
আমাদের ভারত, কলকাতা, ১০ মার্চ:
আইন ভাঙা এত সহজ, দেখেও বিশ্বাস হতে চায় না। ঠাকুরপুকুর বাজার। তার একটি গলিতে পাশাপাশি বেশ কিছু গুমটি দোকান। দরজায় পুরু পর্দা। ভিতরে ঠাসা ভিড়। দোকানির সম্বল একটি কম্পিউটার এবং প্রিন্টার। ঠাসা ভিড়। কোনও মতে দাঁড়াতেই ওই যুবক অনলাইন লটারির (লোটো) টিকিট কিনব কিনা, জানতে চাইলেন। তারপর গোটা চারেক দশ টাকার টিকিট কিনলাম। আর সঙ্গে সঙ্গেই আইনের চোখে একটা অপরাধ করা হয়ে গেল। কারণ অনলাইন লটারি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৩ সালের ২১ মে অনলাইন লটারি বা ‘লোটো’ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন।
ঠাকুরপুকুরের লোটো গুমটিতে অবশ্য তার কোনও ছাপ দেখা গেল না। কম্পিউটারের মনিটরে ০ থেকে ৯, এই দশটি সংখ্যা রয়েছে। ক্রেতারা যে সংখ্যার টিকিট কাটছেন। তারপর মনিটরে ভেসে উঠছে একটা সংখ্যা। টিকিটের সংখ্যার সঙ্গে ওই ‘লাকি’ সংখ্যা মিলে গেলে টিকিটের মূল্যের নয়গুণ টাকা মিলবে। নইলে ফক্কা। ঠাকুরপুকুর বাজারের ওই লোটো কাউন্টারে আধ ঘন্টা ধরে বসে থেকেও অবশ্য কোনও বিজেতার দেখা মিলল না। নিন্দুকেরা বলেন, কোন কোন টিকিট বিক্রি হল, তা অনলাইনে লোটোর মালিক দেখতে পান বলেই না-কাটা সংখ্যাটিকে ‘লাকি’ বলে দেখানো হয়। কিন্তু এমন ভাঁওতাবাজির সন্দেহ অনলাইন লটারির আকর্ষণ একটুও কমায়নি।
কেবল ঠাকুরপুকুর বাজারের লোটো কাউন্টার নয়। গোটা ঠাকুরপুকুর থানা এলাকা জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে লোটোর দোকান। ঠাকুরপুকুর বাজারের অভিজিৎ লটারির দোকান, ঠাকুরপুকুর মেট্রো ষ্টেশন বাজারের বুড়োদার ঘর, বীরেন রায় রোডের বেহালা চৌরাস্তার মোড় সহ বিভিন্ন জায়গায় এই কারবার চলছে দিনে দুপুরে।এর পাশাপাশি রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় এই অনলাইন জুয়ার করাবার জাঁকিয়ে বসেছে। কলকাতার মধ্যে এর বাড়বাড়ন্ত ঠাকুরপুকুর এলাকায় বলে এক যুবক জানান।
লোটো কাউন্টার সাধারণত খোলে সকাল ১০টা নাগাদ। বিকেল চারটে থেকে ছ’টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। তারপর চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। সারাক্ষণই কাউন্টারগুলির সামনে থিকথিকে ভিড়। কারা এই ভিড় করেন? ঠাকুরপুকুরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেল, রিক্সা-চালক, ভ্যানওয়ালা, মুদির দোকানদার, টোটোওয়ালা এবং কিছু ক্ষেত্রে বিত্তবান মানুষরাও লোটোর টিকিট কাটতে ব্যস্ত। জেতার নেশায় এক একজন টিকিট কিনতেই থাকেন।
খেলার নেশায় নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরলে সংসারে অশান্তি বাধে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে, কিংবা জনবহুল এলাকায়, কোনও লুকোছাপা না করে প্রকাশ্যে চলছে লোটোর দোকান। আক্ষেপ এলাকার মানুষেরও।