স্বাধীনতা দিবসের সপ্তাহেই সৌমিতা সাহার কন্ঠে আসছে মন্ত্র গান ‘বন্দে মাতরম’ 

আমাদের ভারত, ১২ আগস্ট: দেশ মেতেছে সাড়ম্বরে স্বাধীনতার ৭৫ বছর এবং ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা যজ্ঞে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে একাধিক অনুষ্ঠানের। স্বাধীনতা দিবস যেমন কিছু মানুষের কাছে নিছক ছুটির দিন তেমনি এ দিনটিকে উপলক্ষ করে প্রকাশ পায় বহু দেশাত্মবোধ সম্পন্ন সঙ্গীত ও চলচ্চিত্র। চারুকলাও নেই পিছিয়ে। ভারত মাতার রূপ যেন প্রকাশ পায় বিভিন্ন আলোকে। স্বাধীনতা দিবসে ভারত মাতার রূপ একটি মিউজিক ভিডিওতে তুলে ধরতে চলেছেন সৌমিতা সাহা। সৌমিতার কন্ঠে প্রকাশ পেতে চলেছে বন্দে মাতরম মন্ত্র গান।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ‘বন্দে মাতরম’-এর অবদান অপরিসীম। অনুমান করা হয়, ১৮৭৬ সাল নাগাদ ‘বন্দে মাতরম’ কবিতাটি রচনার কথা ভেবেছিলেন বিখ্যাত লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমচন্দ্র রচিত ‘বন্দে মাতরম’ কবিতার সম্পূর্ণ ছ’টি স্তবকের ২৬ লাইনের মধ্যে প্রথম দু’টি স্তবকের ১২ লাইনকে জাতীয় স্তোত্র বা রাষ্ট্র গীত-এর স্বীকৃতি দেওয়া হয়। রচনার পর লেখক বঙ্কিমচন্দ্রের ইচ্ছা অনুযায়ী সঙ্গীতজ্ঞ যদুভট্টকে তাঁর কবিতাটিতে সুরারোপ করেন ‘মল্লার’ রাগে। বঙ্কিমের মৃত্যুর পর ১৮৯৬ সালে বিডন স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গাওয়া হয় ‘বন্দে মাতরম’গানটি। গানটি ‘মল্লার’ রাগেই পরিবেশন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৮৪-তে ‘দেশ রাগে’ গানটি বাঁধলেন কবি ও সুরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বঙ্কিমচন্দ্রকে শোনালে সুরটি তাঁর পছন্দও হয়৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে সুর বসিয়েছিলেন প্রথম দুটি স্তবকে। বাকিটুকু শেষ করলেন তাঁর ভাগ্নি সরলা দেবী। ‘বন্দে মাতরম’-কে জাতীয় সঙ্গীত করার কথা ভেবেছিলেন অনেকে, কিন্তু আপত্তি ওঠে অন্য মহল থেকে। জাতীয় মন্ত্র হিসেবে এটি ঠিক আছে; কিন্তু জাতীয় সঙ্গীতের ঐক্যের বাণী এখানে ফুটে উঠছে না এমন দাবি আসে অন্য মহল থেকে। ‘দেবী’-র উল্লেখ অন্য ধর্মের ভাবাবেগকে আঘাত করছে। জওহরলাল নেহরু ছুটলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে।জওহরলাল নেহরুর পত্রের উত্তরে রবীন্দ্রনাথ যখন জানান গানটির শুধু প্রথম স্তবকটি গাইলে মুসলমানদের কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়।

উল্লেখ্য, কংগ্রেসের অধিবেশনেই ‘বন্দে মাতরম’-এ সুর দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুরে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘বন্দে মাতরম’ পরবর্তী কালে ‘মন্ত্র গান’ নামে উপনিত হয়। ১৫ই আগস্ট স্বনাম ধন্যা সঙ্গীত শিল্পী ও চিত্রকর সৌমিতা সাহার কন্ঠে প্রকাশ পেতে চলেছে সেই বন্দরে মাতরম- মন্ত্র গান। সঙ্গীতায়োজনে সুর সপ্তকের শ্রেষ্ঠ সুরে সাজিয়ে তুলেছেন সঙ্গীত পরিচালক অরিন্দম ভদ্ৰ (বুম্বা)। গানটির বিষয়ে সৌমিতা জানিয়েছেন, “আমি এই গানটি আমার বাবা সঙ্গীতজ্ঞ স্বপন সাহার কাছে যখন শিখেছিলাম আমার বয়স তখন ১৪। গানটি মেলো টিউন্সের জন্য রেকর্ড করার আগে গানটি যেমন অনুশীলন করেছি। তেমনই গানটির ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পড়ে সমৃদ্ধ হয়েছি। বুম্বাদার( অরিন্দম ভদ্র) অক্লান্ত পরিশ্রমে এই গানটি পূর্ণতা পেয়েছে।” ভিডিওটি ক্যামেরা বন্দি করেছেন অগ্নিভ চট্টোপাধ্যায়।

উল্লেখ্য, এই গানটির ডিজিটাল প্রকাশ ঘটেছে মেলো টিউন্স রেকর্ড থেকে। মিউজিক ভিডিও প্রকাশ পেতে চলেছে ১৪ আগস্ট। ভিডিওর মূল আকর্ষণ সৌমিতার আঁকা ভারত মাতার পেইন্টিংটি করার কিছু মুহূর্ত। তুলির টানে ক্যানভাস জুড়ে দেশ মাতৃকার প্রকাশ এই ভিডিওটির অন্যতম বিশেষ দিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *