ভিন রাজ্যে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিপাকে বীরভূমের বহু মানুষ

আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ২৭ মার্চ: ভিন রাজ্যে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন বীরভূমের বহু মানুষ। যতদিন যাচ্ছে তাদের আর্থিক অবস্থা সঙ্কটের দিকে এগোচ্ছে। মিলছে না পর্যাপ্ত খাবার। কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন বুঝতে পারছেন না আটকে থাকা মানুষজন। উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা।
কেউ নিজের চিকিৎসার জন্য, আবার কেউ পরিবারের কোনও সদস্যকে নিয়ে গিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর ভেলোর কিংবা কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদ। সকলেরই এখন অসহায় অবস্থায় দিন কাটছে।

ভেলোরে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন রামপুরহাটের আইনজীবী উৎপল চট্টোপাধ্যায় ওরফে চণ্ডি। ১৯ মার্চ তিনি স্ত্রী ও মেয়ে-জামাইকে নিয়ে ভেলোর গিয়েছিলেন। ২৬ মার্চ তার ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সমস্ত যানবাহন এমনকি উড়ান বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। ফলে লজের মধ্যে আটকে রয়েছেন উৎপলবাবুও তার পরিবার। তিনি বলেন, “পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে এখানে দমবন্ধ হয়ে আসছে। বাড়ি ফেরার খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু এমন অবস্থা কিছু করার নেই। শুধু আমরা নয়, পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষ এখানে আটকে রয়েছেন। সরকার ফেরার কিছু একটা ব্যবস্থা করলে উপকৃত হতাম”।

একইভাবে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে পড়েছেন রামপুরহাটের সুমিত মণ্ডল ও তার পরিবার। পুর্তাপুর্তিতে আটকে রয়েছেন রামপুরহাট নিশ্চিন্তপুরের তপন মণ্ডল। সিউড়ির ননি ঘোষ, মল্লারপুর থানার বীরচন্দ্রপুরের শ্রীহরি ঘোষ, তারাপীঠ থানার জয়সিংহপুর গ্রামের তারক মণ্ডল ও তার স্ত্রী রুমকি। হাইদ্রাবাদের গেস্ট্রোলজি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে আছেন সাঁইথিয়া থানার কুনুরি গ্রামের সুশান্ত গড়াই। ব্যাঙ্গালোরে সম্বন্ধীকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন নলহাটি থানার ভদ্রপুরের বাসিন্দা সাবর্ণি গঙ্গোপাধ্যায়। ২৪ মার্চ তার ফেরার কথা ছিল। সেই মতো হামসফর এক্সপ্রেসে তার টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু ট্রেন বাতিল হওয়ায় লজের মধ্যে আটকে পড়েছেন তারা। সাবর্ণিবাবু বলেন, “যত দিন যাচ্ছে আতঙ্ক বাড়ছে। কারণ যে টাকা নিয়ে এসেছিলাম তা শেষের দিকে। লজের ভাড়া গুনতে গুনতে কাহিল হতে হচ্ছে। বাড়িতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের চিন্তা বাড়ছে। এখন কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকার আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার যদি কোনও ব্যবস্থা করেন তাহলে উপকৃত হব”।

হায়দ্রাবাদে চোখের অপারেশন করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন সিউড়ির বাসিন্দা, সাংবাদিক গোপাল চট্টোপাধ্যায়। চোখের অপারেশন এবং পরীক্ষার পর ফেরার নির্দিষ্ট দিনের আগেই সব কিছু বন্ধ। ফলে হায়দ্রাবাদের একটি হোটেলের ঘরে স্ত্রী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে নিয়ে আটকে পড়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “চোখের অপারেশন সফল হয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে ফিরতে পারলে ভালো হত। যত দিন যাচ্ছে উদ্বেগ বাড়ছে। এখন বাড়ি ফেরার জন্য দিন গুনছি। আর কবিতা পড়ে, লিখে দিন কাটাচ্ছি”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *