জয় লাহা, দুর্গাপুর, ২৯ জুন: ‘কেন্দ্রের বরাদ্দ অমিল। ফিফটিন কমিশনের টাকায় গ্রামের সড়ক তৈরী করুন। না হলে ভোটে ললিপপ খাবেন।’ বুধবার পঞ্চায়েত ভোটকে পাখির চোখ করে দুর্গাপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে গ্রামীন উন্নয়নে জোর দেওয়া নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে বিধায়ক, জনপ্রতিনিধিদের জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, আগামী ২০২৩ রাজ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর ওই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে কার্যত কল্পতরুর ভূমিকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকবন্ধু থেকে কৃষকদের ধান বিক্রির ওপর গুরুত্ব যেমন দিয়েছেন। তেমনই শিল্পাঞ্চলে ঠিকা শ্রমিকদের বেতন বৈষম্যের ওপর বাড়তি নজর রেখেছেন। গত সোমবার থেকে দুই বর্ধমানে সভা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার ছিল দুর্গাপুর সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠক। দুই জেলার প্রশাসনিক আধিকারিক ছাড়াও হাজির ছিলেন জনপ্রতিনিধি ও ব্যাবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা৷ একইসঙ্গে গোটা রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকরা ছিলেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে। এদুন বিদ্যাধরী সেতু, মানিকতলা দমকল কেন্দ্রের পাশাপাশি দুই বর্ধমান জেলার ১০০-র বেশী প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিল্যানাস করেন তিনি।
এদিন রাজ্যের কয়েকটি পঞ্চায়েত প্রধানদের বিলাসবহুল বাড়ির খবরে মিডিয়ার ভূমিকা নাম না করে সমালোচনা করেন। তিনি মন্তেশ্বর ও মেমারির দুটি প্রধান দুঃস্থতার উদাহরণ তুলে ধরেন। তারপরই তিনি শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন কারখানাগুলিকে শ্রমিকদের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে পে শ্লিপ দেওয়ার নির্দেশ দেন। ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ ও আবাস যোজনার টার্গেট না থাকায় কেন্দ্রের সমালোচনায় আবার সরব হলেন তিনি। পঞ্চায়েত ভোটকে পাখির চোখ করে তিনি বলেন, “কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। তাই বলে গ্রামীন উন্নয়ন বন্ধ রাখা যাবে না। সামনে পঞ্চাায়েত ভোট না হলে ললিপপ খাবে।” তিনি জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলোকে নির্দেশ দিয়ে বলেন,
“রাস্তাঘাট মানুষের বেশী নজরে পড়ে। তাই রাস্তা বেহাল রাখা যাবে না।
ফিপটিন কমিশনের টাকায় রাস্তা সংস্কার করতে হবে। একই সঙ্গে ১০০ দিনের জবকর্মীদের রাজ্যের পূর্ত, সেচ সহ বিভিন্ন দফতরে ৩ লক্ষের বেশী শ্রমদিবস তৈরীর নির্দেশ দেন।”
বাংলা আবাস যোজনার টার্গেট না দেওয়ায় কেন্দ্রের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “গুজরাট, রাজস্থানে যদি সে রাজ্যের নামে নামকরণ হয়, তাহলে বাংলায় বাংলা আবাস যোজনার নামে আপত্তি কেন? রাজ্য ওই প্রকল্পে ৪০ শতাংশ অনুদান দেয়।” প্রসঙ্গত, রাজ্যে ১ লক্ষ ১ হাজার গৃহনির্মাণে পরবর্তী কিস্তি বকেয়া রয়েছে। এদিন মিটিং থেকে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা বকেয়া খুব শীঘ্রই মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে রাজ্যের মুখ্য সচিব জানিয়ে দেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চাায়েত, ব্লক ও জেলা প্রশাসনকে আবাস যোজনার নতুন তালিকা তৈরীতে নিষেধ করে বলেন, “আগের যে তালিকার উপভোক্তা রয়েছে, তাদের পরবর্তী কিস্তির টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। যে তালিকা পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রে, সেগুলো মুছে দিয়েছে। তাই নতুন তালিকা তৈরী করার এখন দরকার নেই।” তিনি আরও বলেন, “রাজ্যে আবাস যোজনার ৫ বছরে ৫০ লক্ষ বাড়ি তৈরীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাতে বছরে ১০ লক্ষ বাড়ি তৈরী করা হবে।” তিনি বিভিন্ন বালিঘাট ও তারবসংলগ্ন গ্রামিন সড়ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওভারলোডিং বন্ধ। গ্রামের রাস্তার টোল আদায় অনলাইন করা হবে। তাতে ওই রাস্তার উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি রাজস্ব বাড়বে। এদিন তিনি রাজ্যে প্রায় ৭ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নতুন ১৪৬১ টি বিএসকে তৈরী হবে বলে ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে কৃষক স্বার্থে তিনি কড়া ভাষায় বলেন, “কৃষক বাজারে কৃষকদের হয়রানি করা চলবে না। প্রকিওয়ারমেন্ট বাড়াতে হবে। ওজন নিয়ে সমস্যা মেটাতে হবে। এদিন তিনি মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমে গ্রামে চাষিদের ধান সংগ্রহের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষিদের ক্ষতিপূরণ ও তাদের সমস্যা মেটানোর নির্দেশ দেন।”
রাজ্যে জবরদখল বড় সমস্যা। এদিন রেলের জায়গার ওপর জবর দখল উচ্ছেদের সমালোচনা করে স্পষ্ট জানান, “কোনরকম উচ্ছেদ করা চলবে না।” এদিন দুর্গাপুর প্রজেক্ট তাপবিদ্যুৎ (ডিপিএল) কেন্দ্র পুনুরুজ্জীবন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ডিপিএলের অব্যবহৃত জমি বিক্রি করে সেখানে নতুন শিল্পস্থাপন করা হবে। তাতে যা আয় হবে ডিপিএল বাঁচাবে।” এদিন সিবিআইয়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সামন্য টোটো চালক থেকে সাংবাদিক চিকিৎসকদের জেরা করা হচ্ছে। এটা হেনস্থা করা হচ্ছে।” গত কয়েকদিন ধরে ডোমকল, বেথুয়াডহরির ঘটনা টেনে কড়া হাতে পুলিশকে দমন করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, “কেউ কেউ দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। তাতে বিজেপি সুযোগ পেয়ে যাবে। তাই কড়া ব্যাবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি সামনে রথ, বকরি ঈদ, দুর্গাপুজা মহরম। তাই সোশ্যাল সাইটে বিভ্রান্তি ও প্ররোচনামূলক পোষ্টে নজর রাখতে হবে।”