স্বরূপ দত্ত, আমদের ভারত, ১৩ সেপ্টেম্বর:
প্রায় মাস খানেক আগেই মর্তে আগমন হল দশভূজার। তবে মন্ডপে না গিয়ে স্বপরিবারে হাজির রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেলের ভ্যাক্সিন কেন্দ্রে। ভাবতে অবাক লাগলেও, সোমবার দুপুরে এমনই দৃশ্য দেখে হতবাক ভ্যাক্সিন কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে ভ্যাক্সিন নিতে আসা লোকজন। দুর্গা নিজেই জানালেন ভ্যাক্সিন না নিলে মন্ডপে ঢুকতে দেওয়া হবে না, তাই সকলকে নিয়ে ভ্যাক্সিন নিতেই এসেছেন স্বয়ং মা দুর্গা।
আসন্ন শারদ উৎসবে লোকশিল্পীদের মধ্যে সংক্রমণ রোধে রাজ্যে প্রথম জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে লোক প্রসার প্রকল্পের অধীনে লোকশিল্পীদের জন্য আলাদা ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করা হয়। দৈনিক ভ্যাক্সিনের লাইনের বিশৃঙ্খলার ঘটনার বাইরে, এদিনের এই দৃশ্য ভ্যাক্সিন নিতে আসা লোকজনকে আনন্দ দেয় বলে দাবি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের।
ছোটদের ভ্যাক্সিন এখনো শুরু হয়নি, তাই চার সন্তানদের না এনে বাহন সিংহে সওয়ার হয়ে বৃদ্ধ স্বামী (শিব), অসুর আর অন্যান্নদের সাথে নিয়ে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজের ভ্যাক্সিন কেন্দ্রে হাজির হন দেবী দুর্গা। মূলত, পুজোর মরশুমে লোকশিল্পীদের মধ্যে যাতে সংক্রমন না ছড়ায় বা তাদের থেকে যাতে অন্য কেউ সংক্রামিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই জেলা তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের প্রয়াসে সোমবার রায়গঞ্জ মেডিকেলে একটি বিশেষ ভ্যাক্সিন ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেই দুর্গা, শিব, অসুর, সিংহ সেজে হাজির হন কালিয়াগঞ্জের একটি মুখোশ নাচের দল। রায়গঞ্জ শহরে এসে হাসপাতাল রোড দিয়ে সুসজ্জিত ঢাক বাদ্যের সাথে মেডিকেলের কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিন কেন্দ্রে আসেন তারা। ঢাকের বোলে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা মেডিকেল কলেজ চত্ত্বর। ভ্যাক্সিনের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যান্ন লোকজনও ক্ষনিকের জন্য উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। ভ্যাক্সিন নিতে এসে যে এমন আনন্দদায়ক দৃশ্য চোখে পড়বে তা ছিল তাদের কল্পনার অতীত।
এদিকে ভ্যাক্সিন নিতে আসা লোকশিল্পীরা জানিয়েছেন, ভ্যাক্সিন না নিলে তারা সুরক্ষিত নন। তাই পুজোর মরশুমে তাদের এই বিশেষ শিবিরে ভ্যাক্সিন নিতে পেরে তারাও খুশি। পাশাপাশি পুজোর মধ্যে অনেক লোকশিল্পীরাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ডাক পান। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ রোধে তাদেরও ভ্যাক্সিন দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সাধারনের ভিড়ে অনেক লোকশিল্পীরাই ভ্যাক্সিন নিতে পারেননি। আর সে সমস্ত লোকশিল্পীদের জন্যেই উত্তর দিনাজপুরের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা রাজ্যে প্রথম বলে দাবি প্রশাসনিক কর্তাদের।
এদিকে দীর্ঘদিন ভ্যক্সিন নিয়ে নানা বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু এদিন ভ্যাক্সিন কেন্দ্রে অন্যান্য দিনের তুলনায় ভ্যাক্সিন নিতে আসা লেকজনের ভিড় বেশি হলেও, নানারূপে সজ্জিত লোকশিল্পীদের এই কার্যকলাপ যেন ভ্যাক্সিন কেন্দ্রের পরিবেশ বদলে দিয়েছে বলে দাবি অন্যান্য ভ্যাক্সিন নিতে আসা লেকজনের। আর আসন্ন শারদ উৎসবের আগে উৎসবের মেজাজে স্বাস্থ্যকর্মীরাও যেন আলাদাই উৎসাহ পেলেন বলে জানিয়েছেন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।