা পাওয়া জমি তুলে দিয়েছিলেন ছেলের কাজ পাবে এমন ভরসায়। তিনিও আজ মিছিলে হাঁটলেন। ছেলে আজ সংসারের হাল ধরতে কাজের জন্য কেরালায়। এমন হাজারো অধিক জমিদাতা পরিবার সামিল হলেন তাদের সাথে জিন্দালের চুক্তির হিসাব ও অধিকার বুঝে নিতে। এশিয়ার বৃহত্তম ইস্পাত শিল্পের জন্য জমি দেওয়া। সেই শিল্প হলে শুধু জমিদাতা পরিবার নয়, জেলা এবং রাজ্যের অর্থনৈতিক চেহারা আমূল পাল্টে যেত।

২০০৮ সালের ২ রা নভেম্বর এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাম বিলাস পাসোয়ান, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ফেরার পথে ডিনামাইট চার্চ করে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে খুনের চেষ্টা আর তারপর হিংসাত্মক আক্রমন, নৈরাজ্য তৈরীর খেলায় মেতেছিল মাওমাদীরা। ১৪ সালে নাকের বদলে নরুল তথা ইস্পাতের পরিবর্তে সিমেন্ট কারখানা উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদাতাদের ধৈর্য ধরতে বলে সবার কাজ হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ছয় বছর অতিক্রান্ত হওয়ার মুখে ১২০০ পরিবারে মাত্র ৬৯ জনকে অফিসিয়াল আর ১২০ জনকে ঠিকাদারের আন্ডারে লোড আনলোড কাজ দেওয়া হয়েছে। সেই জমিতে এখন শুরু হয়েছে কর্পোরেট সংস্থার ফার্মের কলা আনারস পেয়ারা আম চাষ।

জমিদাতাদের দাবি, এই জন্য তাদের জমি দেওয়া হয়নি।এখন লংমার্চের দাবি নিয়ে একটা ধাক্কা দেওয়ার জেহাদ ঘোষনাতে সামিল হলেন।

রাজ্যের শুরু হওয়া লংমার্চের বার্তা নিয়ে জেলার উত্তর প্রান্তে জিন্দাল প্রকল্পকে কেন্দ্র করে শালবনীর সুন্দরা সৈয়দপুর থেকে জিন্দাল কারখানার অভিমুখে এমন সেমি লংমার্চ শুরু হয়। অপরদিকে জেলার দক্ষিণপ্রান্তে নারায়ণগড়ের সুপ্রিম প্লাস্টিক কারখানাকে কেন্দ্র করে এই একই দাবিতে আরোও একটি লংমার্চ হয়। এখানে জমিদাতা সব পরিবারকে কাজ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ, এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা কাটমানি নিয়ে বহিরাগতদের কাজ দিয়েছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন। জমিদাতাদের কাজ দেওয়ার দাবিতে লংমার্চ হয়।

প্রতিটি স্থানে লংমার্চের বার্তার সাথে ৮ জানুয়ারি সাধারণ ধর্মঘটেরও বার্তা ওঠে। আগামী ৫ ডিসেম্বর জেলার খড়্গপুর শিল্পতালুক থেকে কলকাতা অভিমুখে কেন্দ্রীয় লংমার্চ শুরুর আগে জেলায় এমন আরোও লংমার্চ হবে বলে জানানো হয়েছে।
শালবনীতে লংমার্চের সূচনাপর্বে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা দীপক সরকার। লংমার্চের দাবি সহ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মানুষ মারা পদক্ষেপগুলোর তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। এছাড়া বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ দাস। জিন্দাল গেটে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষে গোপাল প্রামানিক, মিহির পাহাড়ী, কৃষকনেতা রামেশ্বর দোলই, অশোক সেন।
নারায়নগড়ে লংমার্চের সূচনা সহ বক্তব্য রাখেন তরুন রায়, কালি নায়েক। এবং নারায়ণগড় বাজারে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তাপস সিনহা, ভাস্কর দত্ত এবং বিপ্লপ ভট্ট প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *